‘RSS স্বাধীনতা সংগ্রামে ছিল’- মোদীর দাবির পাল্টা ইতিহাসের নথি তুলে ধরে আক্রমণ বিরোধীদের

October 2, 2025 | 3 min read
Published by: Saikat

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৯:৩০: স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (RSS) ভূমিকা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক রয়েছে। একাধিকবার তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে- স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় না হয়ে বরং ব্রিটিশ শাসকদের সঙ্গে সহযোগিতা করেছে সংগঠনটি। কিন্তু RSS-এর শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) এক ভিন্ন সুরে কথা বললেন। তাঁর দাবি, RSS স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিল এবং দেশগঠনের কাজে শুরু থেকেই যুক্ত ছিল।

বুধবার রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেই মঞ্চেই RSS-কে সম্মান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রকাশ করেন একটি স্মারক ডাকটিকিট ও ১০০ টাকার স্মারক মুদ্রা। বক্তৃতার সময় তিনি তুলে ধরেন RSS-এর ভূমিকা, দাবি করেন- সংগঠনটি স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় থেকেই দেশগঠনের কাজে যুক্ত ছিল এবং বহু বিপ্লবীকে আশ্রয় দিয়েছিল।
অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, “RSS তার জন্মলগ্ন থেকেই দেশগঠনের কাজে নিবেদিত। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা হেডগেওয়ার সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন এবং একাধিকবার কারাবরণ করেছিলেন। তাঁর সঙ্গে RSS-এর বহু সদস্যও সেই সময় জেলে যান।” মোদীর দাবি, স্বাধীনতা সংগ্রামে RSS সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল এবং বহু বিপ্লবীকে সংগঠনটি আশ্রয় দিয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর ভাষণে তুলে ধরেন RSS-এর উপর ব্রিটিশ শাসন ও স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন শাসকের নিপীড়নের প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, “১৯৪২ সালে মহারাষ্ট্রের চিমুরে RSS কর্মীরা ব্রিটিশদের হাতে নিপীড়নের শিকার হন। স্বাধীনতার পর হায়দরাবাদের নিজামের বিরুদ্ধেও সংগঠনটি রুখে দাঁড়ায় এবং অত্যাচার সহ্য করে।” তাঁর দাবি, গোয়া ও দাদরা-নগর হাভেলির মুক্তিযুদ্ধে RSS কর্মীরা আত্মবলিদান দিয়েছেন। মোদী বলেন, “RSS সবসময় ‘দেশ সর্বপ্রথম’ নীতিতে বিশ্বাস করে এসেছে। তাদের মূল লক্ষ্য-‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’।

 

প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর ভাষণে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে RSS-এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলেন। তাঁর দাবি, “স্বাধীনতার পর সংগঠনটিকে মূলস্রোতে আসতে বাধা দিতে একাধিক চক্রান্ত করা হয়েছিল। পবিত্র গুরুজি গোলওয়ালকরকে ভুয়ো মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছিল।” মোদী বলেন, “তাঁর জেল থেকে বেরিয়ে আসার পর তিনি বলেছিলেন, ‘ভুল করে কখনও কখনও জিভ কামড়ে ফেলি আমরা, তাই বলে কি দাঁত ভাঙে?’” প্রধানমন্ত্রী আরও দাবি করেন, নিষেধাজ্ঞা ও ষড়যন্ত্রের মুখেও RSS কখনও প্রতিশোধপরায়ণ হয়নি, বরং সমাজের অংশ হিসেবেই নিজেদের ভূমিকা পালন করে এসেছে।

ঐতিহাসিক নথি অনুযায়ী, ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (RSS) সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়নি। বরং মহারাষ্ট্রের চিমুরে আন্দোলনের সময় RSS কর্মীদের সিভিল গার্ডে যোগ দিয়ে প্রশাসনিক সহায়তা করতে উৎসাহিত করা হয়েছিল বলে জানা যায়। এই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর মন্তব্যকে ঘিরে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ (Jairam Ramesh)। তিনি শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে লেখা সর্দার বল্লভভাই পটেলের একটি চিঠি তুলে ধরেন, যেখানে RSS ও হিন্দু মহাসভার কার্যকলাপকে “দেশের অস্তিত্বের জন্য বিপজ্জনক” বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। পটেল লিখেছিলেন, “গাঁধীজির হত্যার মামলাটি বিচারাধীন। সংগঠনগুলোর ভূমিকা নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক নয়, তবে আমাদের রিপোর্ট বলছে, বিশেষ করে RSS-এর কার্যকলাপের ফলে দেশে এমন পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, যার জেরে এই বিপর্যয় ঘটেছে।

 

গাঁধীহত্যা মামলায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (RSS) শেষপর্যন্ত আইনি নিষ্কৃতি পেলেও, সংগঠনটির অতীত ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক থামেনি। প্রধানমন্ত্রী মোদীর মন্তব্যের পর কংগ্রেস (Congress) পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে দাবি করা হয়- স্বাধীনতা আন্দোলনে RSS-এর কোনও সক্রিয় ভূমিকা ছিল না। ভিডিওতে আরও বলা হয়, সংগঠনটি ভগৎ সিংহকে ‘নৈরাজ্যবাদী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল এবং ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করছিল। কংগ্রেসের অভিযোগ, স্বাধীনতার বহু বছর পর পর্যন্ত RSS জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেনি, যা তাদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে প্রতিক্রিয়ার ঝড় উঠেছে। CPM-এর সাধারণ সম্পাদক এমএ বেবি (M. A. Baby) সোশ্যাল মিডিয়ায় সরাসরি অভিযোগ করেন, “প্রধানমন্ত্রী নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। RSS-এর বয়ান প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকে বিকৃত করছেন।”

 

একই সুরে সরব হয়েছেন আম আদমি পার্টির সাংসদ সঞ্জয় সিংহ। তাঁর দাবি, “দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় RSS ভারতীয়দের ইংরেজ সেনায় যোগ দিতে উৎসাহ দিয়েছিল। ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, তারা বিপ্লবীদের উপর নজরদারি চালাত, ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিল এবং জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছিল। এমনকি স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৫২ বছর পর্যন্ত নিজেদের সদর দপ্তরে তেরঙ্গা উত্তোলন করেনি RSS। সংগঠনটি আদতে বৈষম্যমূলক চিন্তাধারায় বিশ্বাসী।

 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen