উত্তরবঙ্গের অনাঘ্রাত পর্যটনক্ষেত্র

কথায় আছে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। উৎসবের মেজাজ সাড়া বছর। আর এই উৎসবের মুহূর্তে মনটা হু হু করে বেড়াতে যাওয়ার জন্য।

January 11, 2020 | 3 min read
Published by: Drishti Bhongi

কথায় আছে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। উৎসবের মেজাজ সাড়া বছর। আর এই উৎসবের মুহূর্তে মনটা হু হু করে বেড়াতে যাওয়ার জন্য। বাঙালির ঘুরতে যাওয়ার প্রিয় জায়গাগুলির মধ্যে একটি হল দার্জিলিং। তাই জেনে নেওয়া যাক উত্তরবঙ্গের কিছু আনকোরা গন্তব্যের খোঁজ।

তুরুক। ছবি সৌজন্যেঃ wikipedia

তুরুক

উত্তরবঙ্গের আরও এক অচিনপুর। কার্শিয়াং সাবডিভিশনের অন্তর্গত মিডিল সিটং-এর অন্তর্গত অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভরপুর প্রায় ৪৮০০ ফুট উচ্চতার এক ছবি আঁকা পাহাড়ি গ্রাম তুরুক। পাহাড়ের ধাপে ধাপে অর্গানিক চাষের বাহার – বাঁধাকপি, ফুলকপি, রাই শাক, মুলো, আলু আর মরসুমি কমলালেবুর বাহারে মন ভরিয়ে দেবে। নাম না জানা রঙিন পাহাড়ি ফুল থোকায় থোকায় ফুটে আছে। সবুজের মাঝে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথের বাঁকের অপার নির্জনতা ভেঙে দেয় পাখিদের কিচিরমিচির।  লেপচাদের বাড়ির আদলে গড়ে উঠেছে সুন্দর এক হোমস্টে। ইচ্ছে হলেই ঘুরে আসা যাবে নীচের সিটং থেকে। এখানকার একেবারে আনকোরা ডেস্টিনেশন লেপচা ফলস, চার্চ আর রিয়াং নদী।

বাগোরা। ছবি সৌজন্যেঃ tripsaround

বাগোরা

ইচ্ছে হলেই তুরুক থেকে ছোট্ট ট্রেকে অথবা গাড়ি নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন বাগোরা। তবে ট্রেক রুটে নিবিড় অরণ্য আর তার বৃক্ষবৈচিত্র মুগ্ধ করবে। এপথে বাড়তি পাওনা হিসেবে কালেজ, জাঙ্গল ফাউল ছাড়াও হরিণ, হিমালয়ান স্লথ বিয়ারেরও দেখা মিলতে পারে। অবশ্যই গাইড সঙ্গে নেবেন।  পাইন, ফার, ওকের ছায়ামাখা ৭,১০০ ফুট উচ্চতায় বাগোরার আকাশ পরিষ্কার থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মেলে। তুরুক থেকে বাগোরার দূরত্ব ১০ কিমি।

চিমনি। ছবি সৌজন্যেঃ northbengaltour

চিমনি

বাগোরার থেকে চিমনির দূরত্ব ৩ কিমি। ৭,২০০ ফুট উচ্চতায় আরও এক ফুলের জলসাঘর। প্রতিটি বাড়ির উঠোনে শোভা পায় পপি, এজিলিয়া আর চন্দ্রমল্লিকা। একসময় প্রচুর বরফ পড়ত, তাই ব্রিটিশরা তাঁদের সৈনিকদের জন্য জল গরম করতেএই বিশাল চিমনি তৈরি করেছিলেন। আর তার থেকেই গ্রামের নাম হয় চিমনি। কাছেই রয়েছে সুন্দর ভিউপয়েন্ট। এখান থেকে দূরের কার্শিয়াং আর কাঞ্চনজঙ্ঘাকে অসাধারণ লাগে।

কীভাবে যাবেন:

শিলিগুড়ি থেকে মংপু হয়ে সিটং ছাড়িয়ে তুরুকের দূরত্ব ৬৮ কিমি। গাড়িতে যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন:

তুরুকে থাকার জন্য রয়েছে রাশিকা হোম স্টে। ফোন: ৯৮৩০০১১৭১৫। থাকার জন্য দু’টি লেপচা কটেজ আর দু’টি লেপচা মাড হাউস।

রিয়াং হোমস্টে – ফোন নং: ০৭৯৮০৪৫৩২১৮। ৬টি রুম – ভাড়া ১২৫০ টাকা জন প্রতি (লাঞ্চ, ডিনার, ব্রেকফাস্ট সমেত)

সেলফু। ছবি সৌজন্যেঃ Samim Asgor Ali

সেলফু

এনজেপি থেকে প্রায় ৪৮ কিমি দূরে দার্জিলিং জেলার কার্শিয়ং সাবডিভিশনের এক নতুন ডেস্টিনেশন – সেলফু। পাহাড়ের ঢালে বাক্সবাড়ির আর প্রতিটি বাড়ির কার্নিশ, বারান্দায় অর্কিডের বাহার। ছোট্ট চাষের জমিতে রাসায়নিক সারমুক্ত ফসলের বাহার। এলাচ, কমলালেবুর আধিক্য চোখে পড়বে। আকাশ পরিষ্কার থাকলেই কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিলবে।

আহালদাড়া। ছবি সৌজন্যেঃ travelwithabong

আহালদাড়া

 সেলফু থেকে কাকভোরে শীতবস্ত্রে মুড়ে চলে আসতে পারেন আহালদাড়া। পাইনের বন পেরিয়ে খাদের ধারের ভিউপয়েন্ট থেকে ৩৬০ ডিগ্রি প্যানোরামিক ফ্রেমে ছবি আঁকা কাঞ্চনজঙ্ঘার সাজানো গোছানো সংসারকে দেখে নিতে পারেন। আহালদাড়ার ভিউপয়েন্ট থেকে সূর্যোদয়ের দৃশ্য বড়ই মনোরম। আকাশ পরিষ্কার থাকলে এখান থেকেই কালিম্পং, আলগাড়া, বাগোরা,তিনচুলে আর সিকিমের গ্যাংটকের দেখা মিলতে পারে।

নামথিংপোখরি। ছবি সৌজন্যেঃ biseshhomestay

নামথিংপোখরি

আহালদাড়া থেকে মাত্র ২০০ মিটারের মধ্যে নামথিংপোখরি। ৪৫০০ ফুট উচ্চতায় এক পবিত্র পোখরি। পাইন ঘিরে থাকা পোখরি ঘিরে রয়েছে নানান মিথ। আর এখানেই দেখা মেলে ডাইনোসর যুগের বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির ‘হিমালয়ান স্যালাম্যান্ডার’। প্রচুর পাখির দেখাও মেলে।

লাটপাঞ্চার। ছবি সৌজন্যেঃ wikimwdia

লাটপাঞ্চার

সেলফু থেকেই ঘুরে নিতে পারেন সবুজ চাদরে মোড়া ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম লাটপাঞ্চার। সিঙ্কোনার প্ল্যান্ট ছাড়াও পাইন,শাল,সেগুনের বৃক্ষরাজদের দখলে থাকা গ্রামে নানান পাখির আনাগোনা। লাটপাঞ্চার বিখ্যাত হয়েছে ধনেশ পাখিদের জন্য। রুফাস নেকড হর্নবিলদের ন্যাচারাল ব্রিডিং সেন্টার এই জায়গা। দেশের নানান প্রান্ত থেকে এখানে ছুটে আসেন চিত্র গ্রাহকেরা।

কীভাবে যাবেন:

শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে এনজেপি থেকে বিরিকদাড়া হয়ে সেলফু চলে আসা যায়। দূরত্ব প্রায় ৪৮ কিমি।

কোথায় থাকবেন:

সেলফুতে থাকার জন্য রয়েছে আহাল হোমস্টে। ফোন: ৯৪৩৪০৭২৫৫২। ভাড়া – লাঞ্চ,ব্রেকফাস্ট, ডিনার সমেত জন প্রতি ১২৫০ টাকা।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen