রেপো রেট কমেছে, শেয়ার বাজার চাঙ্গা, তবু কেন সঙ্কটে সাধারণ মানুষের সঞ্চয়?

আরবিআই (RBI) এবং কেন্দ্রের আশা ছিল, এতে আর্থিক ভারসাম্য ফিরবে, ঋণের কিস্তি কমবে, মধ্যবিত্তের উপর চাপ কিছুটা হলেও হালকা হবে।

July 18, 2025 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ৯:৫৭: রেপো রেট কমেছে, কিন্তু সাধারণ মানুষের কষ্ট কমেছে কি? রিজার্ভ ব্যাঙ্ক একের পর এক তিনবার রেপো রেট কমিয়েছে, মোট হ্রাস প্রায় এক শতাংশ। সরকারের যুক্তি ছিল, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখাই এই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য। আরবিআই (RBI) এবং কেন্দ্রের আশা ছিল, এতে আর্থিক ভারসাম্য ফিরবে, ঋণের কিস্তি কমবে, মধ্যবিত্তের উপর চাপ কিছুটা হলেও হালকা হবে।

ফিক্সড ডিপোজিটে সুদের হার কিছুটা কমতে পারে ঠিকই, তবে একই সঙ্গে বাড়ি বা গাড়ি কেনার মতো ঋণও সহজলভ্য হবে, এই ছিল পরিকল্পনা। সঙ্গে মধ্যবিত্তকে খরচে উৎসাহ দিতে আয়কর ছাড়ও দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। সুদের হার কমেছে বটে, কিন্তু তার প্রত্যাশিত প্রভাব পড়েনি ঋণ বা আমানতের বাজারে। মূল্যবৃদ্ধির আগুনে জর্জরিত সাধারণ মানুষ, তাদের হাতে নেই বাড়তি সঞ্চয়।

নতুন আয়কর কাঠামোয় হোম লোন বা অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে আর আগের মতো করছাড় মেলে না। ফলে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা কমেছে। মধ্যবিত্তের মধ্যে ঋণের বোঝা বাড়ানোর প্রতি তৈরি হয়েছে একধরনের অনীহা। ব্যয় ও সঞ্চয়ের মাঝে দোদুল্যমান এই শ্রেণির কাছে রেপো কমানোর প্রভাব কার্যত অধরাই থেকে যাচ্ছে। বাস্তব পরিসংখ্যান ততটা আশাব্যঞ্জক নয়। ব্যাঙ্কের ঋণ ও আমানতের বাজার বলছে, দেশের আর্থিক ভিত এখনও নড়বড়ে।

শহরের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে, মানুষের খরচে রাশ টানতে হয়েছে, তবু রেপো কমানো আটকায়নি। প্রশ্ন উঠছে, তাতে লাভ হলো কতটা? ক্রেডিট রেটিং সংস্থা কেয়ার এজ-এর তথ্য অনুযায়ী, ২৭ জুন শেষ হওয়া পাক্ষিকে দেশে ব্যাঙ্ক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮৫ লক্ষ কোটি টাকা। অথচ ঋণ বৃদ্ধির হার মাত্র ৯.৫%, যেখানে গত বছর একই সময়ে ছিল প্রায় ১৪%, আর ২০২৩-র সেপ্টেম্বরে ছিল ২০%। অর্থাৎ ঋণের চাহিদা কার্যত তলানিতে।

এর মূল কারণ, গৃহঋণ বা গাড়ি কেনার মতো খাতে মানুষ আগের মতো ঋণ নিচ্ছেন না। এমনকি শিল্প সংস্থারাও নতুন প্রকল্পে লগ্নি করছে না, সম্প্রসারণে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। অর্থনীতি বড় হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ভিতরে জমছে অনিশ্চয়তা ও আস্থার ঘাটতি।

অন্যদিকে দেশের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় মোট জমার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৩৪ লক্ষ কোটি টাকায়। এক বছরের ব্যবধানে এই বৃদ্ধির হার ১০.১ শতাংশ, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধ শতাংশ বেশি। তবে এই বৃদ্ধির মধ্যেও রয়েছে একটি বিপরীত ধারা। ‘কেয়ার এজ’-এর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সাধারণ মানুষের ফিক্সড ডিপোজিটে জমার পরিমাণ এক বছরে প্রায় ৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

অর্থনীতিবিদদের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, এই আমানত হ্রাসের পেছনে রয়েছে মূলত দুটি কারণ। প্রথমত, অনেক মানুষের আয় বাড়ছে না, ফলে তাঁদের সঞ্চয়ের ক্ষমতাও সীমিত। দ্বিতীয়ত, সুদের হার কমে যাওয়ায় ব্যাঙ্কে টাকা রাখার প্রতি মানুষের আগ্রহও হ্রাস পাচ্ছে। ফলে ঐতিহ্যগত সঞ্চয়ের পথ থেকে সরে এসে মানুষ সেই অর্থ খরচ করছেন অন্য খাতে অথবা তুলনামূলক বেশি মুনাফার আশায় অন্য বিনিয়োগে সরিয়ে দিচ্ছেন।

একইসঙ্গে, রেপো রেট কমার প্রভাবে ব্যাংকের সুদের হার কমে যাওয়ায় শিল্প সংস্থাগুলির ঋণ শোধের বোঝা হালকা হয়েছে। এতে সংস্থাগুলি লাভের মুখ দেখছে এবং সেই ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে শেয়ার বাজারে। যার ফলে সামগ্রিক অর্থনীতি দুর্বল হলেও শেয়ার বাজার আপাতভাবে চাঙ্গা দেখা যাচ্ছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen