তিনশো বছর ধরে রামরাজাতলায় চলে আসছে রামের পুজো
কথিত আছে স্থানীয় জমিদার অযোধ্যারাম চৌধুরী স্বপ্নাদেশ পেয়ে এখানে রামের পুজো চালু করেন।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: হাওড়ার রামরাজাতলায় প্রায় তিনশো বছর ধরে চলে আসছে দোতলার সমান প্রতিমার পুজো। কথিত আছে স্থানীয় জমিদার অযোধ্যারাম চৌধুরী স্বপ্নাদেশ পেয়ে এখানে রামের পুজো চালু করেন। স্থায়ী রথের উপরে প্রতিবছর রাম-সীতার মূর্তি তৈরি করে এখানে পুজো করা হয়। নির্দিষ্ট সময় পরে তা বিসর্জনও করা হয়।
ইতিহাস বলে, রাম বনবাসে থাকাকালীন তাঁর সঙ্গে রাবণের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধ জয় করার পর অযোধ্যায় ফেরেন রাম। শাসনভার নেওয়ার পরে তিনি প্রথম যে দরবার বসেন, সেই দরবারের আদলেই রথের উপরে মূর্তি তৈরি করা হয়।
এছাড়াও ঐতিহাসিক তথ্য বলছে, রামমন্দির তৈরির আগে ওই অঞ্চলে মূল আরাধনা ছিল সরস্বতীর। বিস্তর মতানৈক্য পেরিয়ে, সরস্বতীর উপাসক ও রামোপাসকদের মধ্যে বোঝাপড়া হয়। সেই থেকে রামপূজা অন্যতম উৎসব হয়ে ধরা দেয় সেখানে। উৎসবই বটে। এমনই প্রভাব, যে অঞ্চলটির নামই হয়ে গেল রামের নামে। ‘রামরাজাতলা’।
এই রামরাজাতলায় ‘শ্রীরাম’ কিংবা ‘রামচন্দ্র’ পূজিত হন না। পুজো হয় রাম ঠাকুরওর। এ যেন রামের বাঙালি হয়ে ওঠা। সে-কারণেই দেখা যেত, গোঁফ আছে তাঁর। আমরা ক্লিন-শেভড ছবি বা মূর্তি দেখতেই অভ্যস্ত। কিন্তু বাঙালি যেমন শিবের পেটে নোয়াপাতি ভুঁড়ি বসিয়েছে, ঠিক তেমনি রামকেও দিয়েছে গোঁফ। ঘরের লোক না হলে কি হয় এমন!
রামরাজার মন্দিরে যে মূর্তিটি ছিল রাম-সীতার, সেটি তো প্রতিবছর বিসর্জিত হয়, আবার বানানোও হয়। তিনশো বছর ধরে চলে আসছে এমনই। কিন্তু সম্প্রতি সেই প্রাচীন মন্দিরের উল্টোদিকের ভূমিতে পুকুর বুজিয়ে নির্মিত হয়েছে আরও একটি মন্দির। সেখানে পাথরের রাম-সীতা বিরাজমান থাকবেন সারাবছর। রামের রথে জগদ্ধাত্রী, ভরত, শত্রুঘ্ন, বিভীষণ, জাম্বুবান, শিব, ব্রহ্মা, বশিষ্ঠ প্রমুখের মোট ছাব্বিশটি মূর্তি রয়েছে। রামের পাশেই বীর হনুমানের মন্দির। এই মন্দির চত্বরে সাবিত্রী-সত্যবান, বলিরাজা ও বামন অবতারেরও পুজো হয়। প্রথমে রামপুজো হত ৩দিন ধরে। পরে তা বেড়ে ১৫দিন ও ১ মাস হয়। প্রতিবছর রামনবমীতে পুজো শুরু হয়। ভাসান হয় শ্রাবণ মাসের শেষ রবিবার। ভাসান উপলক্ষ্যে বিশাল শোভাযাত্রা হয়।