সংসদের কড়চা, অস্টম দিন: বঞ্চনা, শূন্যপদ ও রেল পরিষেবা নিয়ে কেন্দ্রকে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করলেন তৃণমূল সাংসদরা

December 10, 2025 | 4 min read
Published by: Saikat

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২০:১৫: আজ সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে লোকসভায় মোদী সরকারের (Modi government) বিরুদ্ধে একাধিক ইস্যুতে সরব হলেন তৃণমূল সাংসদরা। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে মহুয়া মৈত্র, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সহ দলের একাধিক সাংসদ বিভিন্ন মন্ত্রকের কাছে প্রশ্ন তুলে ধরেন। সাংসদদের প্রশ্নে উঠে এসেছে রাজ্যে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বঞ্চনা, সরকারি দপ্তরে বিপুল শূন্যপদ এবং রেল পরিষেবার বেহাল দশার চিত্র।

নীতি ও বিবিধ বিষয়

সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) মাইগ্রেশন বা অভিবাসন প্রক্রিয়ার খরচ নিয়ে প্রশ্ন করলে সরকার তার সদুত্তর এড়িয়ে গেছে। সাংসদ মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra) ই-কমার্স সাইটগুলোর ‘ডার্ক প্যাটার্ন’ বা প্রতারণামূলক কৌশলের বিষয়টি উত্থাপন করেন। দেখা গেছে, মাত্র ২৬টি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম স্বেচ্ছায় তাদের স্ব-ঘোষণাপত্র জমা দিয়েছে, যেখানে তারা নিশ্চিত করেছে যে তারা ২০২৩ সালের ‘ডার্ক প্যাটার্ন প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ নির্দেশিকা’-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখছে।

সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় মহিলাদের কম অংশগ্রহণ (৩০%) এবং ইঞ্জিনিয়ারদের আধিপত্য (৫৭%) নিয়ে তথ্য পেশ করেন সাংসদ কালিপদ সোরেন খেরওয়াল (Kalipada Saren Kherwal)।

* ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের মধ্যে মাত্র ৩০% নারী।
* ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে নির্বাচিতদের মধ্যে ৫৭% ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার।
* ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে নির্বাচিতদের মধ্যে মাত্র ২৪% উচ্চতর ডিগ্রিধারী।

এছাড়াও ডেটা প্রোটেকশন বোর্ডের বাজেট এবং জোহো (Zoho)-র সঙ্গে চুক্তি নিয়ে যথাক্রমে প্রশ্ন তোলেন সাংসদ মিতালি বাগ (Mitali Bag) এবং ইউসুফ পাঠান (Yusuf Pathan)। ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট (ISI) সংক্রান্ত বিল নিয়ে প্রশ্ন করেন প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় (Prof. Sougata Ray)।

বাংলার প্রতি বঞ্চনা ও অবহেলা

সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee) এদিন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং বায়োটেকনোলজি দপ্তরে পশ্চিমবঙ্গের প্রতি অবহেলার চিত্র তুলে ধরেন। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বায়োটেকনোলজি দপ্তরের মোট প্রকল্পের মাত্র ৪ শতাংশ পশ্চিমবঙ্গে বাস্তবায়িত হচ্ছে। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তরের (DST) বাস্তবায়িত প্রকল্পের সংখ্যা রাজ্যে বর্তমানে শূন্য।

অন্যদিকে, সাংসদ পার্থ ভৌমিকের (Partha Bhowmick) প্রশ্নের উত্তরে জানা গেছে, বারাকপুর (Barrackpore) থেকে কল্যাণী (Kalyani )পর্যন্ত নতুন মেট্রো করিডর তৈরির প্রকল্পটি কম ট্রাফিক প্রজেকশনের অজুহাতে আপাতত বিশ বাঁও জলে। পাশাপাশি, হাওড়ায় দশটি সাব-পোস্ট অফিসকে নিকটবর্তী ডাকঘরের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার বিষয়টি সামনে এনেছেন সাংসদ সাজদা আহমেদ (Sajda Ahmed)।

সরকারি দপ্তরে বিপুল শূন্যপদ

কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকে শূন্যপদ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন একাধিক সাংসদ। সাংসদ শর্মিলা সরকারের (Dr. Sharmila Sarkar) প্রশ্নের উত্তরে জানা গেছে, পরিকল্পনা মন্ত্রকে (Ministry of Planning) বর্তমানে ৩২ শতাংশ পদ খালি। সাংসদ জগদীশ চন্দ্র বর্মা বসুনিয়া (Jagadish Chandra Barma Basunia) কয়লা মন্ত্রকে (Ministry of Coal) ২৩ শতাংশ শূন্যপদের কথা উল্লেখ করেছেন।

সাংসদ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় (Rachna Banerjee) এবং ইউসুফ পাঠান (Yusuf Pathan) মহাকাশ দপ্তরের (Department of Space) শূন্যপদ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সেখানে প্রশাসনিক পদে প্রায় ৪৪ শতাংশ এবং সায়েন্টিফিক বা টেকনিক্যাল পদে ১৪ শতাংশ শূন্যপদ রয়েছে। সামগ্রিকভাবে এই দপ্তরে ২২ শতাংশ পদ খালি পড়ে আছে।

রেলে নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সাংসদ বাপি হালদার (Bapi Halder)। তিনি জানান, ২০২৪ ও ২০২৫ সালে রেলে ১,২০,৫৭৯টি শূন্যপদ রয়েছে। অথচ নিয়োগ প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে। ২০২৪ সালে ঘোষিত মোট ৯২,১১৬টি শূন্যপদের মধ্যে প্রথম ধাপের কম্পিউটার ভিত্তিক পরীক্ষা (CBT) সম্পন্ন হয়েছে প্রায় ৬৫% ক্ষেত্রে, দ্বিতীয় ধাপের CBT সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ৩৮% ক্ষেত্রে, আর চূড়ান্ত প্যানেল তৈরি হয়েছে মোট পদগুলির মাত্র ২৫% ক্ষেত্রে।

 

রেল ও টেলিকম পরিষেবায় অব্যবস্থাপনা

রেলের অনলাইন টিকিট বুকিং নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগের কোনো কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার বা রেকর্ড নেই বলে সাংসদ সায়নী ঘোষের (Saayoni Ghosh) প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছে সরকার। তিনি টেলিকম পণ্যের পিএলআই (PLI) স্কিম নিয়েও প্রশ্ন তোলেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে টেলিকম ও নেটওয়ার্কিং পণ্যের জন্য উৎপাদন-সংযুক্ত প্রণোদনা (PLI) প্রকল্পে অনুমোদিত কোম্পানিগুলির মধ্যে প্রায় ৪৫% সংস্থা ২০২৪ অর্থবছরে তাদের বার্ষিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার (Dr. Kakoli Ghosh Dastidar) বিএসএনএল-এর ৪জি পরিষেবা এবং ফান্ডের অপব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি জানান, প্রায় ৩০০০টি ৪জি টাওয়ার বসানো হলেও তা এখনও চালু হয়নি। এছাড়া, সরকারের প্রদত্ত অর্থের মধ্যে ৮০% এরও বেশি ব্যয় হয়েছে স্পেকট্রাম, পুরনো ঋণ, স্বেচ্ছা অবসর প্রকল্প (VRS), সমন্বিত স্থূল রাজস্ব (AGR) বকেয়া এবং আর্থিক পুনর্গঠনের কাজে। রেলের বায়ো-টয়লেট সংক্রান্ত খরচের হিসাব সরকার এড়িয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন সাংসদ অরূপ চক্রবর্তী (Arup Chakraborty)।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen