অক্ষরশিল্পী সত্যজিৎ: ক্যালিগ্রাফির মিশেলে ফন্ট সৃষ্টির গল্প

আমরা প্রত্যেকেই সত্যজিৎ রায়কে চলচ্চিত্রকার, লেখক, চিত্রনাট্যকার, সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে চিনি, কিন্তু এর বাইরেও বাংলা শিল্পজগতে তার অবদান অনস্বীকার্য। একজন প্রচ্ছদশিল্পী, ক্যালিগ্রাফার, অক্ষরশিল্পী হিসাবে তিনি একই রকম দক্ষতার আধিকারী।

April 23, 2025 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi
সত্যজিৎ রায়

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: শুধু চলচ্চিত্রকার, লেখক, চিত্রনাট্যকার, সঙ্গীত পরিচালক পরিচয়ে সীমাবদ্ধ করা যায় না সত্যজিৎ রায়কে। এর বাইরেও রয়েছে তাঁর বহু দিক। তিনি একইরকমভাবে দক্ষ একজন প্রচ্ছদশিল্পী, ক্যালিগ্রাফার, অক্ষরশিল্পী হিসেবেও । সেই দৃষ্টিভঙ্গিতেও বাংলার শিল্পজগতে সত্যজিৎ রায় চিরস্মরণীয়।

সত্যজিৎ রায়ের পড়াশুনা সূত্রে বিখ্যাত চিত্র শিল্পী নন্দলাল বসু, বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের সাথে পরিচয় হয় এবং ওই গুনী ব্যক্তিদের কাছ থেকে বহু কিছু শিখেছিলেন।

সালটা ১৯৪৩ – সত্যজিৎ শান্তিনিকেতন ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন এবং ব্রিটিশ বিজ্ঞাপন সংস্থা ডি জে কিমারে ৮০ টাকা বেতনের বিনিময়ে “জুনিয়র ভিজুয়ালাইজার”হিসাবে কাজে যোগ দেন। বিজ্ঞাপনের জন্য ছবি আঁকা তো বটেই, ফন্ট নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজও শুরু করেন তিনি। সংস্থার কাজের বাইরেও ব্যক্তিগত ভাবে চলতে থাকে ক্যালিগ্রাফি নিয়ে কাজকর্ম। ১৯৪৩ সালের দিকে সত্যজিৎ ডি কে গুপ্তের প্রকাশনা সংস্থা ‘সিগনেট প্রেস’-এর সাথে জড়িয়ে পড়েন, এবং প্রকাশন সংস্থা তাকে বইয়ের প্রচ্ছদ আঁকার জন্য সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেন।

চার রকমের ইংরাজি ফন্টের অনবদ্য সৃষ্টিকর্তা সত্যজিৎ রায়

সেখান থেকেই প্রথম বাংলা সাহিত্যের বিপুল জগতের মধ্যে আসা। এই সমস্ত কাজকর্ম করতে করতেই শুরু করেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী-র কিশোর সংস্করণ ‘আম আঁটির ভেঁপু। তাঁর অভিনবত্ব ও বিস্তার কতটা ছিল সেটা দেখার পর অনেকেই বুঝেছেন। এবং ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’,‘বাদশাহী আংটি’,‘দেবী’,‘সীমাবদ্ধ’ ইত্যাদি সিনেমা ও গল্পের ছবিগুলো সত্যিই অনবদ্য ভাবনা দ্বারা সৃষ্টি করেছিলেন।

সত্যজিৎ রায় প্রথম ভারত ও বাংলার ক্যালিগ্রাফির অদ্ভুত সুন্দর ভাবে সবার সামনে নিয়ে আসেন। এবং তিনি নিজে তৈরি করেন চারটি নতুন ফন্ট, রোমান, বিজার, ডাফনিস ও হলিডে স্ক্রিপ্ট। আজও এই ফন্টগুলি সমানভাবে ব্যবহৃত হয়। এই চারটি ফন্টই ইংরেজিতে। এখনও ‘সত্যজিতের স্টাইল’ নামেই বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থায় ব্যবহৃত হয় ফন্ট গুলি।

বাঙালীদের কাছে আনন্দের বিষয় হল ১৯৭১ সালে ইন্টারন্যাশনাল ক্যালিগ্রাফি প্রতিযোগিতায় এই দুটি ফন্ট জয়লাভ করে। বাংলা সিনেমাতেই হোক, পোস্টার, বইয়ের কভারে সব কিছুতেই অনবদ্য ভাবে ছড়িয়ে আছেন তিনি।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen