‘হিন্দু রাষ্ট্রে’ চলবে না ‘সান্টা টুপি’! ব্রিগেডে প্যাটিস কান্ডের পর এবার ওড়িশায় হকারকে হুমকি হিন্দুত্ববাদীদের
Authored By:

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২০:৩৬: ব্রিগেডের গীতা পাঠের আসরে চিকেন প্যাটিস বিক্রি করার ‘অপরাধে’ মারধর করা হয়েছিল এক দরিদ্র হকারকে। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার বড়দিনের আগে ভিন্ন চিত্র ওড়িশায়। অভিযোগ, ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ ওড়িশায় (Odisha) সান্টা ক্লজের টুপি (Santa Claus hat) বিক্রি করার দায়ে হেনস্থা ও হুমকি দেওয়া হয়েছে গরিব বিক্রেতাদের। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনার ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিয়োতে (যার সত্যতা যাচাই করেনি এই দৃষ্টিভঙ্গি) দেখা গিয়েছে, ওড়িশার রাস্তায় ফুটপাথে দাঁড়িয়ে কিছু হকার (Hawker) বড়দিন উপলক্ষে সান্টা ক্লজের টুপি বিক্রি করছিলেন। হঠাৎই একটি সাদা গাড়ি থেকে নেমে কয়েকজন ব্যক্তি ওই বিক্রেতাদের ঘিরে ধরেন। তাঁদের দাবি, ওড়িশা ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ এবং ভগবান জগন্নাথের ভূমি। এখানে ‘খ্রিস্টানদের জিনিসপত্র’ বিক্রি করা চলবে না।
ভিডিয়োতে দেখা যায়, স্বঘোষিত হিন্দুত্ববাদীরা বিক্রেতাদের পরিচয় জানতে চান। উত্তরে বিক্রেতারা জানান, তাঁরা রাজস্থান থেকে এসেছেন এবং ধর্মবিশ্বাসে তাঁরাও হিন্দু। পেটের তাগিদে এবং বড়দিনের মরশুমে টুপির চাহিদা থাকায় তাঁরা এই সামগ্রী বিক্রি করছেন। কিন্তু হকারদের এই অনুনয়ে মন গলে না হুমকিদাতাদের। উল্টে তাঁদের বলতে শোনা যায়, ‘‘এটা ভগবান জগন্নাথের দেশ। এখানে শুধু তাঁর শাসনই চলবে। হিন্দু হয়ে তোমরা এটা কী ভাবে করছ? যদি কিছু বিক্রি করতেই হয়, তবে ভগবান জগন্নাথের জিনিসপত্র বিক্রি করো। তাড়াতাড়ি সব গুটিয়ে এখান থেকে চলে যাও।’’ এমনকি রাজস্থান থেকে এসে ওড়িশায় ব্যবসা করায় আপত্তি না থাকলেও, খ্রিস্টান ধর্মের প্রতীকী পণ্য বিক্রি করা যাবে না বলে নিদান দেয় ওই ব্যক্তিরা।
স্বাভাবিকভাবেই এই ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই নেটিজেনদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষত ওড়িশার মতো রাজ্যে এমন অসহিষ্ণু আচরণে বিস্মিত অনেকেই। নেটিজেনদের একাংশের দাবি, রাজ্যে বিজেপি সরকার (BJP government) ক্ষমতায় আসার পর থেকেই উগ্র জাতীয়তাবাদ ও তথাকথিত হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডার বাড়বাড়ন্ত হয়েছে। বিক্রেতারা যে জাতি বা ধর্মেরই হোক না কেন, দিনশেষে তাঁরা নিজেদের ও পরিবারের অন্নের সংস্থান করতেই পথে নেমেছেন- এই বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন অনেকে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এক নেটিজেনের মন্তব্য, ‘‘রাস্তার গরিব হকারদের উপরে হিন্দুরাষ্ট্রের তেজ না দেখিয়ে, সাহস থাকলে বড় শপিং মল এবং নামী বিপণিগুলিতে গিয়ে বড়দিনের জিনিসপত্র বিক্রি বন্ধ করার চেষ্টা করুন।’’ অপর এক পক্ষের মতে, ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ, এটি কোনও ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র নয়। উৎসবের মরশুমে গরিব মানুষকে এভাবে হেনস্থা করা অসাংবিধানিক এবং অনৈতিক।