শুধু স্বাদ-বর্ণ এবং গন্ধর জন্য নয়, খাবারে মশলার প্রয়োজন আরও নানা কারণে

১২ রকমের উদ্বায়ী তেল থাকে যে কোনও মশলায় এবং এগুলোর যথেষ্ট ওষুধি গুণও রয়েছে। এবার আমরা প্রতিদিন ব্যবহার করি, এমন কয়েকটি মশলার গুণপনার কথা আপনাদের শোনাই।

July 16, 2024 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi
শুধু স্বাদ-বর্ণ এবং গন্ধর জন্য নয়, খাবারে মশলার প্রয়োজন আরও নানা কারণে

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: মশলা ছাড়া রান্না অনেকটা যেন আম ছাড়া আমসত্তর মত। রোগ প্রতিরোধে এবং রোগ নিরাময়ে মশলার কিন্তু ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। মশলা আসলে নানা গাছের পাতা, ফুল, ফল, কাণ্ড, বীজ, মূল, ছাল ইত্যাদি। যে মশলাগুলো আমরা বেশি ব্যবহার করি, তার মধ্যে রয়েছে হলুদ, ধনে, জিরে( সাদা ও কালো), শুকনো লঙ্কা, মেথি, মৌরি, এলাচ, দারচিনি, তেজপাতা, জায়ফল, জয়িত্রি, সর্ষে, পোস্ত, তিল, কেশর, হিং, কারিপাতা ইত্যাদি। অন্তত ১২ রকমের উদ্বায়ী তেল থাকে যে কোনও মশলায় এবং এগুলোর যথেষ্ট ওষুধি গুণও রয়েছে। এবার আমরা প্রতিদিন ব্যবহার করি, এমন কয়েকটি মশলার গুণপনার কথা আপনাদের শোনাই।

এলাচ: পায়েস, পোলাও, বিরিয়ানি ও নানা ধরনের মিষ্টিতে এলাচের গন্ধ দারুণ খুশবু আনে। মুখের ভেতরের টেস্ট বাডগুলো উত্তেজিত হয়ে লালা নিঃসরণ করে, খিদে বাড়ে, মুখে রুচি আসে, মুখে দুর্গন্ধ দূর হয়। এলাচ মিশিয়ে অন্য স্বাদের চা পান করেন অনেকেই।বাজারে এলাইচি চা পাওয়া যায়। এলাচে টেমোনিন,টারমিন, গ্ল্যাকটেট-সহ নানা ধরনের উদ্বায়ী তেল থাকে। হজমের গন্ডগোলে, কিডনি ঠিক রাখতে, মানসিক অবসাদ এবং ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে এলাচ।

তেজপাতা: রান্নাকে সুগন্ধী করতে তেজপাতার কোনও জবাব নেই। আবার প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, ফলিক অ্যাসিড এবং মিনারেল থাকার জন্য দেহের পক্ষেও উপকারি। সর্দি-কাশি, হজমের গন্ডগোলে, চোট আঘাতে, মাইগ্রেনে, তেজপাতা গরম জলে ফুটিয়ে মধু বা মিছরির জলে ভিজিয়ে খেলে বা তেজপাতার তেল মালিশ করলে অবশ্যই আরাম মেলে।

হলুদ: আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে একে বলে হরিদ্রা। খাদ্যগুণ ছাড়াও নানা মাঙ্গলিক এবং সামাজিক অনুষ্ঠান হলুদ ছাড়া চলে না। খাদ্যের রং এবং সুগন্ধর জন্য, কাপড় রাঙাতে এবং খাদ্য সংরক্ষণে ব্যবহার করা হয় হলুদ। হলুদের রঙের জন্য দায়ী ওবোরিসিন রাসায়নিকটি এবং রঙের জন্য কারকিউমিন, যেটি একটি উন্নত মানের অ্যান্টি অক্সিডেন্টও বটে। এই কারকিউমিন ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমিয়ে ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে সুগার কমাতে সাহায্য করে এবং সেরিব্রাল থ্রম্বোসিস প্রতিরোধে সাহায্য করে। ক্যানসার প্রতিরোধে,ব্যথা জ্বালা ফোলা কমাতে, হজমের গন্ডগোলে, জীবাণু সংক্রমণ রোধে, লিভার সুস্থ রাখতে, হৃদরোগ এবং স্থূলতা প্রতিরোধে, চর্মরোগ কমাতে– হলুদ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। এমনকি অ্যালঝাইমার প্রতিরোধে হলুদ খুবই কার্যকরী। মাছ-মাংস রান্নার আগে হলুদ-নুন-লংকা মাখিয়ে রাখলে, দীর্ঘক্ষণ তা সংরক্ষিত রাখা যায়। হলুদ খুব ভাল একটি ন্যাচারাল প্রিজারভেটিভ।

লবঙ্গ: ভীষণ প্রিয় আমাদের কাছে। মুখে ফেলে চিবোলেই মুখে রুচি ফেরে, দুর্গন্ধ দূর হয়। ইউজেনল নামক একটি রাসায়নিক থাকার ফলে লবঙ্গ অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি অর্থাৎ প্রদাহরোধক হিসাবে কাজ করে। যে জন্য দাঁতের যন্ত্রণায়, বমি ভাব এবং ডায়রিয়ায়, হজমের গন্ডগোলে লবঙ্গ তেল ব্যবহার করা হয়।

আদা: গুণপণার শেষ নেই আদার। জিনজেরল, সোগাঅল, প্যারাডল-সহ প্রায় ৪০০ রাসায়নিক রয়েছে আদাতে। যেজন্য সর্দি-কাশি, জ্বরজারি, হাঁপানি, নাক বন্ধ, ব্যথা বেদনা, পেটের গন্ডগোল এবং বাতের ব্যথায় নানাভাবে আদার নির্যাস ব্যবহার করা হয়। চা বিলাসীদের কাছে আদা-চা দারুণ মুখরোচক একটি পানীয়।

মেথি: আয়ুর্বেদ এবং ইউনানি শুধু নয়, অ্যালোপ্যাথিতেও মেথিকে বিভিন্ন ওষুধের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বহুদিন থেকেই। প্রতি ১০০ গ্রামে ১৬০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১০০ ইউনিট ক্যারোটিন, ২৬ গ্রাম প্রোটিন, প্রচুর ভিটামিন সি, নায়াসিন এবং পটাশিয়াম থাকায় মেথির পুষ্টিমূল্যও কিছু কম নয়। গবেষকরা জানিয়েছেন, রক্তে সুগার এবং কোলেস্টেরল কমাতে, হৃদযন্ত্রের পেশির এবং রক্তের সঞ্চালনা ঠিক রাখতে, বাত কমাতে, হজমের গন্ডগোলে মেথি খুবই উপকারি। স্যাপুনিন, গ্লাইকোসাইড ডি, ট্রাইগোফোইনোসাইড-এ সহ নানা রাসায়নিক উপাদান থাকায় মেথির এত ওষধি গুণ।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen