সাধারণ মানুষ নয়, বিজেপি নেতাদের সুরক্ষা দিতেই ব্যস্ত অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র দপ্তর
প্রতিটি প্রোটেক্টেড পার্সনের নিয়মিত সমীক্ষা হয়।

জেলবন্দি থেকে গ্রাম-শহরের চুনোপুঁটি, এমনকী ভোটের পর থেকে ‘নিষ্ক্রিয়’ হয়ে থাকা নেতা-নেত্রীও এখন ভিআইপি। বিজেপির ছত্রচ্ছায়ায় থাকা মোট ৬১ জনের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য রাজ্যকে সুপারিশ করল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। বিধানসভার নির্বাচনের আগে থেকেই এই তালিকার সিংহভাগ লোক কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পেতেন। এবার সেই তালিকা ‘পুনর্নবীকরণ’ পর্বে যুক্ত হয়েছেন গেরুয়া শিবিরের আরও বেশ কয়েকজন। বিজেপি নেতাদের ওই তালিকা পাঠিয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আন্ডার সেক্রেটারি সন্দীপ কুমার। তালিকার প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে রাজ্য পুলিস, সিআরপিএফ এবং সিআইএসএফের ডিজিকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ভিআইপি সিকিউরিটি ইউনিটের ইন্টারনাল সিকিউরিটি (আইএস)-১ ডিভিশনের তরফে গত ৩১ আগস্ট ওই চিঠিটি (নম্বর-৬-২৩০১৪/৫০/২০২১-ভিএস) পাঠানো হয়েছে নবান্নে।
মন্ত্রক সূত্রে খবর, হামলা হয়েছে বা হামলার আশঙ্কা রয়েছে—এমন ব্যক্তিদের চিহ্নিত করেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। কিন্তু জেলবন্দি, বা নির্বাচনের পর থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকা ব্যক্তিরা কীভাবে এই তালিকায় এলেন? এই প্রশ্ন কিন্তু উঠেছে। ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আই এস-১ ডিভিশনের ভিআইপি সিকিউরিটি ইউনিট যে নিরিখে বিশিষ্টদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে, বিজেপি নেতাদের তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে তার কোনও সাযুজ্য নেই। গোটা বিষয়টি নির্ধারিত হয়েছে ‘আনুগত্যের রাজনীতির’ উপর। তালিকা প্রকাশ্যে আসার পর বিজেপির অন্দরমহলেই আলোড়ন শুরু হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য দলের কাছে বারবার দরবার করেও গুরুত্ব না পাওয়া গেরুয়া শিবিরের বেশ কয়েকজন এই নিয়ে প্রশ্নও তুলছেন। এছাড়াও তালিকায় রয়েছে এমন বেশ কয়েকজনের নাম, যাঁরা তৃণমূলে ফিরতে চেয়ে ইতিমধ্যেই তদ্বির করছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, ৬১ জনের ওই তালিকায় নাম রয়েছে অর্জুন সিং, রাজু বিস্তা সহ আট জন সংসদ সদস্য। এমনকী লোকসভায় দলত্যাগ বিরোধী প্রসঙ্গ উত্থাপন পর্বে তৃণমূলের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা বর্ধমানের এমপি সুনীল মণ্ডলেরও নাম রয়েছে সেখানে। এছাড়া একজন মহিলা বিধায়ক, নির্বাচনের পর থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকা মিঠুন চক্রবর্তী, রুদ্রনীল ঘোষ, পায়েল সরকার এবং যশ দাশগুপ্তের মতো চারজন অভিনেতা-অভিনেত্রী, গত বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত একঝাঁক বিজেপি প্রার্থী এবং বিভিন্ন জেলার মাঝারি মাপের নেতা ও চুনোপুঁটিও রয়েছেন এই তালিকায়। তবে যে নামটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক শুরু হয়েছে, তিনি হলেন কলকাতার রাকেশ সিং। মাদক পাচার সংক্রান্ত একটি মামলায় এখন জেলবন্দি রয়েছেন রাকেশ। তালিকায় নাম রয়েছে হাসনাবাদের ‘দাবাং’ ফিরোজ কামাল গাজি ওরফে বাবু মাস্টারেরও।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, ভিআইপি সিকিউরিটি ইউনিট একজন ব্যক্তিকে মূল গোয়েন্দা এজেন্সির সমীক্ষা রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে নিরাপত্তা প্রদান করে। মূলত হুমকি পাওয়া কিংবা জঙ্গিদের হিটলিস্টে থাকা লোকজনকেই এহেন নিরাপত্তা দেওয়া হয়। এছাড়াও সংগঠিত অপরাধ চক্র বা মাফিয়াদের তরফে মেলা হুমকির ভিত্তিতেও অনেকে নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। প্রতিটি প্রোটেক্টেড পার্সনের নিয়মিত সমীক্ষা হয়। তার ভিত্তিতে নিরাপত্তার আপগ্রেডেশন, ডাউনগ্রেড, প্রত্যাহার এবং পুনর্নবীকরণ করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই তালিকাটা ঠিক কীসের ভিত্তিতে হয়েছে, তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে।