“নিশ্চিন্তে থাকুন, নাগরিকত্ব নিয়ে ভাববেন না, আমি আছি”, মতুয়াগড়ে আশ্বাস মমতার

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৬:০৬: উত্তর ২৪ পরগণার বনগাঁয় মতুয়া অধ্যুষিত এলাকায় নাগরিকত্ব ও নতুন ভোটার তালিকা পর্যালোচনার প্রক্রিয়া SIR (স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন) নিয়ে যখন উদ্বেগ চরমে, তখনই মানুষের পাশে দাঁড়াতে সভা ও মিছিলে অংশ নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee )। বনগাঁর (Bangaon) সভা থেকে তিনি স্পষ্ট বার্তা দেন, “নিশ্চিন্তে থাকুন, নাগরিকত্ব নিয়ে ভাববেন না, আমি আছি আপনাদের পাশে।”
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় দ্রুতগতিতে এসআইআর-এর (SIR) কাজ চলছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক ছড়িয়েছে বনগাঁ ও তার লাগোয়া এলাকায়, যা দীর্ঘদিন ধরেই মতুয়াদের রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। স্থানীয়দের অভিযোগ, হঠাৎ চাপিয়ে দেওয়া এই প্রক্রিয়ায় বহু মানুষ প্রয়োজনীয় নথি জোগাড় করতে না পেরে আতঙ্কে রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মানুষের উদ্বেগ দূর করার চেষ্টা করেন। তাঁর অভিযোগ, ভোটের মুখে হঠাৎ এত তাড়াহুড়ো করে কাজ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা প্রকৃত ভোটারদের নাম বাদ পড়ার আশঙ্কা তৈরি করছে। ধান কাটার মরসুমে কৃষকদের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে, আর বিএলও কর্মীদেরও “নাভিশ্বাস অবস্থা” তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee ) এদিন বারবার মতুয়া সম্প্রদায়ের (Matua community) পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, “ভয় পাবেন না, আমরা থাকতে কেউ আপনাদের তাড়াতে পারবে না। নাগরিকত্বের অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।” বিজেপিকে আক্রমণ করে তিনি দাবি করেন, ঠাকুরবাড়ির উন্নয়ন থেকে শুরু করে বড়মাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো পর্যন্ত সব দায়িত্ব তৃণমূলই পালন করেছে। কমিশনের (Election Commission of India) উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দেন, “কার কথা শুনে এত তাড়াহুড়ো শুরু করলেন? আর কত বলিদান দিতে হবে মানুষের?”
প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “এক মুখে দু’ রকম কথা বলছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন ২০২৪-এর আগে যারা এসেছে তাদের তাড়ানো হবে না, আবার কমিশন ২০০২ সালের লিস্ট (Voter List) মানতে বলছে। কোনটা ঠিক?” পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করেন, কেন্দ্র বরাবরই বাংলাকে দোষারোপ করার চেষ্টা করছে। তাঁর প্রশ্ন, “সীমান্ত কে সামলায়? বিমানবন্দর কার অধীনে? পাসপোর্ট-কাস্টমস কার নিয়ন্ত্রণে? তাহলে বাংলাকে কেন দোষ দেন?” খানিক থেমে তিনি নিজেই উত্তর দেন, “বাংলা বিদ্বেষী বলেই বাংলাকে ভাতে মারতে চায় ওরা।”
সভায় আত্মবিশ্বাসী সুরে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, এবার বিজেপির (BJP) নিজস্ব ভোটাররাও তৃণমূলকে (TMC) ভোট দেবেন। তিনি বলেন, “তোমাদের ভোটাররাই আমাকে ভোট দিয়ে জিতিয়ে দেবে। আমাকে আঘাত করলে সারা ভারত হিলিয়ে দেব। ইলেকশনের পর দেশে দেশে ঘুরে মানুষের সঙ্গে কথা বলব।” বনগাঁর মানুষকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, “আমি আপনাদের পাহারাদার-দিল্লির নেতাদের মতো জমিদার নই।”
সভা শেষে বনগাঁর চাঁদপাড়া থেকে ঠাকুরনগর (Thakurnagar) পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ মিছিল করেন মুখ্যমন্ত্রী। এর আগে কলকাতায়ও এসআইআর-এর প্রতিবাদে নাগরিকত্ব রক্ষার দাবিতে মিছিল করেছিলেন তিনি, যেখানে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও (Abhishek Banerjee) অংশ নিয়েছিলেন।