সাগর সেন – সর্বকালের সেরা রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীদের একজন 

এই তরুণই পরে হয়ে উঠলেন সর্বকালের সেরা রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীদের একজন। যার নাম সাগর সেন।


January 4, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi
See the source image

১৯৫৮ সাল। অল ইন্ডিয়া রেডিওর সুবাদে শ্রোতারা শুনতে পেলেন এক নতুন কণ্ঠ। চমৎকার গলা ও সূক্ষ্ম কাজেও খুব দক্ষ। সাথে ভাবাবেগও অসামান্য। এই তরুণই পরে হয়ে উঠলেন সর্বকালের সেরা রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীদের একজন। যার নাম সাগর সেন।

সাগর সেনের জন্ম ১৯৩২ সালের ১৫ মে, ফরিদপুরে। দেশভাগের সময় পরিবার পাড়ি জমায় কলকাতায়। সেখানে বরানগরে থাকতে শুরু করে তাঁর পরিবার। সাগর সেনের প্রাতিষ্ঠানিক সঙ্গীত শিক্ষার হাতেখড়ি হয় সেখানেই।  

সেই সময় পঙ্কজ কুমার মল্লিক, দেবব্রত বিশ্বাস, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথের কাছে সরাসরি শেখা কণিকা বন্দ্যেপাধ্যায়, সুচিত্রা মিত্ররাও দারুণ গাইছেন। তাঁদের গান শুনতে শুনতে রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন।  অবশেষে ১৯৫৮ সালে প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীত করেন অল ইন্ডিয়া রেডিও-তে।

ষাটের দশক থেকে তিনি সন্তোষ গুপ্তের নির্দেশনায় রবি ঠাকুরের বিভিন্ন গীতিনাট্যে অংশ নিতে থাকেন। ১৯৬৬ সালে গীতিনাট্য ‘শাপমোচন’, ১৯৬৭ সালে ‘বাল্মীকি প্রতিভা’-য় অংশ নেন। তবে তাঁর চূড়ান্ত খ্যাতি আসে ১৯৬৮ সালে। অল ইন্ডিয়া রেডিও-তে প্রচারিত হয় তাঁর কণ্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘আমি জেনেশুনে বিষ করেছি পান’ গানটি প্রচণ্ড জনপ্রিয়তা পায় এবং সাগর সেন রবীন্দ্রসঙ্গীতে হেমন্ত, চিন্ময়দের সমকক্ষ হয়ে ওঠেন।

১৯৭৪ সালে গ্রামোফোন কোম্পানি অব ইণ্ডিয়ার ব্যানারে আসে তাঁর প্রথম লং প্লে রেকর্ড ‘পূজা ও প্রেম’ রেকর্ডের দুই পিঠে ছিল সাতটি ওকরে মোট চোদ্দটি গান।  একপিঠে পূজা পর্বের, আরেকপিঠে প্রেম পর্বের গান। রেকর্ডের ‘আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান’, ‘কতবারো ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া’, ‘অলি বারবার ফিরে যায়’, ‘এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম’ গানগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। সাগর সেন পরবর্তীতে নিয়মিতভাবে লং প্লে রেকর্ড বের করতে থাকেন। তাঁর হাত ধরে রবীন্দ্রসঙ্গীত ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়। বাণিজ্যিক সফলতার দিক থেকেও তিনি পরিণত হন শীর্ষ রবীন্দ্র গায়কে।

১৯৭৪ সালে আধুনিক বাংলা গানেও অভিষেক ঘটে তাঁর। প্লেব্যাক করেন ‘যে যেখানে দাঁড়িয়ে’ ছবিতে। ১৯৭৯ সালে ‘পরিচয়’ ছবিতে গাইলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘আজ জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে’। গানটির জন্য বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন এর পক্ষ থেকে সেরা গায়কের পুরষ্কার পান।

সাগর সেনের সাফল্যের মুকুটে যুক্ত হয় আরেকটি পালক। ১৯৭৫ এর আগস্টে কোলকাতা দূরদর্শনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রথম সঙ্গীত পরিবেশনার সম্মান পান তিনি। সাথে ছিলেন আরেক বিখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সুমিত্রা সেন। সাগর সেন পরিবেশন করেছিলেন ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা, বিশ্বভরা প্রাণ’।

১৯৮০ সালে সঙ্গীত পরিচালনা করেন ‘আবির্ভাব’ চলচ্চিত্রের। এছাড়া সলিল চৌধুরীর সঙ্গীত পরিচালনায় রেকর্ড করেন কিছু আধুনিক বাংলা গান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য – ‘এ জীবন এমনি করে আর তো সয়না’, ‘কী হলো চাঁদ কেনো মেঘে ঢেকে গেলো’, সবিতা চৌধুরীর সাথে ডুয়েট ‘তৃষিত নয়নে এসো’।

সঙ্গীত শিক্ষক হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন সাগর সেন। ‘রবি রাশমি’ নামে সঙ্গীত বিদ্যালয় গড়ে তোলেন তিনি। অংশ নেন বিখ্যাত কিছু কনসার্টে। এর মধ্যে ছিল- শ্রাবণ সন্ধ্যা, শাপমোচন, ঋতুরঙ্গ, গানের ঝরণাতলায়, বিশ্বজন মোহিছে, স্বদেশে নেয়ে বিদেশে খেয়ে (পাশ্চাত্যসুরের রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে আয়োজন) ইত্যাদি৷ পারফর্ম করেন রবীন্দ্র সদন, শিশির মঞ্চ, কলা মন্দির এর মত জায়গায়।

ক্যারিয়ারে তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তা নিয়ে এগিয়ে চলছেন সাগর সেন। হঠাৎ এলো সেই দুঃসংবাদ। এই কণ্ঠের জাদুকরের গলায় বাসা বেঁধেছে মরণঘাতী ক্যান্সার। ১৯৮১ সালের কথা সেটি। চিকিৎসা শুরু হলো। কিন্তু বিশেষ কিছু সুবিধা হলো না। এরকম সময়েও তিনি গান গাওয়া ও শেখানো অব্যাহত রাখেন। ১৯৮২ সালের শেষদিকে তাঁর শারীরিক অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে পড়ে। অবশেষে ১৯৮৩ সালের ৪ ঠা জানুয়ারি মাত্র ৫০ বছর বয়সে পরলোকে পাড়ি জমান এই স্বর্ণকণ্ঠ গায়ক।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen