পোর্ট ট্রাস্টের নাম বদল: প্রতিবাদে সরব বিশিষ্টজনরা

কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের নাম বদলে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নামে হওয়ার ঘোষণায় প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বিভিন্ন মহলে, তৈরি হয়েছে বিতর্ক। প্রশ্ন উঠেছে, পোর্ট ট্রাস্টের অধীনে রয়েছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ডক।

January 17, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi
ছবি সৌজন্যেঃ টুইটার

কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের নাম বদলে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নামে হওয়ার ঘোষণায় প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বিভিন্ন মহলে, তৈরি হয়েছে বিতর্ক। প্রশ্ন উঠেছে, পোর্ট ট্রাস্টের অধীনে রয়েছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ডক। পোর্ট ট্রাস্টের নাম শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নামে হলে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কি যোগ্য সম্মান পাবেন?‌ অনেকেই বলছেন, ‌সুভাষচন্দ্র বসুর নামের ওপরে লেখা থাকবে শ্যামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নাম। তাহলে কি ১৫০ বছরের ইতিহাসকেই মুছে দেওয়ার চেষ্টা এটি।  

সারা পৃথিবীর কাছেই কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট নামেই পরিচিত। হঠাৎ করে এই নাম বদল হলে বিভ্রান্তি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। তাছাড়া গোটা দেশে বাংলার জলপথ বাণিজ্যের ইতিহাসে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট এক উজ্জ্বল নাম।

এব্যাপারে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ভাইপো জাস্টিস চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়েছেন, ‘‌বিষয়টি ব্যক্তিগত ও স্পর্শকাতর। এভাবে নাম বদলের আমি বিরোধী। আমার মেজকাকা যে–‌রাজনীতি করেছেন, সেটা বিজেপি–‌র রাজনীতি নয়।’‌‌

যোগেন চৌধুরি: ‌এ–‌সব নামকরণ কিচ্ছু নয়। এটা আসলে মোদির ২০২১–এর নির্বাচনী প্রচারের অঙ্গ। বন্দর শ্যামাপ্রসাদের নামে করে উনি ভাবছেন বাঙালি আবেগকে মুঠোয় পুরবেন। বন্দরের নাম পাল্টে আমাদের কোন্‌ অর্থনৈতিক উন্নতি হবে?‌ এর বদলে রাজ্যের উন্নতির জন্য যে–‌টাকাপয়সার দরকার সেটা দিলে অনেক উপকার হত। এ–‌সব করে উনি বাঙালিদের বোকা বানাতে চাইছেন।

পবিত্র সরকার:‌ ‌বন্দরের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গার নামকরণ কোনও ব্যক্তির নামে করার পক্ষপাতী নই। শ্যামাপ্রসাদের জন্মের বহু আগে থেকে কলকাতা বন্দর ছিল। তার গুরুত্ব, ইতিহাস ও ঐতিহ্য অত্যন্ত গৌরবময়।‌

রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত:‌ ‌ওঁরা যা খুশি করুক। তাতে কী–ই বা যায়–‌আসে!‌‌ কেউ তো আর নতুন নাম ব্যবহার করবে না!‌ যে–‌নামে এখন ডাকে, তা–‌ই ডাকবে।‌

সুবোধ সরকার:‌ পৃথিবীর কেউ কোনও দিন কলকাতা বন্দরকে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দর বলবে না। এটা বলতে অন্তত আরও দুশো বছর লাগবে। যদি অবশ্য তত দিন সভ্যতা বাঁচে!‌ অত্যন্ত অযৌক্তিক ও অপ্রাসঙ্গিক।‌

মীরাতুন নাহার:‌ আমাদের কেন্দ্র সরকারে যাঁরা দখলদারি পেয়েছেন তাঁরা কি কোনও ব্যাপারে যুক্তির ধার ধারেন?‌ স্বাভাবিকভাবে বন্দরের নামকরণেও যুক্তির পথে হাঁটেননি। কলকাতা বন্দরের ইতিহাস কতশো বছরের?‌ তার সঙ্গে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের কোনও যোগাযোগ নেই। এঁরা মনে করেন, দেশ পরিচালনার এবং দেশে পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে তাঁরা যেমন খুশি তেমনটি করতে পারেন।’‌

অলকানন্দা রায়:‌ ইদানীং সব ভালমন্দ ভাবা বন্ধ করে দিয়েছি। তবে যখন দেশের যুব সম্প্রদায় জেগে ওঠে, তখন কিন্তু বিপ্লব আসে। দিন বদলের সূচনা হয়।‌

কৌশিক সেন:‌ ‌নাম বদলের পেছনে যদি কোনও ইতিহাস থাকে, তখন সেটাকে যুক্তিযুক্ত মনে হয়। কিন্তু সেই ইতিহাসটা জোর করে তৈরির চেষ্টা হলে খারাপ লাগে। ইতিহাসের নিরিখে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় একজন বিতর্কিত চরিত্র। শ্যামাপ্রসাদের নাম কলকাতা বন্দরের সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার পেছনে তাঁকে সম্মান জানানোর কোনও মনোভাব নেই। আসলে নিজেদের শক্তিপ্রদর্শনের চেষ্টা।‌‌‌‌‌

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen