‘পায়ের কাছে রবীন্দ্রনাথ-বঙ্কিম! সুকান্ত ক্ষমা চাইবেন না কেন?’, প্রতিবাদে গর্জে উঠল তৃণমূল

September 11, 2025 | 3 min read
Authored By: author দৃষ্টিভঙ্গি
Published by: Drishti Bhongi

 

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৭:০০: বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীসরাসরি প্রশ্ন তুললেন, “এই ঘটনায় ক্ষমা চাইবেন না কেন সুকান্ত মজুমদার?”

কুণাল ঘোষের অভিযোগ, “বাংলায় আমরা রবীন্দ্রনাথ-বঙ্কিমকে আন্তরিক শ্রদ্ধা করি। মুখ্যমন্ত্রী এবং দল বারবার সেটা প্রমাণ করেছে। আমাদের দলে কেউ সামান্যতম বিচ্যুত হলেও শাস্তি হয়। অথচ সুকান্ত মজুমদার একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েও মঞ্চে পায়ের কাছে রবীন্দ্রনাথ ও বঙ্কিমচন্দ্রের ছবি রেখেছেন। তাঁর ক্ষমা চাওয়া উচিত।”

ব্রাত্য বসুও তীব্র আক্রমণ শানিয়ে বলেন, “বিজেপি কখনওই বাঙালির দল নয়। শান্তিনিকেতনের ফলক থেকে রবীন্দ্রনাথের নাম বাদ দেওয়া, সিলেবাস থেকে তাঁর লেখা বাদ দেওয়া কিংবা বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা- সবই প্রমাণ করছে বাংলার সংস্কৃতি ও গর্বকে আঘাত করছে তারা।”

পরিসংখ্যান তুলে ধরে তৃণমূলের দাবি, বিজেপি বারবার বাঙালি ও বাংলার মনীষীদের অপমান করছে। এদিন ব্রাত্য বসু বিজেপির অন্যান্য বিতর্কিত মন্তব্য ও কর্মকাণ্ডও তুলে ধরেন-

– রবীন্দ্রনাথের গায়ের রঙ নিয়ে বিজেপি নেতার নিন্দাজনক মন্তব্য

– ২০১৯-এ কলকাতায় বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনা

– শান্তিনিকেতনের ফলক থেকে রবীন্দ্রনাথের নাম বাদ দেওয়া

– দিল্লির দুর্গাপুজো প্যান্ডেলে প্রধানমন্ত্রীর ছবি রাখার নির্দেশ

বিজেপিকে কটাক্ষ করে ফের আক্রমণ শানালেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ও তৃণমূল বিধায়ক ব্রাত্য বসু। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে তিনি অভিযোগ করেন, বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে পদদলিত করেই বিজেপি রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি করতে চাইছে।

ব্রাত্যের অভিযোগ, “যে বিজেপি একসময় মা দুর্গার বংশপরিচয় নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিল, বাংলায় দুর্গাপুজো বন্ধ বলে মিথ্যে রটিয়েছিল, আজ তারাই আবার এই উৎসবকে নিজেদের প্রোপাগান্ডার হাতিয়ার বানাতে চাইছে। দুর্গাপুজো মানে অশুভের নাশ করে শুভ শক্তির জয়। ২০২৬-এ সত্যিকারের অসুরকে হারাতে হবে। সেটা হল বিজেপি— যে দল ক্ষমতার লোভে দেবদেবীকেও কলুষিত করছে।”

তিনি আরও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৪০,০০০-রও বেশি দুর্গাপুজো কমিটিকে ১.১০ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছেন, বিদ্যুৎ বিলে ৮০% ছাড় দিয়েছেন। অথচ বিজেপি আবারও এর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করছে। বাংলার ভাষা, প্রতীক, উৎসব— যা কিছু বাঙালির কল্যাণে, বিজেপি প্রতিটি পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে।”

ব্রাত্যের দাবি, বাংলার মানুষ বিজেপির “ভণ্ডামি” বুঝে গিয়েছে। তাঁর কথায়, “এটা এক এমন দল, যারা আমাদের ঐতিহ্যকে অসম্মান করে, দেবদেবীকে অপমান করে, সংস্কৃতিকে পদদলিত করে, অথচ বাঙালিদের সমর্থন আশা করে। বাংলা কোনওদিনও এই বিশ্বাসঘাতক বিজেপিকে ক্ষমা করবে না।”

ব্রাত্যর কথায়, “বাংলার দুর্গাপুজো UNESCO-র স্বীকৃতি পাওয়া সত্ত্বেও বিজেপি সেটাকেও নিজেদের রাজনৈতিক প্রচারের হাতিয়ার বানাতে চাইছে। অথচ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৪০ হাজারের বেশি দুর্গাপুজো কমিটিকে অর্থসাহায্য দিয়েছেন, কোথাও তাঁর ছবি ঝোলানোর নির্দেশ দেননি।”

তিনি আর‌ও বলেন যে, “২০২৩ সালে শান্তিনিকেতন ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়, তখন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে স্থাপিত ফলকে প্রধানমন্ত্রীর ও উপাচার্যের নাম থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম ছিল না। ইতিহাস থেকে গুরুদেবের নাম মুছে ফেলা হল বিজেপির সর্বোচ্চ বাংলা-বিরোধী রাজনীতির প্রমাণ।”

এর আগেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বিজেপি অপমান করেছিল। এ প্রসঙ্গে ব্রাত্য বসু বলেন, “২০২১ সালে বিজেপি নেতা সুভাষ সরকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অপমান করেন তাঁর গায়ের রঙ নিয়ে নিন্দাজনক মন্তব্য করে, বলেন তাঁর মা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা তাঁকে কোলে তোলেননি “কারণ তাঁকে তারা কালো মনে করতেন”। গুরুদেবের মহানতাকে এভাবে ছোট করে দেখিয়ে বিজেপির আমাদের সাংস্কৃতিক মনীষীদের প্রতি সম্পূর্ণ তাচ্ছিল্য প্রকাশ করছে।”

অতীত ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “ভুলে গেলে চলবে না, ২০১৯ সালে বিজেপি নেতারা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙচুর করেছিল। তারা এখনও এই অপরাধের জন্য ক্ষমা চাইনি। দিল্লি থেকে আগত তাদের নেতারা এখানে এসে আমাদের সংস্কৃতিকে অপমান করে, আমাদের মনীষীদের অবমাননা করে, তারপরও বাংলার গর্বের কথা বলার সাহস দেখায়”

তৃণমূলের অভিযোগ, দেবদেবীরাও বিজেপির নোংরা রাজনীতির হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না। এপ্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রীর আর‌ও সংযোজন, “বিজেপির নেতারা মা দুর্গাকে অপমান করেন, আমাদের পবিত্র ঐতিহ্যকে ব্যঙ্গ করেন, আর তারপর নির্লজ্জভাবে দুর্গাপুজোকে নিজেদের রাজনৈতিক ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য ব্যবহার করার চেষ্টা করেন। দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা দুর্গাপূজো উদ্যোক্তাদের নির্দেশ দিচ্ছেন-প্যান্ডেলে সর্বত্র মোদীজির ছবি টাঙাতে হবে, এমনকি তাঁর নামে একটি দিন উৎসর্গ করতে হবে। এটা কি আদৌ মা দুর্গার প্রতি ভক্তি, নাকি ওদের “নন বায়োলজিক্যাল” প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করার চেষ্টা?”

এদিন তৃণমূল নেতৃত্ব সাফ জানিয়ে দেন, সুকান্ত মজুমদার বাঙালি হয়েও রবীন্দ্রনাথ-বঙ্কিমকে অপমান করেছেন। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তাঁর উচিত প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া। এনিয়ে গেরুয়া শিবিরের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen