বিদেশে যাচ্ছে বাংলার তাঁতের শাড়ি, সৌজন্যে তন্তুজ

বিদেশিদের কাছে কদর বাড়ছে বাংলার তাঁতের শাড়ির। তাই চাহিদা অনুযায়ী জোগান দেওয়ার পদক্ষেপে সুদিন ফিরছে বংলার তাঁতশিল্পীদের।

December 10, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

তন্তুজের হাত ধরে লক্ষাধিক টাকা মূল্যের বাংলার তাঁতের শাড়ি এবার বিদেশেও পাড়ি দিচ্ছে। করোনাকালে স্কচ প্ল্যাটিনাম অ্যাওয়ার্ড পেয়ে দ্বিগুণ উৎসাহী বাংলার এই সরকারি সংস্থা। বিদেশিদের কাছে কদর বাড়ছে বাংলার তাঁতের শাড়ির। তাই চাহিদা অনুযায়ী জোগান দেওয়ার পদক্ষেপে সুদিন ফিরছে বংলার তাঁতশিল্পীদের। তাঁদের হাতে তৈরি পঞ্চাশ হাজার থেকে দেড় লাখি শাড়ি ই-কমার্সের মাধ্যমে হংকং, কানাডার মতো দেশে পাড়ি দিচ্ছে।

এ ব্যাপারে ক্ষুদ্র, কুটির ও বস্ত্র দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, বাম আমলে তন্তুজ ধুঁকছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) উদ্যোগে তন্তুজ লাভের মুখ দেখেছে। এবার বাংলার তাঁতশিল্পীদের হাতে তৈরি বালুচরি থেকে বিভিন্ন দামি শাড়ি বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে। তন্তুজ ই-কমার্সেও ভালো ব্যবসা করছে। করোনাকালে অবদানের জন্য গত সপ্তাহেই বাংলার তন্তুজ স্কচ প্ল্যাটিনাম অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। বাংলায় তাঁতশিল্পের একটা জোয়ার আসছে। করোনাকালেও প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে তন্তজের হাত ধরেই।

সারা বাংলাজুড়ে তাঁতশিল্পীদের হাতে এখন তৈরি হচ্ছে দামি শাড়ি। যার এক-একটির দাম এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা। কাটোয়ার ঘোড়ানাশ, মুস্থলি গ্রামে আবার আড়াই লক্ষ টাকা দামের শাড়িও তৈরি হচ্ছে। বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর এলাকায় তাঁতশিল্পীরা বালুচরি শাড়ি তৈরি করেন। সেইসব এক্সক্লুসিভ শাড়ি রাজ্যজুড়ে তাঁতশিল্পীদের কাছ থেকে সরাসরি কিনছে তন্তুজ। তা ই-কমার্সের মাধ্যেমে কানাডা, সিঙ্গাপুর, হংকং প্রভৃতি দেশে পাড়ি দিচ্ছে।

তন্তুজ সূত্রে জানা গিয়েছে, লকডাউনের (Lockdown) সময় তন্তুজ প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার ব্যবসা করেছে। গতবছর অনলাইনের মাধ্যমে প্রায় এক কোটি ৪০ লক্ষ টাকার বেশি তাঁতের শাড়ি বিক্রি করেছে। করোনাকালে তন্তুজ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরকে মাস্ক, পিপিই কিট সরবরাহ করেছে। এরমধ্যে তিন কোটি মাস্ক, ২৫ লক্ষ পিপিই কিট, আরও তিন লক্ষ এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ করেছে। এইসব সামগ্রী বাংলার তাঁতশিল্পীরা নিজের হাতে তৈরি করেছেন। এরজন্য প্রায় ৪০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। যেখানে লকডাউনে একের পর এক কলকারখানা বন্ধ হয়েছে। অনেক মানুষ ভিন রাজ্য থেকে কাজ হারিয়ে রাজ্যে ফিরেছেন। সেখানে বাংলার এই কর্মসংস্থান সদর্থক ভূমিকা পালন করেছে। আর এসব হয়েছে ক্ষুদ্র কুটির ও শিল্প দপ্তরের সহযোগিতায়। তাই করোনাকালে এই অবদানের জন্যই তন্তুজ এই সেরার শিরোপা পেয়েছে।

রাজ্যের তন্তুজের ডিরেক্টর রবিন রায় বলেন, আমরা এক্সক্লুসিভ বালুচরি শাড়ি (Baluchari) যেমন ই-কমার্সের মাধ্যমে বিদেশে পাঠাচ্ছি, তেমনই বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের শিল্পীদের হাতের তৈরি তাঁতের শাড়িও রপ্তানি করছি। আমরা এই ই-কমার্স প্রক্রিয়া ২০১৬ সাল থেকে শুরু করেছি। এখন বিদেশের মাটিতে বাংলার এই শাড়ির চাহিদাও বাড়ছে। কাটোয়ার ঘোড়ানাশ গ্রামের শিল্পীরা তাঁদের হাতের তৈরি দামি শাড়ি বিদেশে পাঠানোর জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার ব্যবস্থা করব। স্বপনবাবু আরও বলেন, তাঁতশিল্পের জন্য রাজ্য সরকারের কিছু বিপণন সংস্থা আছে। সেগুলি হল তন্তুজ, মঞ্জুষা, বঙ্গশ্রী, রিফিউজি হ্যান্ডিক্রাফ্ট, রেশম শিল্পী সমবায়। বাম আমলে তন্তুজ লোকসানে চলছিল। বর্তমানে ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরে তন্তুজ লাভ করেছে ১৪ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা। বস্ত্রদপ্তরের অধীনে থাকা মঞ্জুষা ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরে লাভ করেছে ১০ কোটি টাকা। ৩৪ বছরে সিপিএম আমলে তন্তুজের যেখানে সারা বছরে আর্থিক ক্যাপিটাল ছিল মাত্র ৫৫ কোটি টাকা। এখন সেই আর্থিক ক্যাপিটাল ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫৫ কোটি টাকা।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen