শীল লেনের দাস বাড়িতে দেবী দুর্গার আগমন আজ
প্রতিবছর কৃষ্ণপক্ষের নবমী থেকে শুক্লপক্ষের নবমী পর্যন্ত দুর্গাপুজোর আয়োজন করে দাস বাড়ি। এই উপলক্ষে মঙ্গলবার তাঁদের প্রতিমার চক্ষুদান পর্ব সম্পন্ন হয়েছে।

ষষ্ঠীর এখনও মাস দেড়েকের অপেক্ষা। কোভিড আতঙ্ক অনেকটাই কাটিয়ে শহরবাসী এখন পুজোর দিন গুনছে। তবে শীল লেনের দাস বাড়িতে আজ, বুধবার মায়ের আগমন। ঐতিহ্যশালী এই বনেদি পরিবারে পুজো শুরু হবে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর, কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথিতে। পুজো চলবে একমাস ধরে। প্রতিবছর কৃষ্ণপক্ষের নবমী থেকে শুক্লপক্ষের নবমী পর্যন্ত দুর্গাপুজোর আয়োজন করে দাস বাড়ি। এই উপলক্ষে মঙ্গলবার তাঁদের প্রতিমার চক্ষুদান পর্ব সম্পন্ন হয়েছে।
শাস্ত্রমতে মা দুর্গার বোধন কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথিতে। তাই সেইদিন থেকেই মায়ের আরাধনার আয়োজন করা হয় দাস বাড়িতে। এই পুজো অতি প্রাচীন না হলেও আরাধনার নিয়ম-কানুন বেশ অভিনব। দাস পরিবারের অন্যতম সদস্য প্রসেনজিৎ দাসের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, আদ্যা নক্ষত্রে দেবীর বোধন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের দুর্গাপুজো শুরু হয়ে যায়। দাস বাড়িতে এতদিন আগে পুজো শুরু হয় কেন? এক মাস ধরে পুজোর আকর্ষণই বা কী কী? প্রসেনজিৎবাবুর মতে, শাস্ত্রমতে মায়ের বোধন হওয়ার পর থেকেই পুজো শুরু হয়। সমস্ত বনেদি পরিবারেই কৃষ্ণপক্ষের নবমী থেকে ঘট পেতে পুজো শুরু হয়। তবে দাস বাড়ির ‘স্পেশালিটি’ হল, ‘ঘটে নয়, পটে পুজো’। তাই কৃষ্ণ নবমী থেকেই মায়ের মূর্তির আরাধনা শুরু করে দাস পরিবার। মায়ের বোধনের নির্দিষ্ট তিথি থেকে মহালয়া পর্যন্ত বাড়িতেই নিত্যপুজো চলে। তবে মহালয়ার পরের দিন, অর্থাৎ প্রতিপদ থেকে ষষ্ঠী পর্যন্ত পঞ্জিকা অনুযায়ী প্রতিদিন বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে দুর্গার আরাধনা করা হয়। কোনও দিন কাজল, কোনও দিন আলতা ইত্যাদি। ষষ্ঠী থেকে শুরু হয় মূল দুর্গাপুজো। সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমী এই তিন দিন মহাপুজোর আয়োজন করে দাস বাড়ি। অষ্টমীর শেষ রাতে শাস্ত্র অনুযায়ী অর্ধরাত্রি পুজোর ব্যবস্থাও থাকে। এই অর্ধরাত্রির পুজো দাস বাড়ির দুর্গা আরাধনার অন্যতম আকর্ষণ বলে পরিচিত। বিজয়া দশমীতে মায়ের বিদায়ের ক্ষেত্রেও দাস পরিবারের পুজোয় বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে। ওইদিন তিনবার আরতি করা হয়। দেব-দেবীর আরতি, অপরাজিতা আরতি এবং গঙ্গাবক্ষে আরতি শেষ করে মাকে বিদায় জানায় দাস পরিবার। এখানেই শেষ নয়, দশমীর দিন বিশেষ ভোগ দেওয়া হয় মাকে। পান্তা ভাত এবং কচুর লতি। তবে রান্নাটা হয় মহানবমীর রাতে। দশমীর দিন যেহেতু মায়ের বিদায়ের কারণে পরিবারের সদস্যদের মন ভারাক্রান্ত থাকে, তাই সেদিন রান্নার চল নেই দাস বাড়িতে।
মঙ্গলবার দাস বাড়ির দুর্গা প্রতিমার চক্ষু দান করেন শিল্পী সায়ন শেঠ। ঐতিহ্যশালী বনেদি বাড়ির প্রতিমা নির্মাণ করেছেন শিল্পী সৌরভ দোলুই এবং তন্ময় দোলুই। কোভিড পরিস্থিতিতেও দাস পরিবারের ঐতিহ্যশালী প্রতিমা বানিয়ে যথেষ্ট সন্তুষ্ট শিল্পীরা। সায়ন শেঠ জানান, গত দু’বছর ধরে আমরা এই ঠাকুর বানানোর বরাত পাচ্ছি। এই পুজোর প্রতিমা গড়ার কাজে যুক্ত থাকতে পেরে আমাদের খুব ভালো লাগছে।