সংসদের কড়চা, নবম দিন: তৃণমূল সাংসদদের প্রশ্নে উঠে এল কেন্দ্রের বঞ্চনা ও বাংলার সাফল্যের খতিয়ান

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৯:০০: আজ বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর লোকসভায় তৃণমূল সাংসদদের করা একগুচ্ছ প্রশ্নের উত্তরে উঠে এল একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য। একদিকে বিদ্যুৎ, জল ও নারী সশক্তিকরণে পশ্চিমবঙ্গের অভূতপূর্ব সাফল্যের চিত্র ফুটে উঠেছে। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকে বিপুল শূন্যপদ এবং বাংলার প্রতি বঞ্চনার অভিযোগও স্পষ্ট হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জল প্রকল্পে এগিয়ে বাংলা, গুজরাটের চেয়েও ভালো ফল
ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) প্রশ্নের উত্তরে জানা গেছে, ‘রিভ্যাম্পড ডিস্ট্রিবিউশন সেক্টর স্কিম’ (RDSS)-এর আওতায় বিদ্যুৎ লস কমানোর ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছে। যেখানে গুজরাটের কাজের অগ্রগতি ৪৯ শতাংশ এবং উত্তরপ্রদেশের ৪৩ শতাংশ, সেখানে পশ্চিমবঙ্গ ৫৩ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করে এগিয়ে রয়েছে।
অন্যদিকে, সৌগত রায়-র (Prof. Sougata Ray) প্রশ্নের উত্তরে উঠে এসেছে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির (DISCOM) আর্থিক চিত্র। গত পাঁচ বছরে জাতীয় স্তরে ডিসকমগুলির লোকসান ৩৬ শতাংশ বাড়লেও, পশ্চিমবঙ্গ সেই বিরল রাজ্যগুলির মধ্যে অন্যতম যাদের কোনও পুঞ্জীভূত লোকসান নেই। উল্টে গত পাঁচ বছরে রাজ্যের মোট ৫৭১ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত হয়েছে।
যাদবপুরের সাংসদ সায়নী ঘোষের (Sayani Ghosh) প্রশ্নের জবাবে জানা গেছে, ‘জল জীবন মিশন’-এর আওতায় কেন্দ্রীয় তহবিলের ৯৭ শতাংশই ব্যবহার করে ফেলেছে পশ্চিমবঙ্গ। শুধু তাই নয়, রাজ্য সরকার নিজের তহবিল থেকে ১৫,১০০ কোটি টাকারও বেশি খরচ করেছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রকে শূন্যপদের পাহাড়
এদিন একাধিক সাংসদের প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে কর্মী নিয়োগের বেহাল দশা প্রকাশ্যে আসে।
জুন মালিয়া (June Maliah) জানান, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রকে প্রায় ২৯ শতাংশ পদ শূন্য। মোট কর্মীর ৪৯ শতাংশই চুক্তভিত্তিক।
রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় (Rachna Banerjee) তথ্য দেন যে, সমস্ত এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার (ATC) পদের মধ্যে প্রায় ২৩% শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চলে মোট শূন্যপদের ৩১% রয়েছে। পূর্বাঞ্চলে শূন্যপদের হার ১৬%।
ডাঃ শর্মিলা সরকার (Dr. Sharmila Sarkar) ও কালিপদ সোরেন খেরওয়াল (Kalipada Saren Kherwal) যথাক্রমে বিদ্যুৎ মন্ত্রক (১৬% শূন্যপদ) এবং আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের (২৪% শূন্যপদ) কর্মী সংকটের কথা তুলে ধরেন।
অর্থনীতি ও সুরক্ষায় উদ্বেগ
সাংসদ মিতালী বাগ (Mitali Bag) পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তোলায় জানা যায়, ২০১৩-১৪ সালের পর থেকে নয়াদিল্লিতে পেট্রোলের খুচরো বিক্রয় মূল্য প্রায় ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে, খলিলুর রহমান (Khalilur Rahaman) সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি জানান, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ৩১ শতাংশ বাড়লেও, পশ্চিমবঙ্গে ২০২৩-২৪ সময়ে তা ০.৭ শতাংশ কমেছে।
ক্ষুদ্র শিল্প ও নারী সশক্তিকরণে বাংলাই সেরা
বারাকপুরের সাংসদ পার্থ ভৌমিকের (Partha Bhowmick) প্রশ্নের উত্তরে উঠে আসা তথ্যে দেখা যাচ্ছে, অসংগঠিত ক্ষেত্রে মহিলা কর্মীর সংখ্যায় পশ্চিমবঙ্গ শীর্ষে (১২.৭%)। এছাড়াও, দেশের মোট মহিলা পরিচালিত এমএসএমই (MSME)-র প্রায় ১০ শতাংশই বাংলায় অবস্থিত। ২০২০ সাল থেকে UDYAM ও UAP-এর আওতায় নথিভুক্ত মোট এমএসএমই-র ৫.৩% পশ্চিমবঙ্গে।
কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ
মুর্শিদাবাদের সাংসদ আবু তাহের খান (Abu Taher Khan) ‘অম্রুত’ (AMRUT) প্রকল্পের বন্টন নিয়ে বৈষম্যের অভিযোগ তোলেন। তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ‘অম্রুত ২.০’ প্রকল্পের অধীনে গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র মিলিয়ে মোট অনুমোদিত সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট বা এসটিপি (STP) ক্ষমতার ৪৬ শতাংশ পেয়েছে। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের জন্য বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ১.৫ শতাংশ।
এদিনের প্রশ্নোত্তরে সাংসদ মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra), ইউসুফ পাঠান (Yusuf Pathan), দীপক অধিকারী (দেব) (Deepak Adhikari- Dev) এবং ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার (Dr. Kakoli Ghosh Dastidar) যথাক্রমে বিমানবন্দর পরিষেবা, আবাসন প্রকল্প, ফুড প্রসেসিং এবং বিমান সংস্থাগুলোর লোকসান নিয়ে কেন্দ্রের জবাবদিহি চান।