অ্যালকোহল কমিয়ে হাঁড়িয়ার পুষ্টিগুণ বৃদ্ধির চেষ্টা গবেষকদের
আদিবাসীদের দাবি, এই পানীয় খেলে নেশা হয় ঠিকই, তবে তা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপাদেয়।

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: পশ্চিমবঙ্গই শুধু নয়, পার্শ্ববর্তী ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা, ছত্তিশগড় সহ ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকায় আদিবাসীদের মধ্যে চল রয়েছে হাঁড়িয়ার। মূলত ভাতের সঙ্গে বাকর ও অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে তা পচানো হয়। প্রায় দু’দিন পর সেই গেঁজিয়ে যাওয়া ভাতকে মিহি করা হয়। তারপর তা কাপড়ে ছেঁকে যে নির্যাস পাওয়া যায়, তারসঙ্গে জল মিশিয়ে তা পান করা হয়। দেখতে অনেকটা ঘোলের মতো। আদিবাসীদের দাবি, এই পানীয় খেলে নেশা হয় ঠিকই, তবে তা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপাদেয়। গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহের মধ্যেও দু’এক বাটি হাঁড়িয়া খেয়ে রোদে কাজ করা যায় দিব্যি!
আদিবাসীদের এই বিশ্বাস থেকেই মনে কৌতূহল পুরুলিয়ার সিধো কানহো বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানথ্রোপলজি এবং ট্রাইবাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সমীরণ বিষইয়ের। তারপরেই উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ কলেজের মাইক্রো বায়লোজি বিভাগের গবেষক প্রদীপকুমার দাস মহাপাত্রকে নিয়ে শুরু হয় গবেষণা। সেই গবেষণা থেকেই উঠে আসে, এই হাঁড়িয়া আসলে পুষ্টির ভাণ্ডার!
সমীরণবাবু বলছিলেন, ‘আমরা দেখেছি, হাঁড়িয়া খেয়ে তীব্র রোদেও মানুষ মাঠে কাজ করেন! কীভাবে করেন, তাই নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয় আমাদের মধ্যে। তারপর প্রদীপবাবুকে নিয়ে আমরা গবেষণা শুরু করি। বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উপর হাঁড়িয়ার প্রভাব নিয়ে কাজ করেছি। গবেষণায় দেখা গেল, হাঁড়িয়ার মধ্যে পুষ্টিগুণ মারাত্মক। এক লিটার খাঁটি হাঁড়িয়াতে (জলবিহীন) ৫৫০ এমএল কার্বোহাইড্রেট, ১০২ মিলিগ্রাম গ্লুকোজ, ১৬ গ্রাম প্রোটিন রয়েছে। সেইসঙ্গে প্রায় ১১.৩% অ্যালকোহল রয়েছে।’ সমীরণবাবু বলছিলেন, ‘জলবিহীন হাঁড়িয়াতে অ্যালকোহলের মাত্রা একটু বেশিই। এই হাঁড়িয়াই যদি পানীয় জল মিশিয়ে খাওয়া যায়, তাহলে অ্যালকোহলের পরিমাণ কমে যাবে। নেশাও হবে না। পুষ্টিগুণও মিলবে প্রচুর।’
গবেষকদের দাবি, বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের মধ্যে সমীক্ষা করে তাঁরা দেখেছেন, আদিবাসীদের এক তৃতীয়াংশ মানুষই অপুষ্টির শিকার। সমীরণবাবু বলেন, ‘আদিবাসীদের হাঁড়িয়া খাওয়া কোনওদিনই বন্ধ করা যাবে না। তবে তা যদি স্বাস্থ্যসম্মতভাবে তৈরি করা যায় এবং যদি কিছু মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট মেশানো যায়, তাহলে এই হাঁড়িয়ার মাধ্যমেই আদিবাসীদের মধ্যে অপুষ্টি দূর করা সম্ভব। আমার পিএইচডি গাইড ডক্টর দিলীপ মহলানবিশ যেভাবে ওআরএস আবিষ্কার করে বহু মানুষের জীবন বাঁচিয়েছেন, একইভাবে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হাঁড়িয়াতেও যদি শুধুমাত্র আয়রন, ক্যালসিয়াম ও বিভিন্ন ভিটামিন মিশিয়ে দেওয়া যায়, তাহলেই আদিবাসীদের অপুষ্টি দূরীকরণে হাঁড়িয়ার ভূমিকা অনস্বীকার্য হয়ে দাঁড়াবে।