গণহত্যার সাক্ষী ঢাকার ইতিহাস বহনকারী রমনা কালী মন্দির 

কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়।

November 15, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন মন্দির ছিল ঢাকার রমনা (Ramana) কালীমন্দির। এটি রমনা কালীবাড়ি নামে আজও পরিচিত। ১৯৭১ (1971) সালের মুক্তিযুদ্ধ চলার সময় পাকিস্তানি (Pakistan) বাহিনী এখানে গণহত্যা (Massacre) চালানোর পাশাপাশি মন্দিরটিও ধ্বংস করে। ঢাকা (Dhaka) জেলার সরকারি তথ্য বাতায়নে বলা হয়েছে, নেপাল থেকে আসা কালী দেবীর জনৈক ভক্ত মন্দিরটি নির্মাণ করেন। পরে ভাওয়ালের রানি বিলাসমণি দেবী এটি সংস্কার করেন। 

ঢাকার ১৮৫৯ সালের মানচিত্রে এই বিশেষ মন্দিরটিকে কৃপাসিদ্ধির আখড়া নামে অভিহিত করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর বর্তমানের দিঘিটির পাশেই ছিল তিনশ বছর আগে নির্মিত এই মন্দির। লোককথায় জানা যায়, প্রায় পাঁচ শ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। পরে সেখানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। মন্দিরটি বাঙালি হিন্দু স্থাপত্যরীতি বহন করতো। মূল মন্দিরটি ছিল দ্বিতল। ছাদের ওপর ছিল ১২০ ফুট উঁচু পিরামিড আকৃতির চূড়া। প্রাচীরঘেরা মন্দিরে একটি সুদৃশ্য কাঠের সিংহাসনে স্থাপিত ছিল ভদ্রকালীর মূর্তি। এই মূর্তির ডান দিকে ছিল ভাওয়ালের কালীমূর্তি। মন্দিরের উত্তর-পূর্ব ও পশ্চিমে ছিল পূজারি, সেবায়েত ও ভক্তদের থাকার ঘর। পাশে একটি শিবমন্দিরও ছিল। আরও ছিল একটি নাটমন্দির ও সিংহদরজা। 

রমনা কালীমন্দিরের উত্তর পাশে ছিল আনন্দময়ী আশ্রম। আনন্দময়ী ছিলেন সন্ন্যাসিনী, যিনি ঢাকার নবাবের শাহবাগ বাগানের তত্ত্বাবধায়ক রমণীমোহন চক্রবর্তীর স্ত্রী। মা আনন্দময়ী আধ্যাত্মিক শক্তির ধারক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন এবং সাধিকা হিসেবে পূজিত হন। তাঁর ভক্তরা রমনা ও সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়িতে দুটি আশ্রম তৈরি করেন।

কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭শে মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় একশ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতার পর নতুন করে নির্মিত হয়েছে শ্রীশ্রী কালীমন্দির ও শ্রী মা আনন্দময়ী আশ্রম। মন্দিরের প্রধান ফটক দিঘির উত্তর-পূর্ব পাশে প্রধান ফটকের বাইরে রয়েছে ১৯৭১ সালের ২৭শে মার্চ নিহত শহীদদের তালিকাসংবলিত একটি স্মৃতিফলক।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen