বাংলার ঐতিহ্যবাহী সিল্কের জিআই স্বীকৃতির আবেদন জানাল রাজ্য
মহানন্দা নদীর পাড়ে ইংলিশবাজারে ব্রিটিশরা নিজেদের উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তুলেছিল। এছাড়াও বহু ইতিহাসবিদের লেখায় মালদহের রেশমের উল্লেখ রয়েছে।
Authored By:

রসগোল্লায় সাফল্য আগেই মিলেছিল। এবার বাংলার সিল্কের জিআই স্বীকৃতির আবেদন জানাল রাজ্য। মালবেরি গোত্রের সেই রেশমের ঐতিহাসিক নাম নিস্তারি। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে এর উল্লেখ রয়েছে। লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংসের আমলে এই রেশম প্রক্রিয়াকরণের ছবি সহ বিবরণ তুলে ধরেছিলেন ড্রাফটসম্যান সীতারাম। বঙ্গদেশের গর্ব এই রেশম এবার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির অপেক্ষায়।
পশ্চিমবঙ্গে চার ধরণের রেশম পাওয়া যায়। সেগুলি হল, মালবেরি, তসর, এরি ও মুগা। মালবেরির একটি ধরন হল নিস্তারি। এই রেশম পাওয়া যায় মূলত মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমে। উন্নত নিস্তারি উৎপন্ন হয় মালদহে। এই কারণে জেলাস্তর থেকে জিআই স্বীকৃতির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর পাশাপাশি, জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরে উৎপন্ন হয় তসর। ঠিক একইভাবে মুগা উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারে হয়।
জিআই আবেদনপত্রে তুলে ধরা হয়েছে, কৌটিল্য অর্থশাস্ত্রে (৩২১খ্রিস্ট পূর্বাব্দ) উল্লিখিত এই রেশমের কথা। তখন মালদহের নাম ছিল পুণ্ডরীকষা। গৌড় নাম হয় তার পরে। আবার ১৮৭৬ সালে প্রকাশিত ডব্লু ডব্লু হান্টারের ‘আ স্ট্যাটিস্টিক্যাল অ্যাকাউন্ট অব বেঙ্গল’-লেখাতেও উল্লেখ রয়েছে, পুরাতন মালদহ হল রেশম উৎপাদনের একটি অন্যতম কেন্দ্র। ফরাসি এবং ওলন্দাজ ব্যবসায়ীদের উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রগুলি সেখানে ছিল। আবার, মহানন্দা নদীর পাড়ে ইংলিশবাজারে ব্রিটিশরা নিজেদের উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তুলেছিল। এছাড়াও বহু ইতিহাসবিদের লেখায় মালদহের রেশমের উল্লেখ রয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জিআইয়ের জন্য আবেদন করতে গেলে কৃষকদের নিয়ে ফার্মার্স প্রোডিউসার্স অর্গানাইজেশন বা এফপিও তৈরি করতে হয়। সেই কাজটা আগেই করে ফেলা হয়েছিল। তারপর রেশম উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াকরণের ধাপগুলির বিস্তারিত বিবরণ বর্ণনা করে জিআই কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, এই বছরই রাজ্যে রেকর্ড দাম উঠেছে রেশমের। সাম্প্রতিককালে এবারই প্রথম রাজ্যের রেশম মণ প্রতি বিক্রি হয়েছে ১৮ থেকে ২১ হাজার টাকায়। সেই দাম মূলত ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে থাকত আগের বছরগুলিতে। রেশমের উৎপাদন বাড়িয়ে এবছর অন্তত দু’হাজার মেট্রিক টনে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে কৃষি দপ্তরের অধীনে থাকা ডিরেক্টরেট অব সেরিকালচার।