Shamshergunj Murder Case: ১৩ জন দোষীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১৫ লক্ষ টাকা জরিমানার নির্দেশ আদালতের
Authored By:

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৮:২১: মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জে বাবা হরগোবিন্দ দাস ও ছেলে চন্দন দাসকে কুপিয়ে খুনের ঘটনায় বড়সড় রায় ঘোষণা করল আদালত। মঙ্গলবার জঙ্গিপুর মহকুমা আদালতের বিচারক অমিতাভ মুখোপাধ্যায় এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত ১৩ জনকেই দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলেন। একইসঙ্গে প্রত্যেক দোষীকে ১৫ লক্ষ টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে।
আদালত সূত্রে খবর, গত ১২ এপ্রিল ওয়াকফ আইন সংশোধনী নিয়ে বিক্ষোভ চলাকালীনই এই হাড়হিম করা ঘটনাটি ঘটে। অভিযোগ, সেই সময় উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হরগোবিন্দ দাস ও তাঁর ছেলে চন্দন দাসের ওপর চড়াও হয় দুষ্কৃতীরা। তাঁদের বাড়ির দরজা ভেঙে টেনে রাস্তায় বের করা হয় এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। এই ঘটনায় সেই সময় গোটা রাজ্য জুড়ে তীব্র চাঞ্চল্য ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল।
ঘটনার তদন্তে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ তদন্তকারী দল বা ‘সিট’ (SIT) গঠন করা হয়। তদন্তে নেমে মাত্র নয় মাসের মধ্যে পুলিশ একে একে ১৩ জন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। দণ্ডিত ১৩ জন হলো- দিলদার নদাব, আসমাউল নদাব, এনজামুল হক, জিয়াউল হক, ফেকারুল সেখ, আজফারুল সেখ, মনিরুল সেখ, একবাল সেখ, নুরুল ইসলাম, সাবা করিম, হযরত সেখ, আকবর আলী এবং ইউসুফ সেখ। পুলিশ জানিয়েছে, এদের মধ্যে মাত্র ৫ জনের নাম FIR-এ ছিল। বাকিদের তদন্তের সূত্র ধরে ওড়িশার ঝারসুগুডা, ঝাড়খণ্ডের পাকুড়, বীরভূম, হাওড়া, ফরাক্কা এবং সুতি-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের পেশ করা ৯৮৩ পৃষ্ঠার দীর্ঘ চার্জশিটে উল্লেখ করা হয় যে, এই খুনের নেপথ্যে কোনও রাজনৈতিক কারণ ছিল না, বরং ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। যদিও ঘটনার পর রাজনৈতিক রং লাগার অভিযোগ উঠেছিল বিভিন্ন মহল থেকে, কিন্তু পুলিশ প্রথম থেকেই ব্যক্তিগত আক্রোশের তত্ত্বেই অনড় ছিল।
দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়ায় মোট ৩৮ জন সাক্ষীর বয়ান গ্রহণ করা হয়। ফরেনসিক রিপোর্ট, পুলিশি তদন্ত এবং পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে গত ১৬ ডিসেম্বর মামলার শুনানি শেষ হয়। বিচারক অমিতাভ মুখোপাধ্যায় সমস্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ খতিয়ে দেখে সোমবার এই ১৩ জনকেই দোষী সাব্যস্ত করেন এবং কঠোর সাজা ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার দিন থাকায় এদিন সকাল থেকেই জঙ্গিপুর আদালত চত্বরে নজিরবিহীন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কড়া পুলিশি পাহারায় অভিযুক্তদের আদালতে পেশ করা হয়। আদালতের এই রায়কে নিহতদের পরিবারের পাশাপাশি স্থানীয় মানুষজনও স্বাগত জানিয়েছেন। ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড এবং তার বিচারে ১৩ জনেরই যাবজ্জীবন ও বড় অঙ্কের জরিমানার ঘটনা জেলায় নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন আইনজ্ঞরা।