ছয় কোটি জনধন অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয়, গরীবের মোদী সরকার ব্যর্থ?

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাঁর আমলে ব্যাঙ্কের শাখা, কর্মী উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এসব শুনে হাসছেন ব্যাঙ্ক কর্মীরাই। তাঁরা বলছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে যেটুকু লোকবল ছিল, মোদী জমানায় তা অর্ধেকে এসে ঠেকেছে।

November 15, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগে ব্যাঙ্কিং পরিষেবার সঙ্গে সাধারণ মানুষ, বলা ভালো গরিবের সম্পর্কই ছিল না! স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এহেন মন্তব্যে দেশজুড়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। তথ্যাভিজ্ঞ মহল বলছে, মোদী বোধহয় বলতে চাইছেন জনধন অ্যাকাউন্টের কথা। তাও যদি হয়, তাহলেও কিন্তু হাতে গরম পরিসংখ্যান কেন্দ্রকে অস্বস্তিতে ফেলতে বাধ্য। কেন? কারণ, সরকারি তথ্যই বলছে, দেশে প্রায় ছ’কোটি জনধন অ্যাকাউন্ট এখন নিষ্ক্রিয়। অর্থাৎ সেগুলি নামেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। তাতে কোনও কালে কোনওরকম লেনদেন হয়নি। এখানেই শেষ নয়। তথ্য বলছে, জনধন অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে থাকার নিরিখে দেশের শীর্ষে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিই! প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাঁর আমলে ব্যাঙ্কের শাখা, কর্মী উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এসব শুনে হাসছেন ব্যাঙ্ক কর্মীরাই। তাঁরা বলছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে যেটুকু লোকবল ছিল, মোদী জমানায় তা অর্ধেকে এসে ঠেকেছে।

অর্থমন্ত্রকের পেশ করা সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, দেশে লেনদেনের অভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া অ্যাকাউন্টের সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি ৮২ লক্ষ ৩২ হাজার। এর মধ্যে মহিলাদের অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ২ কোটি ২ লক্ষ। কী হাল পশ্চিমবঙ্গের? দেখা যাচ্ছে, এখানে মোট জনধন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে ৪ কোটি ৮ লক্ষ ৯৩ হাজার। তার মধ্যে অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার সংখ্যা ৩৩ লক্ষ ৬৫ হাজার। অর্থাৎ জনধন অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার হার মাত্র ৮ শতাংশ। এবার চোখ রাখা যাক বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে। মোদীর নিজের রাজ্য গুজরাতে জনধন অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় হয়েছে ১৭ শতাংশ। উত্তরপ্রদেশেও নিষ্ক্রিয় জনধন ১৭ শতাংশ। একইভাবে উত্তরাখণ্ডে ১৮, ছত্তিশগড়ে ১৩, চণ্ডীগড়ে ২৩, গোয়ায় ৩১, হরিয়ানায় ১৮, কর্ণাটকে ১৪ ও মধ্যপ্রদেশে ১৭ শতাংশ জনধন অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছে। এর অর্থ, শুধু নামেই অ্যাকাউন্ট খুলেছে সরকার। সাধারণ মানুষ তা থেকে পরিষেবা নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেননি, বা লেনদেন করার মতো আর্থিক সামর্থ্য তাঁদের নেই। অর্থাৎ যেটুকু টাকা থাকলে মানুষের ব্যাঙ্কে যাওয়ার ইচ্ছা জাগে, তার ব্যবস্থা করার মুরোদ নেই বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির। এছাড়া ‘জীবিত’ অ্যাকাউন্টগুলির ক্ষেত্রে বিশল্যকরণী হয়ে রয়েছে সরকারি কিছু ভর্তুকির টাকা। কৃষক ভাতা, ১০০ দিনের কাজের টাকা বা রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি বাবদ ১৯ টাকার মতো অঙ্ক… কোটি কোটি অ্যাকাউন্ট এভাবেই টিমটিম করে জ্বলছে। অর্থাৎ, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন ‘জনধন’-এ ঠিক কতটা হচ্ছে, প্রশ্ন তা নিয়েই। একইসঙ্গে পাঁচ বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে ব্যাঙ্কিং জালিয়াতি। তার উল্লেখ অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় ছিল না।

পরিষেবা নিয়েও নরেন্দ্র মোদীর গালভরা বাণী, তাঁর আমলের আগে ব্যাঙ্ক শাখা বা কর্মী—কিছুই ছিল না। সবই করেছেন তিনি। বাস্তব কি তাই? ব্যাঙ্ক অফিসারদের সর্বভারতীয় সংগঠন অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক অফিসার্স কনফেডারেশনের রাজ্য শাখার সম্পাদক সঞ্জয় দাস বলেন, ‘সহজ অঙ্কে বলা যায়, ২০১৪ সালে মোদী সরকার আসার আগে যদি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক শাখাগুলিতে ১০ জন কর্মী কাজ করতেন, এখন তা পাঁচে নেমে এসেছে। অর্থাৎ কর্মী সংখ্যা অর্ধেক। আর ব্যাঙ্ক শাখা? ২০০৮ বিশ্ব মন্দার পর থেকেই ব্যাঙ্কগুলির শাখা কমে গিয়েছে। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরও তার বৃদ্ধির কোনও লক্ষণ নেই। বরং গত কয়েক বছরে ঢালাও ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণের পর তা আরও কমানো হচ্ছে।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen