ভুল তথ্যের তদন্ত করাবে কমিশনই
ভোটের খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা করার জন্য কয়েক দিন আগে বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা।
আদালতের দরজা তো খোলা আছেই। তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে তদন্তও। ভুয়ো হলফনামা ঠেকাতে এমনই পদক্ষেপ করছে নির্বাচন কমিশন।
ভোটের খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা করার জন্য কয়েক দিন আগে বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা। ছিলেন দুই কমিশনার অশোক লাভাসা ও সুশীল চন্দ্র এবং অন্য পদস্থ আধিকারিকেরা। বৈঠকে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ভুয়ো হলফনামার অভিযোগ নিয়ে সবিস্তার আলোচনা হয়। স্থির হয়, ভুয়ো হলফনামা নিয়ে অভিযোগ এলে কমিশন তা খতিয়ে দেখবে এবং সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি পাঠানো হবে। ভুয়ো হলফনামার অভিযোগকে যে প্রার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ ‘ভ্রান্তি’ হিসেবেই দেখা হবে, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছে কমিশন। কিছু প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভুয়ো হলফনামা জমা দেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে কমিশনের কাছে জমা পড়ছিল। তার প্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
ভোটে প্রার্থীরা মনোনয়নের সঙ্গে হলফনামা জমা দেন। সম্পত্তি, শিক্ষাগত যোগ্যতা, ফৌজদারি মামলা সংক্রান্ত তথ্য দিতে হয় হলফনামায়। প্রার্থীর হলফনামায় ভুল তথ্য আছে বলে অভিযোগ তুললে দাবির সমর্থনে অভিযোগকারীকে হলফনামা দিতে হয়। দু’টি হলফনামাই জনসমক্ষে হাজির করেন রিটার্নিং অফিসার। কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রার্থীদের হলফনামা দেওয়া থাকে। রিটার্নিং অফিসারের দফতরেও তা টাঙানো হয়। প্রার্থীর ক্ষেত্রে অভিযোগ থাকলে সেখানে অভিযোগকারীর হলফনামাও দেওয়া থাকে। অভিযোগ নিয়ে আলাদা ভাবে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ার নেই রিটার্নিং অফিসারের। তবে প্রার্থীর বিরুদ্ধে হলফনামায় ভুল তথ্য দেওয়ার অভিযোগে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন অভিযোগকারী। এত দিন আদালতেই বিষয়টির মীমাংসা হত। এ বার কমিশন নিজেরা এই বিষয়ে পদক্ষেপ করবে। তবে আদালতের দরজা বন্ধ হবে না।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা খড়্গপুরের প্রাক্তন বিধায়ক দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা ‘ভুল’ দেওয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছিল। শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে হলফনামায় ভুল তথ্য দেওয়ায় ২০১৬ সালের অক্টোবরের শেষে মণিপুরের মৈরাংয়ের কংগ্রেস বিধায়ক এম পৃথ্বীরাজ সিংহের বিধায়ক পদ বাতিল করে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। ছত্তীসগঢ়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত অজিত জোগীর ছেলে অমিতের বিরুদ্ধে নির্বাচনী হলফনামায় ভুয়ো তথ্য দেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন বিজেপির সমীরা পাকিরা। পুলিশেও অভিযোগ করেন তিনি। তার ভিত্তিতে অমিতকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।
কয়েক দিন আগেকার বৈঠকের সুর বলছে, ভুয়ো হলফনামা নিয়ে শুধু অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে নয়, নিজেরাও পদক্ষেপ করতে চায় কমিশন। তবে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ কে হবেন কিংবা অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে শাস্তি কী হবে, অভিযোগ মিথ্যা হলে অভিযোগকারীরই বা কী শাস্তি হবে, সেই বিষয়ে এখনও কিছু ঘোষণা করেননি কমিশন-কর্তারা। কিছু দিনের মধ্যেই তা প্রকাশ্যে আসবে বলে কমিশন সূত্রের দাবি।
স্বাস্থ্যকর গণতন্ত্রের ভিতে নাগরিক ভোটারেরা যথেষ্ট সচেতন থাকবেন, এমনটাই পর্যবেক্ষণ শীর্ষ আদালতের। সেই সূত্রে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নীতিনিষ্ঠ নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর কমিশন। তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই হলফনামা নিয়ে নতুন পথে হাঁটছে তারা।