উত্তরবঙ্গ বিপর্যয়, আর কার্নিভাল নিয়ে কেন রাজনীতি? বিরোধীদের কড়া জবাব মমতার

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৭:৫৫: উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণ হারিয়েছেন ২৭ জন। পাহাড়ি এলাকায় এখনও চলছে উদ্ধারকাজ। মঙ্গলবার মিরিক থেকে উত্তরকন্যায় ফিরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) জানালেন, “দুর্যোগের আভাস মিলেছিল। জেলা প্রশাসন সতর্ক করেছিল বলেই বহু প্রাণ বেঁচেছে।” তিনি আরও বলেন, “৫ তারিখ ভোর পাঁচটায় মিটিং করেছি। ৯ টার মধ্যে পুলিশ, দমকল, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী সকলে পৌঁছে গিয়েছিল।”
দুর্যোগের দিন কলকাতায় দুর্গাপুজোর কার্নিভালে উপস্থিত থাকা নিয়ে বিরোধীদের তীব্র কটাক্ষের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “তাছাড়া দুর্গাপুজোর অনুষ্ঠানটাও আমাদের ঐতিহ্যের স্বীকৃতি। সবকিছু আগে থেকে ঠিক করা হয়েছিল। ফলে রাতারাতি এভাবে ক্যান্সেল করা সম্ভব! তাছাড়়া আমরা যদি ওই দিনই আসতাম, পুলিশ, প্রশাসন কাকে সামলাত? হোয়াট ইজ দ্য প্রায়োরিটি। রাস্তা দিয়ে যদি চল্লিশটা গাড়ি নিয়ে যাই তাহলে পাহাড়ে প্রেশার পড়তো।”
উত্তরবঙ্গের দুর্যোগ নিয়ে কেন্দ্রের রাজনীতি হচ্ছে অভিযোগ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “মহারাষ্ট্র থেকে শুরু করে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ হিমাচল, উত্তরাখণ্ড – সর্বত্র এত দুর্যোগ হচ্ছে। দেখে নিন কারা কী কাজ করে আর আমরা কী কাজ করি? মহাকুম্ভেও তো বিপর্যয় হয়েছিল। আমরা তো তা নিয়ে রাজনীতি করিনি। গতকাল থেকে নাগরাকাটা ব্রিজের কাজ শুরু করে দিয়েছে পূর্ত দপ্তর। আমাদের কেন্দ্র এক টাকাও দেয়নি। গত বাজেটেও আপনারা দেখেছেন একমাত্র বাংলাকে টাকা দেওয়া হয়নি।’’
তিনি আরও বলেন, “কেন কার্নিভাল থেকে নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে? দেশ বিদেশের অনেক অতিথি ছিলেন। সেদিন আমরা এলে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হতো।”
বন্যা ত্রাণে কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, “বাজেটে অন্যান্য রাজ্যকে টাকা দিলেও বাংলাকে টাকা দেয়নি কেন্দ্র।” তিনি বলেন, “দুটো দিন অপেক্ষা করলে তো মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না, জীবনটা তো আগে। তাই সবার আগে আমরা উদ্ধার কাজে নজর দিয়েছি।”
এদিন তিনি উল্লেখ করেন, নানান প্রয়োজনীয় সামগ্রী, যেমন শুকনো খাবার, পোশাক, রান্নার গ্যাস সহ পূর্ণাঙ্গ ত্রাণ কিট – বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পাশাপাশি মিরিক, নাগরাকাটা-সহ দুর্গত অঞ্চলগুলিতে চালু হয়েছে কমিউনিটি কিচেন, যেখানে প্রতিদিন রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। দুর্গত মানুষজন যতদিন না নিজেদের বাসস্থানে ফিরতে সক্ষম হন, ততদিন এই কমিউনিটি কিচেন চালু থাকবে, যাতে তাঁদের খাদ্যসংকট না হয়।
নাম না করে প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বলেন, “নির্বাচিত সরকারের কথা না শুনে দোষারোপ চলছে! ভুটানের জল সব ছেড়ে দিয়েছে। মারা গেল হড়পা বানে, বলল ব্রিজ ভেঙে মৃত্যু।”
মুখ্যমন্ত্রী জানান, “নাগরকাটা লো ল্যান্ড নয়, ফ্ল্যাশ ফ্লাড হয়েছে। পুরো এলাকায় ধ্বংস হয়ে গেছে।” তিনি বলেন, পাশাপাশি বলেন, “যারা উদ্ধার কাজ করেছে তারা প্রশংসার যোগ্য।”
তিনি আশ্বাস দেন, “একটু সময় দিন, দ্রুতই সব ঠিক করা হবে।” মিরিকে নতুন ব্রিজ তৈরির জন্য ৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে, আরও তিন-চারটি ব্রিজ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, “একুশটি পরিবারের সাথে দেখা করেছি, তাদের পরিবারের সদস্যদের চাকরি দেওয়া হবে, ৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে।” নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়াও তিনি বলেন, ‘‘এখানে ১২ ঘণ্টায় ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তার মধ্যে ৫৬টা নদীর জল ছাড়া হয়েছে। সিকিমে ১৪টা হাইড্রেলপাওয়ার। ওগুলোর জন্য জল বইতে পারছে না। গরমে তিস্তার এক রূপ, বর্যায় আর এক রূপ। প্রকৃতিকে অত্যাচার করলে তার ফল ভুগতে হবেই। ফ্লোরিডাতেও হাজার হাজার লোক তলিয়ে গেছে। পাহাড়ে ভূমিকম্প বেশি হয়। এখানে পাহাড়-জঙ্গল দুটোই রয়েছে। বনেরও অনেক ক্ষতি হয়েছে।’’
পরিস্থিতির ওপর নজর রেখে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামিকাল কলকাতা ফিরলেও দু-তিনদিনের মধ্যেই ফের উত্তরবঙ্গে যাবেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রাথমিক পর্যায়ে যা যা করার করে গেলাম, প্রশাসনিক কর্তারা বাকি কাজ করবেনই। কাল এখান থেকে বেরিয়ে গেলেও দু’তিন দিনের মধ্যে আবার ফিরে আসব। তত দিনে ফিল্ড সার্ভে করে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত খতিয়ান জানার সময়ও পাওয়া যাবে।’’ তাঁর কথায় “দাঙ্গা এবং বন্যায় মানুষের সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ থাকে। এটা হওয়াটা স্বাভাবিক। মাথা ঠান্ডা সেই পরিস্থিতি সামলাতে হয়। আমরা সেটাই করছি।”