বাঙালি খানার আসল স্বাদ পেতে পাইস হোটেলের খোঁজে

পাইস হোটেল নামকরনের পেছনেও রয়েছে গল্প। আগে এই হোটেলগুলিতে কয়েক পয়সার বিনিময়ে এক বেলার পেট ভর্তি খাবার পাওয়া যেত।

January 26, 2020 | 3 min read
Published by: Drishti Bhongi

কলকাতায় বড় বড় রেস্তোরাঁয় খেয়েই যদি আপনি মনে করেন বাঙালি খাবারের পূর্ণ স্বাদ আস্বাদন করে ফেলেছেন, তাহলে আপনি হয়তো কিছুটা ভুল করছেন। যতক্ষন না আপনি কলকাতার বিভিন্ন পাইস হোটেল তথা ভাতের হোটেলের খাবার চেখে দেখছেন ততক্ষণ আপনার ‘বেঙ্গলি ফুড সাফারি’ অসম্পূর্ণ।

এই হোটেলগুলিতে পশ রেস্তোরাঁগুলির মতো কোন মেনু কার্ড থাকে না। হোটেলের ওয়েটার বা মালিকের কাছ থেকে শুনে অর্ডার দিতে হবে। কেউ আপনার টেবিলে এসে বসে গেলে অবাক হবেন না। এটা এখানে খুব স্বাভাবিক ঘটনা। 

পাইস হোটেল নামকরনের পেছনেও রয়েছে গল্প। আগে এই হোটেলগুলিতে কয়েক পয়সার বিনিময়ে এক বেলার পেট ভর্তি খাবার পাওয়া যেত। এই হোটেল গুলিকে হিন্দু হোটেলও বলা হত। ১৯৩০-৪০ সালে বিভিন্ন হিন্দু পরিবার বাড়ি থেকে দূরে মেসে থাকা চাকরিজীবী বাবু এবং ছাত্রদের জন্যে নিজেদের বাড়িতেই এই হোটেলের ব্যাবসা শুরু করে। 

এই হোটেলগুলির খাবারের স্বাদ আপনাকে মায়ের হাতের রান্নার কথা মনে করিয়ে দেবে। আগে এক আনায় এই খাবার পাওয়া যেত। এখন দাম খানিকটা বাড়লেও অতিরিক্ত ভাত, ডাল, লেবু এখনো বিনামূল্যে পাওয়া যায়।

এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কলকাতার এরকমই কিছু পাইস হোটেলের ঠিকানা:

স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেল| ছবি সৌজন্যে: The Wall

স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেল:

৬০ বছরের পুরনো এই হোটেলটি উত্তর কলকাতায় অবস্থিত। কলেজ স্ট্রীট লাগোয়া মহাত্মা গান্ধী রোড যাওয়ার রাস্তা বা জেরক্স গলি দিয়ে সোজা হাঁটলেই পেয়ে যাবেন স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেল। 

ছাত্র, ব্যাবসায়ী, এলাকাবাসীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় এই পাইস হোটেল। তাড়াতাড়ি পৌঁছতে পারলে এদের মাছের মাথা দেওয়া ছ্যাঁচড়া এবং তোপসে ফ্রাই অবশ্যই অর্ডার করুন। আর খাসির মাংস অর্ডার করতে ভুলবেন না। তার সাথে অর্ডার করবেন বাস্মতি চালের ভাত। কলা পাতার জন্যে এরা বাড়তি পয়সা নিলেও খাবারের তৃপ্তি আপনাকে সে দুঃখ ভুলিয়ে দেবে। 

সিদ্ধেশ্বরী আশ্রম| ছবি সৌজন্যে: Yummraj

সিদ্ধেশ্বরী আশ্রম:

রানী রাসমনির বাড়ির ঠিক পাশের রাস্তা দিয়ে ২ মিনিট হাটলেই আপনার বাঁ দিকে পেয়ে যাবেন এই পাইস হোটেলটি। চাকচিক্যহীন হলেও সিঁড়ি দিয়ে সোজা উঠে গেলেই পেয়ে যাবেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পাইস হোটেলের ক্ষেত্রে খুবই ব্যাতিক্রমি এই অংশটি। এখানে অবশ্যই অর্ডার দিন কবিরাজি ঝোল এবং চাটনি। যদিও কবিরাজি ঝোল এখানে দুপুর ১২ টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। রুই মাছের হাল্কা কারীই এই কবিরাজি ঝোল। তাছাড়াও জনপ্রিয়তার তালিকায় রয়েছে মাছের ভাপা ও মাছের মাথার কালিয়া।

জগন্নাথ ভোজনালয়| ছবি সৌজন্যে: vurivoj

জগন্নাথ ভোজনালয়:

এখানে তথাকথিত কোন সাইনবোর্ড নেই। সামনের ভীড় দেখে এই হোটেলকে চেনা যায়। প্রথমেই ভীড়ের সাথে যুদ্ধ করে আপনাকে আপনার বসার চেয়ারটিকে রীতিমত জয় করতে হবে। এলাকাবাসী এবং আগে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার কর্মীরাই এখানকার প্রধান খরিদ্দার ছিল। এদের মূল আকর্ষণ সুলভ মূল্যে তাজা মাছের ঝোল। খাসির মাংস এবং ভেটকির সরষে বাটা অনবদ্য। এসএন ব্যানারজী রোড এবং আহমেদ কিড়াই রোডের ক্রসিং এ অবস্থিত এই পাইস হোটেলটি।

আদর্শ হিন্দু হোটেল| ছবি সৌজন্যে: Indrajit Lahiri

আদর্শ হিন্দু হোটেল:

উত্তর এবং মধ্য কলকাতার কথা হল এবার আসা যাক দক্ষিন কলকাতার কথায়। গড়িয়াহাট কমপ্লেক্সের নতুন বিল্ডিঙের দোতালায় যেকাউকে জিজ্ঞেস করলেই পেয়ে যাবেন এই হোটেলের খোঁজ। এখানে আপনি পেয়ে যাবেন অ্যাকুয়াগার্ডের জল ও। এদের বিশেষ খাবারগুলি হল কইমাছের তেলঝাল, কুচো মাছের চচ্চড়ি, ট্যাংরা মাছের ঝোল। কলাপাতায় খাবার পরিবেশন করা হয় এখানে। এখানকার খাসির মাংসও অনবদ্য।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen