শান্তিপুরের রাসযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হল ভাঙা রাস ও রাইরাজাদের নগর পরিক্রমা

গোস্বামীদের শিষ্য খাঁ চৌধুরীদের প্রস্তাবে রাসের এই দৃশ্য শোভাযাত্রা হিসেবে দেখানো হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। যা ভাঙা রাস নামে প্রচলিত।

November 30, 2023 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ইতিহাস বলছে, বারো ভুঁইঞার অন্যতম প্রতাপাদিত্য, পুরীর রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের আমলে পুজিত দোলগোবিন্দের বিগ্রহ যশোরে নিয়ে আসেন। কিন্তু মানসিংহ বাংলা আক্রমণ করলে প্রতাপাদিত্য সেই বিগ্রহ তুলে দেন বারো ভুঁইঞাদের গুরু অদ্বৈতাচার্যের পৌত্র মথুরেশ গোস্বামীর হাতে। তিনি সেই বিগ্রহকে শান্তিপুরে নিয়ে এসে রাধারমণ নামে প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু মথুরেশ গোস্বামীর মৃত্যুর পর সেই বিগ্রহ একদিন চুরি হয়ে যায়। স্থানীয় এক ব্যক্তি স্বপ্নাদেশ পান, তারপর দিগনগরের বিল থেকে ওই মূর্তি উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় গোস্বামীদের মনে হয়, মাধব রাধা বিনা কষ্ট পাচ্ছেন। তাই প্রতিষ্ঠা করা হয় রাধা দেবীকে। এর পর রাসের দিন তারা মিলিত হয়। গোস্বামীদের শিষ্য খাঁ চৌধুরীদের প্রস্তাবে রাসের এই দৃশ্য শোভাযাত্রা হিসেবে দেখানো হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। যা ভাঙা রাস নামে প্রচলিত।

শান্তিপুর বড় গোস্বামী বাড়ির রাধারমণ এক সময়ে একাই মন্দিরে পূজিত হতেন। রাধারানী ছিলেন না। সেই সময় প্রায়ই শ্রীকৃষ্ণের বিগ্রহ হারিয়ে যেত বা অপ্রকট হত। কাত্যায়নী পুজোর মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণের বিগ্রহ ফেরত আনা হত। সমস্যার স্থায়ী সমাধান খুঁজতে তখন শান্তিপুরের বড় গোস্বামী বাড়ির সদস্যরা প্রস্তাব করেন, হয়ত রাধারানীকে আনলে কৃষ্ণের সংসারে মন বসবে, তিনি আর মন্দির ছেড়ে যাবেন না। রাধারানীর মূর্তি গড়ানো হয়। রাস উৎসবের সময় তা প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেবার দ্বিতীয় রাসের পরের দিন শান্তিপুর বড় গোস্বামী বাড়ির সদস্যরা মিলে রাধা এবং কৃষ্ণের মূর্তি নিয়ে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা আয়োজন করেন। শান্তিপুরের অন্যান্য বিগ্রহ বাড়ি সেই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। এইভাবেই ভাঙা রাসের সূচনা হয়।

রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের শাসনকালে, ভাঙা রাসকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের আগ্রহ বাড়তে থাকে। কতকটা হিংসায়, রাসের সময় নবদ্বীপ থেকে শান্তিপুর আসার জলপথ এবং স্থলপথে অতিরিক্ত কর চাপিয়ে দেন কৃষ্ণচন্দ্র। সাধারণ মানুষের পক্ষে এই কর দেওয়া সম্ভব ছিল না। ফলে শান্তিপুরের ভাঙারাসে ভিড় কমতে আরম্ভ করে। নবদ্বীপে জমায়েত বাড়তে থাকে। ভিড় ফিরিয়ে আনার উপায় খোঁজা হল। ঠিক হল এবার থেকে থেকে বিগ্রহের সঙ্গে রাইরাজা বেরোবে। বৃন্দাবনে যখন শ্রীকৃষ্ণ রাস মঞ্চ ত্যাগ করেছিলেন তখন স্বয়ং রাধারানী রাজা সেজেছিলেন। সেই ঘটনার প্রতীক হিসাবে কুমারী মেয়েকে রাজা সাজিয়ে পুজোর পর বিগ্রহের সামনে সিংহাসনে বসিয়ে ভাঙা রাসের শোভাযাত্রায় বের করা হয়। এ জিনিস চালু হতেই শান্তিপুরের ভাঙারাসে ভিড় বাড়তে থাকে। আজও বিগ্রহের সঙ্গে রাইরাজা বের হন। বর্তমানে রাসের শোভাযাত্রায় ১২ বছরের কম বয়সীদের রাইরাজা সাজানো হয়। রাইরাজা হওয়ার অন্যতম শর্ত হল ব্রাহ্মণ পরিবারের হতে হবে। শোভাযাত্রার আগের রাতে নিরামিষ আহারের পর শিশু কন্যাদের সাজিয়ে বিগ্রহের সামনে বসিয়ে শুরু হয় রাসযাত্রা। আজও মানুষ রাইরাজাদের আকর্ষণে শান্তিপুরের রাস উৎসবে ভিড় জমান।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen