বর্ধমানে বিজেপির পরিবর্তন যাত্রাপথে কালো পতাকা লাগাল আদি কর্মীরাই
এছাড়া এদিন বর্ধমান শহরে মিউনিসিপ্যাল হাই স্কুলের গেটে বিজেপিকে ভোট না দেওয়ার আবেদন করে পোস্টার পড়েছে। তাই একের পর এক ঘটনায় অস্বস্তি বেড়েছে জেলা বিজেপি নেতৃত্বের।

পূর্ব বর্ধমানে বিজেপির পরিবর্তন যাত্রার পথেই কালো পতাকা (Black Flag) বেঁধে প্রতিবাদ জানালেন দলের বিক্ষুব্ধ কর্মীরা। সম্প্রতি বর্ধমান শহরে দলের জেলা অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় চরম কোন্দলের ছবি প্রকাশ্যে এসেছিল। সেই ঘটনার পর দলীয়ভাবে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হলেও গেরুয়া শিবিরের কোন্দল যে অব্যাহত রয়েছে, তা বৃহস্পতিবারের ঘটনাতেই স্পষ্ট। এদিন পরিবর্তন যাত্রার রথ বিজেপির জেলা কার্যালয় থেকে কপিবাগান হয়ে হাট গোবিন্দপুরে যায়। পথে কালনা রোডের উপর নওপাড়ার মোড়ে কালো পতাকা লাগিয়ে দেন দলের বিক্ষুব্ধ কর্মীরা। এছাড়া এদিন বর্ধমান শহরে মিউনিসিপ্যাল হাই স্কুলের গেটে বিজেপিকে ভোট না দেওয়ার আবেদন করে পোস্টার পড়েছে। তাই একের পর এক ঘটনায় অস্বস্তি বেড়েছে জেলা বিজেপি নেতৃত্বের।
এদিন বিজেপির পরিবর্তন যাত্রায় (Paribartan Yatra) উপস্থিত ছিলেন মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র। বাইরের রাজ্যের মন্ত্রীর সামনে যাতে কোনও বিক্ষোভের মুখে না পড়তে হয়, সেদিকে নজর দিয়েছিল স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। তাই এদিন রথ পৌঁছনোর আগেই তড়িঘড়ি কালো পতাকা খুলে ড্যামেজ কন্ট্রোল করে তারা। বিজেপি নেতৃত্বের তরফে এই ঘটনার জন্য শাসক দলকেই দায়ী করা হয়েছে। দলের বর্ধমান(সদর) জেলা সম্পাদক শ্যামল রায় বলেন, এটা শাসক দলের চক্রান্ত। কালো পতাকা দেখানো ওদেরই কাজ। বিজেপির অন্দরে আদি ও নব্য বিভাজন করে দলকে ভাঙার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হবে না।
যদিও তাঁর এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন দলের বিক্ষুব্ধ কর্মীরাই। আদি বিজেপি নেতা কেশব কোনার বলেন, বিক্ষুব্ধ কর্মীরাই এদিন সকালে কালো পতাকা লাগিয়েছেন। রাজ্য নেতৃত্বের কাছে আমাদের দাবি আমরা তুলে ধরেছি। তারপরেও কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। তাই কালো পতাকা দেখানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ বলেন, দলের কর্মীদের একাংশের তরফে কালো পতাকা দেখানো খুবই স্বাভাবিক। মানুষ তো এতদিন জানতেন রথে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা থাকেন। বিজেপি এখন সেই জায়গায় নিজেদের নেতাদের বসিয়ে নানা জায়গায় ঘোরাচ্ছে। মানুষ তো এটা ভালোভাবে নিচ্ছেন না। তাই ওদের দলের কর্মীরাই কালো পতাকা দেখিয়ে যাত্রা থামানোর ইঙ্গিত দিচ্ছেন।
ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী এদিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ পরিবর্তন যাত্রার রথ ঘোড়দৌড় চটির বিজেপির জেলা কার্যালয় থেকে যাত্রা শুরু করে। বর্ধমান শহর পরিক্রমা করে রথ পৌঁছয় কপিবাগানে। সেখানে একটি ছোট্ট পথসভার আয়োজন করেছিল গেরুয়া শিবির। যদিও সেই মঞ্চে পা রাখেননি প্রধান বক্তা মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি সেখানে না আসায় উপস্থিত দলের কর্মীরা বেশ হতাশ হন। কর্মীদের হতাশা কাটাতে বিজেপি সাংসদ এসএস আলুওয়ালিয়া দু’হাত তুলে নাচ করেন। কর্মীরাও সাংসদের সঙ্গে কোমর দোলান। তারপর রথ চলে যায় হাটগোবিন্দপুর বাজারের মাঠে। সেখানে মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। ফাঁকা মাঠে বক্তব্যে সেভাবে সাড়া ফেলতে পারেননি তিনি। হিন্দিতে বক্তব্য শুরু হতেই সভাস্থল ছাড়তে থাকেন মহিলারা। হাতে গোনা কিছু কর্মী-সমর্থকের সামনে তিনি বলেন, বাংলায় কেউ সুরক্ষিত নয়। রাজ্যের মন্ত্রীর উপরে হামলা হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা উচিত।
অপরদিকে স্কুলে পোস্টারকাণ্ডে বামেদের দিকে আঙুল তুলেছে বিজেপি (BJP)। বর্ধমান দক্ষিণের বিজেপির আহ্বায়ক কল্লোল নন্দন বলেন, পোস্টারের রং দেখেই বোঝা যায়, এটা কাদের কাজ। বামেরাই বরাবর এমন লাল পোস্টারের রাজনীতি করে এসেছে।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক বলেন, আমরা পোস্টার দিলে বিজেপি ও তৃণমূল দু’পক্ষের বিরুদ্ধেই পোস্টার দেব। আমাদের লড়াই তো এই দুই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে।