ঠান্ডা মাথায় গণহত্যা! শীতলকুচির ‘ভিডিও’ ভাইরাল

নিথর, প্রাণহীন। গলায় রক্ত। ক্যামেরা মাঠে ঢুকতেই দেখা গিয়েছে এমনও আরও দু’টি দেহ। তারপর বুথের দরজায় আছড়ে পড়ে জনআক্রোশ।

April 15, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

শীতলকুচির ১২৬ নম্বর বুথে সেদিন ঠিক কী হয়েছিল? নির্বাচন কমিশন বলছে, প্রায় তিনশো লোক জড়ো হয় সেখানে। তারা কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপর হামলা চালায়। আত্মরক্ষায় গুলি চালিয়েছে বাহিনী। কিন্তু বুধবার স্থানীয়দের মোবাইলে তোলা একটি ভিডিও একটি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত হতেই প্রশ্ন উঠে গেল সেই দাবি নিয়ে। ভাইরাল ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বুথের বাইরে জটলা করছেন ৩০-৪০ জন। হাতে চ্যালাকাঠ-বাঁশ হাতে কয়েকজন ঘুরছেন। কিন্তু তাঁরা বেরিয়ে আসছিলেন বাইরে। পুলিস তাদের সরিয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু কোনও বিক্ষোভ বা আক্রমণের ঘটনা ঘটেনি। তারপরেই দেখা গেল, কেন্দ্রীয় বাহিনী তেড়ে আসছে, আর তখনই গুলির শব্দ। আর্তনাদ করতে করতে তখন দিগবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে দৌড়তে শুরু করেছেন মানুষ। মহিলা কণ্ঠে ‘ও বাবা গো’ চিৎকার। আর তারপর আমতলি মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের মূল গেটের সামনে পড়ে রয়েছে লাল জামা-কালো প্যান্ট পরিহিত একটি দেহ। নিথর, প্রাণহীন। গলায় রক্ত। ক্যামেরা মাঠে ঢুকতেই দেখা গিয়েছে এমনও আরও দু’টি দেহ। তারপর বুথের দরজায় আছড়ে পড়ে জনআক্রোশ।

ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসার পরই বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশনের দিকে আঙুল তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress)। দাবি করেছে, কোনও প্ররোচনা ছাড়াই সরাসরি বুক-পিঠ লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। তাতেই মৃত্যু হয়েছে চারজন ভোটারের। তৃণমূলের মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন সেই খবরের লিঙ্ক পোস্ট করে ট্যুইটারে লিখেছেন, ‘এই ভিডিও ফুটেজ মোদী -শাহ এবং নির্বাচন কমিশনের পর্দা ফাঁস করে দিয়েছে। যা আগে কখনও হয়নি। শীতলকুচিতে ঠান্ডা মাথায় গণহত্যা হয়েছে। নিরীহ নাগরিকদের গুলি করে খুন করা হয়েছে। লজ্জা!’ ভিডিওটি খতিয়ে দেখছে কমিশন।

এই ফুটেজ প্রকাশ্যে আসার আগেই অবশ্য দিল্লিতে সদ্য মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব নেওয়া সুশীল চন্দ্রার কাছে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ জানিয়েছে তৃণমূলের এক প্রতিনিধি দল। তাদের প্রশ্ন, শীতলকুচির (Sitalkuchi) ঘটনার জন্য শিলিগুড়িতে প্রচারে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার দলকে কোন যুক্তিতে গুন্ডা বলতে পারেন নরেন্দ্র মোদী ? কল্যাণীর সভায় প্রধানমন্ত্রী কেন মতুয়া এবং নমঃশূদ্রর বিষয় উল্লেখ করে ভেদাভেদ করবেন? জনপ্রতিনিধিত্ব আইন এবং আদর্শ নির্বাচন বিধিতে যেখানে জাতিভেদের উল্লেখে বাধা রয়েছে, সেখানে শান্তিপুরের মাঠে কেন রাজবংশী সমাজের প্রসঙ্গ টানলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী? এটা কি আদর্শ নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন নয়? বক্তৃতায় কিছু বাক্য প্রয়োগের ‘অপরাধে’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচারে যদি ২৪ ঘণ্টার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধেই বা হবে না কেন? এর পক্ষে ভিডিও ফুটেজ এবং খবরের কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদনও জমা দেওয়া হয়েছে।

কোভিড পরিস্থিতিতে কমিশনের সদর দপ্তরে এদিন তৃণমূল প্রতিনিধিদের মুখোমুখি বসেছিলেন নির্বাচন কমিশনার রাজীবকুমার। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুশীল চন্দ্রা এবং পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন ভার্চুয়াল ব্যবস্থায় সেই বৈঠকে হাজির ছিলেন। বৈঠক শেষে তৃণমূলের লোকসভার মুখ্য সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা বজায় রাখতে ব্যর্থ নরেন্দ্র মোদী। না হলে যেভাবে বখাটে আঙ্গিকে দিদি সম্বোধন করছেন, তা অন্তত প্রধানমন্ত্রীর মুখে শোভা পায় না। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে কমিশনের বিশেষ পুলিস পর্যবেক্ষক বিবেক দুবের বিরুদ্ধেও সরব হয়েছে তৃণমূল। শীতলকুচির ঘটনার পর কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রসঙ্গ টেনে কমিশনের নিযুক্ত এই দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছেন বলেই তাঁদের দাবি। প্রতিনিধি দলে ছিলেন ডেরেক ও’ব্রায়েন, প্রতিমা মণ্ডল এবং ডাঃ শান্তনু সেন। তাঁদের দেওয়া স্মারকলিপিতে চাঁছাছোলা ভাষায় বলা হয়েছে, বিজেপির পক্ষে অথবা বিজেপি আগে থেকে যেমন শিখিয়ে দিয়েছে, কমিশন সেরকমই আচরণ করছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen