‘এক লক্ষ মতুয়ার নাম বাদ যাচ্ছে, সহ্য করে নিতে হবে’, শান্তনু ঠাকুরের মন্তব্যে তুঙ্গে বিতর্ক
Authored By:
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১০:০০: আশঙ্কা সত্যি হয়েছে। খসড়া তালিকা বেরোতে দেখা যাচ্ছে, বিপুল সংখ্যক মতুয়া ভোটারের নাম বাদ গিয়েছে। এই আবহে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের মন্তব্যে নতুন করে উসকে উঠেছে বিতর্ক। খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর সোমবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন—‘এক লক্ষ মতুয়ার নাম বাদ যাচ্ছে। সেটা সহ্য করে নিতে হবে।’ অথচ এর আগে তিনিই বলেছিলেন সবার নাম থাকবে। যদি কারও নাম বাদ যায় তিনি CAA-র মাধ্যমে নাম তুলিয়ে দেবেন বলেও জানিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর গত কয়েক মাস ধরে দাবি করে যাচ্ছিলেন, ‘সবাই পাবেন নাগরিকত্ব, সবার নাম থাকবে ভোটার তালিকায়।’ ঠাকুরনগরে ‘ক্যাম্প’ করে হিন্দু প্রমাণের ‘শংসাপত্র’ বিলি করা হয়েছিল। স্বয়ং শান্তনু ঠাকুর তাতে স্বাক্ষরও করেছিলেন। কিন্তু এখন কোথায় গেল তাঁর দাবি!
শনিবার নদীয়ার তাহেরপুরের সভায় টেলিফোন বার্তায় মতুয়াদের নাগরিকত্ব নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি প্রধানমন্ত্রী। এক্স-হ্যান্ডলেও ভোটাধিকার নিয়ে কোনও সদর্থক কথা বলেননি মোদী। খোদ মোদীর মন্ত্রিসভার সদস্যের এমন বক্তব্য যে, নাম বাদ গেলে সহ্য করে নিতে হবে, তা মতুয়াদের আরও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মধ্যে ঠেলে দিল। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা মতুয়া সংঘাধিপতি মমতা ঠাকুর এ নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে নিশানা করেছেন। মমতা ঠাকুর বলেছেন, ‘‘মতুয়াদের সঙ্গে প্রতারণা করল বিজেপি। এর আগেও করেছে, এবারও করল। মতুয়াদের শুধু ভোটব্যাংক হিসাবে ব্যবহার করে ওরা। যোগ্য সামাজিক সম্মান যে দেয় না, তা আজ স্পষ্ট!’’
সোমবার বনগাঁর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আষাঢ়ে দাবি করেন শান্তনু। তিনি বলেন, ‘‘কমিশনের খসড়া তালিকায় রাজ্যের ৫৮ লক্ষ মানুষের নাম বাদ গিয়েছে। এর মধ্যে ৫০ লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলমান। সেখানে এক লক্ষ মতুয়ার নাম বাদ গিয়েছে।’’ এর পর মতুয়াদের উদ্দেশ্যে তাঁর পরামর্শ, ‘‘মতুয়াদের একটু সহ্য করে নেওয়া উচিত।’’ এখানেই প্রশ্ন উঠছে পঞ্চাশ লক্ষ মুসলমান রোহিঙ্গা পেলেন কোথায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী? পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩০ লক্ষের মতো। তাহলে বাংলার খসড়া ভোটার তালিকা থেকে ৫০ লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলমানের নাম বাদ গেল কোথা থেকে?
নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, বনগাঁ মহকুমার চারটি বিধানসভা কেন্দ্রে যথাক্রমে বনগাঁ উত্তর, বনগাঁ দক্ষিণ, গাইঘাটা ও বাগদায় ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ভোটারের হদিশ মিলেছে, যাঁদের নিজেদের এবং বাবা-মা সহ আত্মীয়স্বজনের নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় ছিল না। সাফ কথায় যাঁদের ম্যাপিং হয়নি। যার মধ্যে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার মানুষ মতুয়া সম্প্রদায়ের। শান্তনুর দাদা গাইঘাটার বিজেপি বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর আগেই এমনটা দাবি করেছিলেন। এক লক্ষ মতুয়ার নাম বাদ যাবে, এ তথ্য শান্তনু ঠাকুর কোথায় কোথা থেকে? উঠছে প্রশ্ন উঠেছে। মতুয়াদের নিয়ে মোদী, অমিত শাহ ও বিজেপির প্রতিশ্রুতি কোথায় গেল?