স্টেজে জন্ম স্টেজে মৃত্যু: গিরিশ; বাঙালির মঞ্চের বাদশা

১৮৬৭ সাল, গিরিশচন্দ্র, রাধামাধব কর, ধর্মদাস সুররা বাগবাজারে যাত্রাদল তৈরি করলেন। তাঁদের প্রথম পালা মাইকেলের শর্মিষ্ঠা।

February 28, 2024 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi
বাঙালির মঞ্চের বাদশা গিরিশ ঘোষ

আজ গিরিশ ঘোষের জন্মদিন। বাংলা থিয়েটারের মঞ্চের বেতাজ বাদশা ছিলেন গিরিশচন্দ্র। শুরুটা হয়েছিল নেহাত শখের বসে।

১৮৬৭ সাল, গিরিশচন্দ্র, রাধামাধব কর, ধর্মদাস সুররা বাগবাজারে যাত্রাদল তৈরি করলেন। তাঁদের প্রথম পালা মাইকেলের শর্মিষ্ঠা। এক রাতে গিরিশ নাটক আর গান নামালেন। পরের বছর, দুর্গা পুজোর সপ্তমী। বাগবাজার অ্যামেচার থিয়েটার দীনবন্ধু মিত্রর শ্লেষাত্মক সামাজিক প্রহসন ‘সধবার একাদশী’ মঞ্চে নামাল। নেতা গিরিশ।
মাতাল নিমচাঁদের ভূমিকায় অভিনয় করলেন গিরিশ, অভিনেতা গিরিশের জন্ম হল। বেঙ্গলি পত্রিকা বহু পরে এ নাটক সম্পর্কে লিখেছিল, গিরিশচন্দ্র অ্যাপিয়ার্ড ইন দ্য রোল অব নিমচাঁদ ইন ‘সধবার একাদশী’ অ্যান্ড হোয়েন হি অ্যায়োক দ্য নেক্সট মর্নিং হি ফাউন্ড হিমসেলফ অ্যান অ্যাক্টর।

আর ফিরে দেখতে হয়নি, প্রায় চার দশক নট গিরিশের কর্মজীবন স্থায়ী হয়েছিল। বহু দল বদলে কাজ করেছেন, কখনও গ্রেট ন্যাশনাল, কখনও এমারেল্ড, কখনও মিনার্ভা, কখনও ক্লাসিক। নিজে হাতে গড়েছেন স্টার থিয়েটার। বিলিয়েছে অর্থ, মেধা, শ্রম, সময়, দাঁড় করিয়েছেন স্টারকে।

অভিনয়-শিল্পী, মঞ্চাধ্যক্ষ গিরিশ পুরোদস্তুর নাটক লেখা শুরু করেন ১৮৭৭ সাল থেকে। গিরিশের নাটক লেখার কারণ, সে’সময়ে নাটকের অভাব। প্রায় তিরিশ বছরের নাট্যকার জীবনে আশিটিরও বেশি পৌরাণিক, ভক্তিমূলক ও সামাজিক নাটক লিখেছেন গিরিশ। ‘গৈরিশী ছন্দ’ সংলাপ রচনার ঢঙটি তাঁরই সৃষ্টি। বাংলা ভাগের খবর রটল, দেশাত্মবোধক নাটক লিখতে শুরু করলেন গিরিশ। পাশাপাশি করলেন অনুবাদ। গিরিশের ‘ম্যাকবেথ’ হয়ত খোদ শেক্সপিয়রকেও ছাপিয়ে গিয়েছিল।

মানুষটির মৃত্যুও হয়েছিল স্টেজের জন্যেই। নট গিরিশকে শেষবারের মতো চাক্ষুষ করেছিল কলকাতা। দিনটা ছিল ১৫ জুলাই, ১৯১১, শনিবার। গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার আর মিনার্ভা থিয়েটারে একইসঙ্গে গিরিশচন্দ্র ঘোষ রচিত বলিদান মঞ্চস্থ হচ্ছে। পরিচালক গিরিশ আর অর্ধেন্দুশেখর। গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটারে নায়ক করুণাময়ের চরিত্রে অমরেন্দ্রনাথ দত্ত আর মিনার্ভায় নামছেন গিরিশ ঘোষ নিজেই। জুলাই মাস বর্ষাকাল। সেদিন আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামল। সাকুল্যে ৫০ টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। গিরিশচন্দ্র তখন বেশ অসুস্থ, হাঁপানির টান বেড়েছে। মিনার্ভার মালিক মহেন্দ্রলাল মিত্র বললেন শো বাতিল করে দিতে।

কিন্তু মিনার্ভার মঞ্চে নামলেন জিসি। নাটক শুরু হল। ভিড় বাড়ল। বলিদানের মঞ্চে নিজের জীবন বলি দেওয়ার বন্দোবস্ত করে ফেললেন জিসি। ওই ঠান্ডা ওয়েদারে বারবার খালি গায়ে মঞ্চে উঠতে হয়েছিল গিরিশকে। আর যাবে কোথায়! লেগে গেল ভীষণ ঠাণ্ডা। পরদিন থেকেই তিনি অসুস্থ। সে অসুস্থতা আর সারেনি। পরের বছর ৮ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হন গিরিশচন্দ্র ঘোষ। বলিদানই তাঁর শেষ মঞ্চাভিনয়। তবে অসুস্থতার সময় তপোবল নামে এক নাটকও লেখেন তিনি। সেটা সিস্টার নিবেদিতাকে উৎসর্গ করেছিলেন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen