কীভাবে বুঝবেন আপনার গ্লুকোমা হয়েছে? 

গাড়ি চালাতে অসুবিধে হয়। লক্ষণ টের পাওয়া যায় না, তাই ধরা পড়তেও দেরি হয়ে যায় অনেকটাই।

September 25, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

রোগীর অজান্তেই তার দৃষ্টির বিস্তৃতি পরিধি থেকে ক্ষয় পেতে পেতে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ে। রোগী হয়তো অনেক দূর অবধি স্পষ্ট দেখছেন, কিন্তু সেটা একটা গোলাকার নলের মধ্য দিয়ে দেখার মতো। আশপাশের জিনিস দেখতে পাওয়া যায় না। গাড়ি চালাতে অসুবিধে হয়। লক্ষণ টের পাওয়া যায় না, তাই ধরা পড়তেও দেরি হয়ে যায় অনেকটাই। 

রোগের কারণ, অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। ক্ষতি হওয়ার কারণ চোখের ভিতরকার ইন্ট্রাঅকিউলার প্রেশার। অক্ষিগোলকের ভিতরে যে তরল থাকে, তার নাম অ্যাকুয়াস হিউমর। এর চাপ নির্দিষ্ট মাত্রা পেরোলে অপটিক নার্ভে চাপ পড়ে দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি হয়। যখন রোগী টের পান, তখন ক্ষতি অনেকখানি হয়ে গিয়েছে। দৃষ্টিশক্তি কমে যায়, রোগী চোখে ঝাপসা দেখেন, তখন বুঝতে হবে কেন্দ্রীয় দৃষ্টিশক্তিরও ক্ষতি হতে শুরু করেছে। 

বিশেষ কোনও গ্লকোমার ক্ষেত্রে চোখের দৃষ্টি খুব ঝাপসা হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখে ব্যথা করা বা লাল হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যায়। চশমার কাছের পাওয়ার খুব কম সময়ের ব্যবধানে বারবার বদলে যাওয়াও গ্লকোমার লক্ষণ হতে পারে। 

অনেক সময়ে দেখা গিয়েছে, যাঁদের চোখে বেশি মাইনাস পাওয়ার, টাইপ টু ডায়াবিটিস আছে, চোখে কোনও চোট বা আঘাত লাগার মতো ঘটনা রয়েছে, থাইরয়েড, মাইগ্রেন, পরিবারে কারও গ্লকোমা ধরা পড়েছে, দেহের ওজন খুব বেশি, বহু দিন ধরে স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ খেতে হলেও এই রোগের আশঙ্কা বেশি।

রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি 

প্রথমে রোগীর চোখের প্রেশার বা আইওপি চেক করা হয়। আইওপি দেখার পর গোনিওস্কোপির মাধ্যমে চোখের ভিতরের কোণ বা অ্যাঙ্গল অফ অ্যান্টেরিয়র চেম্বার পরীক্ষা করা হয়। এর মাধ্যমে গ্লকোমাকে ওপেন অ্যাঙ্গল বা ক্লোজড অ্যাঙ্গল গ্লকোমাতে ভাগ করা হয়। 

ওপেন অ্যাঙ্গল হলে বুঝতে হবে চোখের ভিতরে অ্যাকুয়াস হিউমরের চাপ বেড়েছে, কিন্তু তরল বেরোনোর পথ খোলা আছে। ক্লোজ়ড অ্যাঙ্গলের ক্ষেত্রে এই পথটি বন্ধ হয়ে যায়। চোখে অনেক সময়ে ব্যথা হয়, লাল হয় ও ঘন ঘন চালশের ফলে চশমার পাওয়ার বদলাতে হয়।

অ্যাঙ্গল দেখার পরে চোখের নার্ভের কতটা ক্ষতি হয়েছে, সেটা দেখা হয়। 

অটোমেটেড পেরিমেট্রিতে চোখের কতটা দৃষ্টিক্ষেত্র নষ্ট হয়েছে, তা ধরতে পারা যায়। কখনও পেরিমেট্রিতে ধরা না পড়লে বা নিশ্চয়তার জন্য ওসিটি বা অপটিকাল কোহেরেন্স টোনোগ্রাফি পরীক্ষা করা হয়। অনেক সময়ে কিন্তু আইওপি বা ইন্ট্রাঅকিউলার প্রেশার স্বাভাবিক বা কম থাকা সত্ত্বেও অপটিক নার্ভের ক্ষতি হতে পারে। এ সব ক্ষেত্রে অটোমেটেড পেরিমেট্রি বা ওসিটি না করলে রোগ শনাক্ত করা যায় না।

রোগটি যত আগে ধরা পড়ে, তত দ্রুত ক্ষতি আটকানো সম্ভব। যতটুকু দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়েছে, তা আর ফেরত আসে না, কিন্তু অবশিষ্ট দৃষ্টিশক্তি সুরক্ষিত রাখা যেতে পারে। এই পদ্ধতিতে চিকিৎসক কিন্তু শুধু প্রেসক্রিপশনই দেন, বাকিটা নির্ভর করছে রোগী ও তাঁর পরিবারের সতর্কতার উপরে। 

নিয়ম মেনে ওষুধ প্রয়োগ করে চলার সঙ্গে-সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে চোখ পরীক্ষা করিয়ে যেতে হবে। তবেই প্রতিরোধ করা সম্ভব গ্লকোমা জনিত দৃষ্টিহীনতা।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen