তালিবানের উত্থানে উজ্জীবিত আল কায়দা, কাশ্মীরকে ‘আজাদ’ করার ডাক জঙ্গি সংগঠনের

বর্তমানে আফগানিস্তানে শাসক তালিবানের সবথেকে বড় প্রতিপক্ষ আইএসকে।

September 2, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

আফগানিস্তান দখল সম্পূর্ণ। এবার কাশ্মীরকে ‘আজাদ’ করা হোক। ডাক দিল আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদা। ৩১ আগস্ট ছিল আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনীর ফিরে যাওয়ার ডেডলাইন। সেই সময়সীমা পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০ বছর পর পাঠানভূমি ত্যাগ করে আমেরিকা। তারপরই তালিবান যেমন উল্লসিত হয়ে ‘স্বাধীনতার যুদ্ধে’ আমেরিকাকে হারানোর কথা ঘোষণা করেছে, তেমনই একটি বিস্তারিত বিবৃতি দিয়েছে আল কায়েদা। সেখানে এই আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন সাফ জানিয়েছে, ‘আফগানিস্তানকে পশ্চিমী শক্তির থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পূর্ণ স্বাধীনতার পথে নিয়ে আসার জন্য তালিবানকে অভিনন্দন। এবার লক্ষ্য ইয়েমেন, সোমালিয়া, প্যালেস্টাইন এবং কাশ্মীরের স্বাধীনতা।’ তাতেই তীব্র হচ্ছে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে জঙ্গি-জোটের জল্পনা।আল কায়েদার সঙ্গে পাকিস্তানের দুই জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তোইবা এবং জয়েশ-ই-মহম্মদ সুপ্রিমো হাফিজ সইদ এবং মাসুদ আজহারের দীর্ঘকালের সুসম্পর্ক। আল কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে পাকিস্তানের অ্যাবটাবাদে নিরাপদে লুকিয়ে রাখার নেপথ্য কারিগরও লস্কর এবং জয়েশ। পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সে কাজ করেছিল তারা। আবার তালিবানের সঙ্গেও দুই জঙ্গি সংগঠনের যোগ রয়েছে। অস্ত্র এবং অন্যান্য নানাভাবে তারা সাহায্য করেছে তালিব যোদ্ধাদের।

এমনকী সূত্রের খবর, কাবুল দখলের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তালিবানের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে দেখা করে মাসুদ আজহার এবং তার ভাই। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা জানতে পারছে, ওই সাক্ষাতের পিছনেও মধ্য‌স্থতাকারী ছিল আইএসআই। সেই বৈঠকেই স্থির হয়েছে এবারের টার্গেট—কাশ্মীরকে অস্থির করা।  আল কায়েদা বিবৃতিতে আরও বলেছে, ‘আমরা সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ। কারণ তাঁর প্রদান করা শক্তিতেই আমেরিকার মতো ইসলামের শত্রুর মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া গিয়েছে। দুই শতাব্দীর মধ্যে এই নিয়ে তৃতীয়বার পশ্চিমী আগ্রাসনকারীকে পরাস্ত ও বহিষ্কার করতে সক্ষম হল আফগানিস্তান। আফগানিস্তান চিরকাল এরকমই বিপুল শক্তিধর এক রাষ্ট্র। তালিবানের বিজয় থেকে স্পষ্ট যে, জিহাদের পথই সাফল্যের রাস্তা।’ তালিবান শাসকগোষ্ঠীকে তো বটেই, অন্য সংগঠনগুলিকেও আমেরিকা এবং আমেরিকার বন্ধুরাষ্ট্রগুলির বিরুদ্ধে একজোট হয়ে জিহাদকে সফল করার আহ্বান জানিয়েছে আল কায়েদা।

মাসুদ-তালিবান বৈঠকের সময় পর্যন্ত  লস্কর, জয়েশের সঙ্গে ছিল আইএসের একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী। এবার আল কায়েদার মতো বৃহৎ এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন সবাইকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সেই সঙ্গে তারা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে চারটি লড়াইয়ের কেন্দ্রকে। বস্তুত স্পষ্টভাবে কাশ্মীর, ইয়েমেন, প্যালেস্টা‌ইন এবং সোমালিয়াকে একই পংক্তিতে বসিয়ে এশিয়া ও আফ্রিকায় যুগ্ম সন্ত্রাসের আশঙ্কা তৈরি করেছে আল কায়েদা। তাই শুধু ভারতে নয়, আন্তর্জাতিক মহলে রীতিমতো উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দোহায় আমেরিকার সঙ্গে বৈঠকে তালিবানকে বলা হয়েছিল, সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। কিন্তু সম্প্রতি রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ রিপোর্টে স্পষ্ট, তালিব ও আল কায়েদার সম্পর্ক মোটেই ছিন্ন হয়নি। ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসের উত্থানের পর আল কায়েদার সঙ্গে তাদের বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছিল। সেই ক্ষমতার লড়াইতে তালিবান ছিল আল কায়েদার পক্ষে। বর্তমানে আফগানিস্তানে শাসক তালিবানের সবথেকে বড় প্রতিপক্ষ আইএসকে। কাবুল এয়ারপোর্টে আত্মঘাতী হামলা তারাই ঘটিয়েছে। তাই আল কায়েদার সঙ্গে আরও জোটবদ্ধ হওয়ার আভাস দিয়েছে তালিবান। যা ভারতের জন্য সত্যিই চরম উদ্বেগের! 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen