বিভাজন নয়, ঐক্য চায় বাংলা: অমর্ত্য সেন

তাঁর মতে, যাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে প্রশ্ন আছে তাদের হাতে বাংলা পরিচালনার ভার তুলে দিলে সেটা বাংলাকে ‘জাতীয় অবক্ষয়ের’ পথেই এগিয়ে নিয়ে যাবে। যারা ‘গুরুতর ত্রুটিযুক্ত’ তাদের হাতেই ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হবে। নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন-এর এটাই মত।

April 20, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

“বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়”, এই স্লোগানের কাছাকাছি গিয়ে রাজ্যের শাসন ক্ষমতা স্থানীয় নেতাদের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় নেতাদের হাতে তুলে দেওয়ার বিরোধিতা করলেন নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন (Amartya Sen)। একটি জাতীয় সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষ্যাৎকারে এমন কথাই বলেছেন তিনি। তাঁর মতে, যাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে প্রশ্ন আছে তাদের হাতে বাংলা পরিচালনার ভার তুলে দিলে সেটা বাংলাকে ‘জাতীয় অবক্ষয়ের’ পথেই এগিয়ে নিয়ে যাবে। যারা ‘গুরুতর ত্রুটিযুক্ত’ তাদের হাতেই ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হবে। নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন-এর এটাই মত।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) সরকারের কল্যাণমূলক কর্মসূচির প্রশংসা করেন অমর্ত্য সেন। তাঁর মতে বিশেষত মেয়েদের জন্য গৃহীত পরিকল্পনা, গ্রামীণ পরিকাঠামোর উপকারী সম্প্রসারণ এবং খাদ্য সুরক্ষার আশ্বাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ । তবে খ্যাতিমান এই অর্থনীতিবিদ রাজ্যের দুর্নীতির বিষয়গুলিকে সমাধান করতে হবে বলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে সজাগ করতে চেয়েছেন।

অমর্ত্য সেন তাঁর বক্তব্যে যে বিষয়টি তুলে ধরেন সেটা হচ্ছে বাংলায় সম্প্রদায়গত পরিচয়ের রাজনীতি চলে না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুভাষ বসু সারাজীবন কুৎসিত এই রাজনীতির বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে লড়াই করে গেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কেউই সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে মাথা উঁচু করতে দেননি। উল্টে এই নিয়ে যারা রাজনীতি করেছেন তাঁরা হিন্দুত্বের পতাকাবাহক হলেও তাঁদের দোষ দিয়েছেন। শান্তিপূর্ণভাবে সমাজকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তাঁরা কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন।

অমর্ত্য সেন এই সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “যদি বাংলা স্থানীয় নেতাদের দ্বারা পরিচালিত না হয়ে, কেন্দ্রীয় শাসকদের দ্বারা পরিচালিত হয়ে যায়, তবে সেটা তাদের হাতে ভারতের ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণকে ব্যাপকভাবে শক্তিশালী করবে। এই কেন্দ্রীয় শাসকদের সংখ্যালঘু অধিকার সম্পর্কে ধারণা অত্যন্ত সীমিত এবং অর্থনৈতিক নীতি ও সামাজিক ন্যায়বিচারের নিরিখে এরা মারাত্মকভাবে ত্রুটিযুক্ত বলে আমার মনে হচ্ছে ।”

বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে কিনা তা জানতে চাইলে অমর্ত্য সেন বলেন, “বাংলাকে সেই জাতীয় অবক্ষয়ের দলে পরিণত হতে দেওয়া উচিত নয়।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “বাংলা বিভাজন নয়, ঐক্য চায়।”

এর পর তিনি বলেন, “১৯৪৬ সালের পর থেকে বাংলায় সাম্প্রদায়িক বিভাজনের আগুনকে উসকানি দিতে তেমন জোরালোভাবে দেখা যায়নি।” নরেন্দ্র মোদী সরকারের তীব্র সমালোচক এই নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ বলেন , “১৯৪০ এর দশকে মহাত্মা গান্ধী বাংলায় সম্প্রীতি বজায় রাখতে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে যে ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন, দুর্ভাগ্যক্রমে এই নির্বাচনে সেই শক্তিই আবার উৎসাহী হয়েছে।”

বাংলা ঐক্য চায় , বিভাজন নয় – গান্ধীজীর এটাই মত । এই প্রসঙ্গে তৃণমূল রাজ্যে নির্বাচনের শুরু থেকেই ‘অভ্যন্তরীণ-বহিরাগত’ বিতর্ককে যে খানে নিয়ে গেছে অমর্ত্য সেন সেই বিষয়টিকে “অবশ্যই একটি খারাপ বিষয় “,বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ, বাঙালি ঐতিহাসিকভাবে বহিরাগতদের প্রতি সহনশীল ছিল।

মুম্বইয়ের মতো বাংলায় তামিল বা মালয়ালিরা আসার ফলে তাদের বিরুদ্ধে কখনও আন্দোলন হয়নি। ‘বহিরাগত’, বিরোধিতা সব সময়ের জন্য একটি দুর্ভাগ্যজনক বিষয় এবং অবশ্যই একটি খারাপ জিনিস।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen