রুট বদল! মণিপুর নয়, এখন বাংলায় গাঁজা আসছে ওড়িশা থেকে

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, মেদিনীপুর সীমান্ত দিয়ে গাঁজা এনে মজুত করা হচ্ছে নদীয়ায়।

December 14, 2023 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi
রুট বদল! মণিপুর নয়, এখন বাংলায় গাঁজা আসছে ওড়িশা থেকে

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: নদীয়ার কালীগঞ্জের একাধিক জায়গায় ইদানিং খুলতে শুরু করেছে দীর্ঘ দিন ধরে ঝাঁপ বন্ধ থাকা গুমটিগুলি। কোনওটা চায়ের দোকান, কোনওটা আবার মনিহারি। এলাকায় কান পাতলে শোনা যায়, এই দোকানগুলির আড়ালেই নাকি এতকাল মাদকের রমরমা ব্যবসা চলেছে! যে মাদক আসত মণিপুর থেকে। গাঁজা থেকে হেরোইন— বাদ যেত না কিছুই। কিন্তু গত মাস দুয়েক ধরে ওই রাজ্যে গোষ্ঠীহিংসার জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল মাদকের আমদানি। স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল বাজার সংলগ্ন এলাকার এই সব দোকান। স্থানীয় সূত্রে দাবি, সেই কারবার আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। খবরও রটে গিয়েছে, এখন নাকি ওড়িশা থেকে ঢুকছে মাদক!

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, মেদিনীপুর সীমান্ত দিয়ে গাঁজা এনে মজুত করা হচ্ছে নদীয়ায়। সেখানে তৈরি হয়েছে গাঁজার ‘স্লিপিং ডেন’। তারপর ছড়িয়ে যাচ্ছে রাজ্যজুড়ে। সদ্য মঙ্গলবারই ডানকুনি থেকে বাজেয়াপ্ত হয়েছে ১৫০ কেজি গাঁজা। তারপরেই ওড়িশার, গাঁজার ‘বাজার’ দখলের বৃত্তান্ত সামনে এসেছে।

ওড়িশা আর মণিপুরের মধ্যে গাঁজাপাচার সাম্রাজ্যের হাতবদল খুব বেশি হলে বছর ১৫ থেকে ২০-র বিষয়। কিন্তু গাঁজার উৎপাদন ও বিপণনের ইতিহাস বলছে, আরও একটি কারণে ইতিহাসের চাকা ঘুরেছে। ১৯১৭-১৮ সালের কথা। অবিভক্ত বাংলার অধুনা বাংলাদেশে ব্রিটিশ সরকারের তত্ত্বাবধানে চাষ হতো গাঁজার। সেই ‘ফসল’-এর অন্যতম বড় বাজার ছিল ওড়িশা। পরবর্তীকালে বাংলায় গাঁজা চোরাচালানের রাশ চলে যায় একদা সেই বৃহৎ আমদানিকারী ওড়িশার হাতেই। ফলে পাচারের আখ্যানে গাঁজার নিজস্ব মৌতাতের সঙ্গে জুড়ছে ঐতিহাসিক মেজাজও।

বহু বছর গাঁজার চোরাচালান করে মূলস্রোতে ফিরেছেন মালদহের এক মাদক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ওড়িশার গাঁজা ‘খাস্তা’। তাই ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু দামের কারণেই বাজার হাতছাড়া হয়। ততদিনে মণিপুর থেকে কমদামে গাঁজা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। ফলে, চোরাকারবারীরা মণিপুর থেকেই গাঁজা আনছিল। মেজাজের তফাত যৎসামান্য, কিন্তু দাম অনেকটাই কম। সেটাই ছিল মণিপুরের জনপ্রিয়তার কারণ। দীর্ঘ ১৫-২০ বছর মণিপুর, গাঁজাপ্রেমী মহল্লায় রাজত্ব করেছে।

কালীগঞ্জের ছোট নলদহ, বড় নলদহ, সাহেবনগর বরাবরই মাদক কারবারিদের ‘মুক্তাঞ্চল’ বলে পরিচিত জেলায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, মূলত উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে রেল ও সড়ক পথে বিভিন্ন ‘পয়েন্ট’ ধরে মাদক এসে পৌঁছত মালদহ ও মুর্শিদাবাদের ফরাক্কায়। সেখান থেকে তা ছড়িয়ে পড়ত নদীয়া ও মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকায়। আবার মণিপুর থেকে সরাসরি নবদ্বীপ হয়েও উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত, মধ্যমগ্রাম এবং কলকাতায় পৌঁছে যেত মাদক। কিন্তু সম্প্রতি মণিপুর অশান্ত হয়ে ওঠায় সেই কারবারে এখন ভাটা পড়েছে। তার উপর এসটিএফ আর পুলিশের লাগাতার যৌথ অভিযান! গত দু’মাসে গা-ঢাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন বহু কারবারি। পুলিশি তল্লাশিতে উদ্ধার হয়েছে কোটি কোটি টাকার মণিপুরী মাদক। গ্রেপ্তারও হয়েছেন জনা ছয়েক। এই পরিস্থিতিতে ঘুরপথে মাদক ঢুকছে বাংলায়।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen