ষষ্ঠীকে হার মানাচ্ছে সপ্তমীর ভিড়! কলকাতার সর্বত্র যেন কার্নিভাল চত্বরে পরিণত হয়েছে

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২৩.২০: ষষ্ঠীকে হার মানাচ্ছে সপ্তমীর ভিড়। মহালয়ার বিকেল থেকেই রাস্তায় রাস্তায় মানুষের ভিড় বাড়তে শুরু করে। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। অনেক প্যান্ডেল উদ্বোধনের আগেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছেন দর্শনার্থীরা। পুজোর দিনগুলিতে ছবিটা আরও বিশাল। শ্রীভূমি থেকে শুরু করে ত্রিধারা, চেতলা- শহরের নামী পুজোগুলি দর্শন করতে ঢল নেমেছে। এরফলে তৈরি হচ্ছে যানজটের সমস্যা।
সোমবার, সপ্তমীর বিকেল থেকেই যানজট দেখা যায় এমজি রোডে। ধীর গতিতে এগোচ্ছে সব গাড়ি। দীর্ঘ সময় জ্যামে আটকে এগিয়ে যাওয়ার অপেক্ষা করতে হচ্ছে সকলকে। হাসছেন ফুচকাওয়ালা। বিক্রি ভালো বলে খেলনাওয়ালাও খুশি। ঠাকুর দেখার সঙ্গে মণ্ডপের বাইরের রাস্তায় দিনভর টুকটাক কেনাকাটা। একটা কানের দুল। কিংবা গলার হার। একটা ব্যাগ। হয়তো খুব একটা প্রয়োজনীয় কিছু নয়। তবু ‘খুব পছন্দ হয়েছে তো’ বয়ফ্রেন্ডকে বললেন লেকটাউনের তরুণী। এক মণ্ডপ থেকে আর এক মণ্ডপে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ হাতে তুলে নেওয়া ভেঁপু। রাতভর প্যাঁ পোঁ। ঠাকুর দেখা, খাওয়াদাওয়া, সিনেমা দেখা-সবমিলিয়ে সপ্তমীতে শহরের পুজো প্যান্ডেল জমজমাট।
উত্তর থেকে দক্ষিণ, সব প্রান্তেই একই অবস্থা। এবারে দক্ষিণের অন্যতম জনপ্রিয় পুজো হাজরা পার্ক তিন তলা সমান উচ্চতার প্রতিমা তৈরি করেছে, যা দর্শনার্থীদের মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার, যে পুজোকে কেন্দ্র করে বিতর্ক হয়, তাদের এবারের থিম ‘অপারেশন সিঁদুর’। বহু মানুষ সকাল থেকেই লাইন দিয়ে মণ্ডপ ও প্রতিমা দর্শন করছেন। কাশী বোস লেন, চেতলা অগ্রণী- তালিকায় রয়েছে আরও অনেক পুজো।
রাত যত বেড়েছে, পুজোর আমেজে ততই বেশি রং ধরেছে। তেলেঙ্গাবাগান, গৌরীবাড়ি, করবাগান, উল্টোডাঙা সংগ্রামী, কাঁকুড়গাছি যুবকবৃন্দের পুজোতে ঠাসা ভিড়। অনেকেরই বক্তব্য, ‘হাতিবাগানে কলকাতার ঘাটের ইতিহাসের প্যান্ডেল জাস্ট অনবদ্য। আর কাশী বোস লেনের লীলা মজুমদার থিমও ফাটাফাটি। বাচ্চারা আনন্দ পাচ্ছে খুব।’ বাগবাজার সর্বজনীনে এসে গড়িয়ার সঞ্চিতা, রূপসা, মনোজিৎ, সুখেন্দুরা বলেন, ‘উত্তরের সাবেকি পুজো নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে গত কয়েক বছর ধরে।’ হাতিবাগান সর্বজনীনের পুজোকর্তা শাশ্বত বসু বলেন, ‘থিমের বিভিন্নতা উত্তরে নতুন ট্রেন্ড সেট করেছে। পুজো তো সবে শুরু। এখনও গোটা সিনেমা বাকি। ভিড় আরও বাড়বে।’ সোনারপুর থেকে টালা প্রত্যয়ে এসেছিলেন কলেজ ছাত্রী মাম্পি, স্বর্ণালীরা। বললেন, ‘এরপর বাগবাজার, তারপর হাতিবাগান, শেষে লেবুতলা পার্ক দেখে ভোরে বাড়ি ফিরব।’
প্যান্ডেলের গান-পুলিশের ঘোষণা-মানুষের কথা-ভেঁপুর শব্দ, ওয়াকিং সিটি রাতভর মুখর। নিরাপত্তার কড়াকড়ি রাস্তায় রাস্তায়। ‘ডান দিক দিয়ে যান,’ ‘বাঁদিক ধরে এগন’-পুলিশের লাগাতার ঘোষণা। সব কিছু নিয়ে গোটা কলকাতা কার্নিভাল চত্বরে পরিণত। শারদোৎসবের এখনও তিনদিন বাকি। এরমধ্যে অষ্টমী ও নবমীতেও বহু মানুষ রাস্তায় বেরোবে। ভিড় নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হতে পুলিশকে। এক একটা দিন টেক্কা দিচ্ছে তার আগের দিনটিকে। ঠিক যেমন, ষষ্ঠী টেক্কা দিয়েছিল পঞ্চমীকে এবং আজ, সপ্তমী টেক্কা দিল সেই ষষ্ঠীকে।