প্রতি চারজনে একজন ভারতীয় গরিব? মোদীর প্রচারের তাল কাটল World Bank-র রিপোর্ট

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১০:৩০: দেশের অর্থনীতি নিয়ে লম্বাচওড়া দাবি করেন মোদী। তাঁর আমলে ভারতীয় অর্থনীতির ভোল বদলে গেছে বলেও ঢাক পেটান। কিন্তু সম্পূর্ণ অন্য কথা বলে তথ্য-পরিসংখ্যান। জিডিপির নিরিখে ভারত চার নম্বরে থাকলেও, জিডিপি পার ক্যাপিটার হিসেবে কিন্তু ১৪০ নম্বরে। জিডিপি হল কোনও রাষ্ট্রের জাতীয় গড় উৎপাদন। জিডিপি হল রাষ্ট্রবাসীর মাথাপিছু হিসেব। সাফ কথায়, মোদী আমলে আম জনতার ঝুলি ফাঁকাই থেকে যাচ্ছে! বিশ্বব্যাঙ্কের দাবি, ২০২৫ সালেও ভারতে প্রতি চারজন নাগরিকের মধ্যে একজন গরিব। ভারতের ৭ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের শিকার।
রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, শহরে বাড়িভাড়ার বোঝা ও চাকরির অনিশ্চয়তার জন্য বহু মানুষ দারিদ্র্যসীমার কিনারায় টিকে রয়েছেন। গ্রামীণ ভারতে পরিবার ছোট হয়ে যাওয়ায় মানুষের হাতে জমি কমেছে। গ্রামেও উপার্জন নিম্নগামী। অসুস্থতা বা চাকরি হারানোর মতো ঘটনা ঘটলেই সঙ্কট বাড়ছে। দেশে ৩৫ কোটির বেশি মানুষকে আজও পুষ্টিকর খাবার, জামাকাপড় ও আশ্রয়ের জন্য লড়াই করতে হয়। অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের মতো মৌলিক অধিকার থেকে আজও বঞ্চিত এক-চতুর্থাংশ ভারতীয়। যাঁদের কাছে খাবার নেই, স্বাস্থ্য বা শিক্ষার অধিকারও যে তাঁদের কাছে অলীক স্বপ্ন, তা বলাবাহুল্য!
এনডিএ সরকারের ১১ বছরের পূর্তিতে সম্প্রতি মোদী দাবি করলেন, গরিবদের জীবনের সার্বিক উন্নতি ঘটানোই ছিল তাঁদের সরকারের লক্ষ্য। গরিবদের কল্যাণের জন্যই নাকি একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে কেন্দ্র। সে’সব প্রকল্পের সুফল আদৌ সাধারণ মানুষ পাচ্ছেন? ক্ষমতায় বসে ১১ বছর কাটিয়ে ফেললেও দারিদ্র্যসীমার মাপকাঠি আপডেট করতে কোনও উদ্যোগ নেয়নি বিজেপি সরকার। প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, দৈনিক উপার্জন ভারতীয় মুদ্রায় ২৫০ টাকা থেকে ৩৬০ টাকা) মধ্যে থাকলে তাঁকে গরিব হিসেবে ধরা হয়। দৈনিক আয় ৩৬০ টাকার বেশি হলে নিম্নমধ্যবিত্ত। বিশ্বব্যাঙ্ক বলছে, ভারত এখন উন্নয়নের যে স্তরে রয়েছে, তাতে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা আর দৈনিক আড়াইশো টাকা ধরা ঠিক নয়। প্রতিদিন ৩৬০ টাকা উপার্জনই দারিদ্র্যসীমার নতুন মানদণ্ড হওয়া উচিত। শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও বাংলাদেশের মতো পড়শী দেশেও কিন্তু ৪.২০ ডলার, ভারতীয় টাকায় প্রায় ৩৬০ টাকাকে মানদণ্ড ধরা হয়। মোদী সরকার তা মানতে রাজি নয়! আড়াইশো টাকাকে মানদণ্ড ধরা সত্ত্বেও ৩৫ কোটির বেশি মানুষ ন্যূনতম সামাজিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যদি দৈনিক ৩৬০ টাকাকে মানদণ্ড ধরা হলে দরিদ্র মানুষের সংখ্যাটা ৩৫ কোটি ছাপিয়ে যাবে। বিশ্বব্যাঙ্কের মতে, মানুষ যাতে দৈনিক অন্তত ৩৬০ টাকা আয় করতে পারে, তার একটা কেন্দ্র সরকারকে অনেক কাজ করতে হবে।
এই রিপোর্ট সামনে আসতেই সরব হয়েছে বিরোধীরা। অভিযোগ, মোদী সরকার মানুষকে দুর্দশার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। বিরোধীদের অভিযোগ, দারিদ্র্যের ছবি আড়াল করতে মোদী সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই কারণেই মাল্টিডাইমেনশনাল পভার্টি ইনডেক্সের মতো মানদণ্ডের উপর ভরসা করছে তারা।
এমপিআই অনুসারে, ২০১৩ সালে ভারতে যেখানে ২৯ শতাংশ দারিদ্র্য ছিল, তা নাকি ২০২২ সালে ১১.৩ শতাংশে নেমে এসেছে। এমন ধরনের সূচকে বিস্তারিত তথ্য ধরা হয় না। শিক্ষা, নিকাশি, বিদ্যুৎ বা আবাসনের মতো বিষয়গুলি দেখা হয়। এত হিসেব-নিকেশ, অঙ্ক কষেও দেশে ধনী ও গরিবের ফারাক কমানো যাচ্ছে না। ভারতের মোট সম্পদের ৪০ শতাংশ এখন দেশের ১ শতাংশ মানুষের হাতে। ৫০ শতাংশ মানুষের হাতে রয়েছে মাত্র ৬.৪ শতাংশ সম্পদ। এর অর্থ মোদী ভারতে গরিব মানুষের দারিদ্র্য দিন দিন বাড়ছে।