ফিরিয়ে দিল একের পর এক হাসপাতাল, মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন দেগঙ্গার সফিকুল ইসলাম

কলকাতার একের পর এক সরকারি হাসপাতাল তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছিল।

September 12, 2024 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: লাগাতার কর্মবিরতির জেরে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। একের পর এক প্রাণ চলে যাচ্ছে বিনা চিকিৎসায়। মঙ্গলবার রাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন দেগঙ্গার বাসিন্দা সফিকুল ইসলাম। পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসকদের লাগাতার কর্মবিরতির জেরে সরকারি হাসপাতালগুলিতে যে পরিস্থিতি চলছে, তারই শিকার হলেন সফিকুল।

কলকাতার একের পর এক সরকারি হাসপাতাল তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। বাধ্য হয়ে দুর্ঘটনাগ্রস্ত যুবককে বারাসতের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিল তাঁর পরিবার। কিন্তু শেষরক্ষা হল না।

সফিকুলের বাড়ি দেগঙ্গার সোহাই-শ্বেতপুর পঞ্চায়েতের গাংআটি গ্রামে, পেশায় তিনি দিনমজুর। অসুস্থ স্ত্রীকে দেখতে গত ৩১ আগস্ট হাবড়ার সোনাকেনিয়ায় গিয়েছিলেন সফিকুল। ১ সেপ্টেম্বর ভোরে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাইকে ফিরছিলেন। হাবড়া-বেড়াচাঁপা রোড ধরে ফেরার পথে কলাপোল এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ধারে ডাঁই করে রাখা ইটের স্তূপে ধাক্কা মারেন তিনি। মাথায় ও শিরদাঁড়ায় জোরালো আঘাত লাগে। পরিবারের লোকজন তাঁকে প্রথমে বারাসত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসা শুরুও হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে সেদিন রাতেই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ‘রেফার’ করা হয়। সেখানে তাঁকে ভর্তি করানো যায়নি। পরিবারের সদস্যদের দাবি, অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রলিও পাওয়া যায়নি। অ্যাম্বুলেন্সের স্ট্রেচারেই তাঁকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁদের সাফ বলে দেওয়া হয়, কর্মবিরতি চলছে। চিকিৎসক নেই। রোগী ভর্তি হবে না। তখন সফিকুলকে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানেও বহুক্ষণ অপেক্ষার পর বেড নেই বলে জানানো হয়। সফিকুলের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হতে শুরু করে। তাঁকে এনআরএসে নিয়ে যাওয়া হলেও ভর্তি করানো যায়নি। কারণ কর্মবিরতি! ২ সেপ্টেম্বর ভোরে সফিকুলকে বারাসতের ময়না এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। জানা গিয়েছে, ৪ সেপ্টেম্বর সফিকুলের দেহে অস্ত্রোপচার হয়। তারপর ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল তাঁকে। মঙ্গলবার রাতে মৃত্যু হয় তাঁর।

মৃতের জামাইবাবু জাহাঙ্গীর গাজি বলেন, তাঁরা কলকাতার একের পর এক হাসপাতালে ঘুরেছেন। কেউই ভর্তি নিতে রাজি হয়নি। রোগীর শারীরিক পরিস্থিতির কথা জানিয়ে অনেক কাকুতিমিনতি করেন। তিনি বলেন, “আন্দোলনে মরছে তো গরিব মানুষ। এদের জাস্টিস কারা দেবে?” দেশের সর্বোচ্চ আদালত ডাক্তারদের কাজে ফেরার সময় বেঁধে দিয়েছিল। সময়সীমা পেরলেও অনড় আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। অন্যদিকে, বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর তালিকা ক্রমশ লম্বা হচ্ছে। আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। জনমানসে বাড়ছে ক্ষোভ। কোন্নগর, রিষড়া বা দেগঙ্গা— প্রিয়জন হারানো পরিবারকে ‘জাস্টিস’ দেবে কে?

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen