মুম্বইয়ের রিয়েলিটি শোয়ে লোকগান গেয়ে মঞ্চ মাতাচ্ছে নদীয়ার প্রাঞ্জল

ছোট থেকেই গানের পরিবেশে বড় হয়ে ওঠা প্রাঞ্জলের।

May 18, 2022 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi
ছবি সৌজন্য: Times Of India

আমি বাউল হতে চাই…। ছেলেবেলায় অনেকের অনেক কিছু বায়না থাকে—নতুন পোশাক পরা…দামি চকোলেট খাওয়া…বাবা-মায়ের হাত ধরে কাছেপিঠে বেড়াতে যাওয়া। কিন্তু প্রাঞ্জলের বায়না ছিল একটাই—‘আমাকে বাউলের আখরায় নিয়ে যাবে।’ ছেলে এমন আবদার ফেলতে পারতেন না বাবা নদীয়ার করিমপুরের গোরভাঙার সেই আখরা থেকে মুম্বইয়ের দূরত্ব নেহাৎ কম নয়। সেই দূরত্ব ঘুচিয়ে দিচ্ছে প্রাঞ্জলের স্বর ও সুর। একতারা নিয়ে সে গাইছে— ‘আমার মন মজাইয়ারে দিল মজাইয়া মুরশিদ নিজের দেশে যাও…কিংবা ‘আমায় ভাসাইলি রে, ডুবাইলি রে…।’ সপ্তমে তার সুরের স্থায়ীত্ব দেখে তখন লাফিয়ে ওঠেন জাতীয় স্তরের একটি বিনোদন চ্যানেলের রিয়েলিটি শোয়ের বিচারক। হাততালিতে গমগম করে দর্শকাসন। আর তখনই বাংলার লোকগান একসূত্রে গেঁথে দেয় বহুত্ববাদী ভারতকে। প্রাঞ্জল আবারও গান ধরে—জসীমুদ্দিনের ‘জ্বালাইয়া চাঁন্দেরও বাতি, আমি জেগে রব সারারাতি গো…’।


করিমপুরের লক্ষ্মীপুর গ্রামে বাড়ি প্রাঞ্চলের। তার গানের ক্লিপিংস এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। ভিউয়ার সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১০ লক্ষ। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। বাড়িতে মা, বাবা, দিদি ও ঠাকুরদা। করিমপুরের রাইনগর প্রাথমিক স্কুলেই পড়াশুনা প্রাঞ্জলের। বয়স মাত্র তেরো। প্রথমে বাংলা মঞ্চ দিয়ে সঙ্গীতের জয়যাত্রা শুরু। চলতে চলতে প্রাঞ্জলের পাড়ি বাণিজ্য নগরীতে। সারাদিন রিহার্সাল ও শ্যুটিং নিয়ে ব্যস্ততার মাধ্যেই দিন কাটছে খুদে শিল্পীর। আজ জেলাবাসী এক বাক্যে বলেন প্রাঞ্জল ‘নদীয়ার গর্ব’। রিয়েলিটি শোয়ে পারফর্ম করার সময় প্রাঞ্জলকে বারবার বলতে শোনা গিয়েছে, বড় হয়ে ফকির হওয়ার কথা। 


ছোট থেকেই গানের পরিবেশে বড় হয়ে ওঠা প্রাঞ্জলের। দিদি প্রাপ্তি বিশ্বাসও গানের জগতের মানুষ। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোকাল মিউজিকের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। প্রাঞ্জলের বয়স তখন পাঁচ। কবিতার মাধ্যমে প্রথম শিল্পজগতে পা রাখা। পাড়ার অনুষ্ঠানে বীরপুরুষ কবিতা পাঠ করে প্রাঞ্জল। কিন্তু বাউল গানের জগতই ছিল তার গন্তব্যস্থল। তাই বাউল গান তাকে ঠিক খুঁজে নিয়েছে। মাত্র আট বছর বয়সে বাড়ি থেকে আঠারো কিলোমিটার দুরে গোরভাঙায় বাউল শিল্পীদের আখরায় যাওয়া প্রাঞ্জলের। সেই বাউল আখরাই পেয়ে বসে তাকে। মাত্র দশ বছর বয়সে বাংলা মঞ্চে প্রাঞ্জলের প্রথম আত্মপ্রকাশ। 

মুম্বই থেকে ফোনে প্রাঞ্জল বলে, জাতীয় মঞ্চে বাংলার প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। আরও ভালো করে বাউল গান করতে চাই। শুনলাম, করিমপুরে সবাই আমাকে টিভিতে দেখছে। খুব ভালো লাগছে। প্রাঞ্জলের বাবা কুশল বিশ্বাস বলেন, ছোটো থেকেই ওই গানের প্রতি ঝোঁক ছিল। নেট থেকে বিভিন্ন লোকসঙ্গীত নিজে নিজে তুলত। তারপর একদিন ওকে বাউলের আখরায় নিয়ে যাই। সারা দেশের সামনে ও গান করছে দেখে খুব ভালো লাগছে। 
প্রাঞ্জলকে বাউলের তালিম দিয়েছেন নুর আলম। প্রাঞ্জল তাঁকে গুরুজি মানে।  আলম বলছিলেন, আসলে প্রাঞ্জলকে যে শেখাব, সেই স্পর্ধা আমার নেই। প্রাঞ্জল প্রতিভা নিয়েই পৃথিবীতে এসেছে। সঙ্গীতকে ও খোঁজেনি। সঙ্গীত ওকে খুঁজে নিয়েছে। ছোট থেকেই লোকগানের প্রতি ওর একটা টান ছিলই। মাঝেমধ্যেই এসে বলত, ‘আমি বাউল হতে চাই।’ 
আজ প্রাঞ্জলের স্বপ্নপূরণ। ‘বাউল’ বলে তাকে এখন চেনে তামাম ভারতবাসী। প্রাঞ্জল গাইছে, ‘ওহান কৌন হ্যায় তেরা…।’ গানের সুর দেওয়াও আর এক বাঙালির—শচীনদেব বর্মন। 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen