বাঙালির হেঁসেলের বিবর্তন

হেঁসেল নিয়ে বরাবরই গর্বিত বাঙালি। চৈনিকদের বিশ্বাস রান্নাঘরে নাকি অনেক দেবতা বাস করেন যারা বছর ভর নজর রাখেন গৃহ কর্ত্রী কেমন কাজ করছে। তারপর নাকি বছর শেষে স্বর্গে গিয়ে সেই রিপোর্ট পেশ করে। নিউইয়ার ইভে নাকি চীনারা সেই প্রার্থনাই করে যাতে ভালো রিপোর্ট পেশ হয়।

April 24, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

হেঁসেল নিয়ে বরাবরই গর্বিত বাঙালি। চৈনিকদের বিশ্বাস রান্নাঘরে নাকি অনেক দেবতা বাস করেন যারা বছর ভর নজর রাখেন গৃহ কর্ত্রী কেমন কাজ করছে। তারপর নাকি বছর শেষে স্বর্গে গিয়ে সেই রিপোর্ট পেশ করে। নিউইয়ার ইভে নাকি চীনারা সেই প্রার্থনাই করে যাতে ভালো রিপোর্ট পেশ হয়।

বাঙালিদের যদিও এমন কোন দেবতার কথা শোনা যায় না। কিন্তু বাঙালি নারীরা ‘মনের রাস্তা পেট হয়ে’ এই প্রবাদে বিশ্বাসী। তাই জীবনের এক তৃতীয়াংশ সময় তারা সপে দেন হেঁসেলেই।

আজকের মডিউলার কিচেনের যুগে বসে আগেকার রান্নাঘর কেমন ছিল সেটা ভাবা নিতান্তই শক্ত। আজকের দিনে মধ্যবিত্ত বাড়িতে মডিউলার কিচেনের রান্নাগর ৬০ বর্গফুটের বড় হয় না। তার মধ্যেই অলৌকিক কৌশলে নির্মাতারা প্রায় স্বর্গীয় মডিউলার কিচেন তৈরি করেন। যা আগে ছিল নরক। কিন্তু সেই নরকে বসেই খড়ীর ধোয়ায় একের পর এক জীভে জল আনা পদের স্বাদ পেয়েছে বাঙালি।

মানুষের বাড়ি বানিয়ে বসবাসের সময় কাল থেকে আজ অবধি সব থেকে বেশি যে ঘরটির বিবর্তন হয়েছে তা হল রান্নাঘর। বিগত ১০০ বছরেই গোটা বিশ্বে রান্না ঘরের আমুল পরিবর্তন হয়েছে।

প্রথমে উনুন হতো ঘরের মধ্যিখানে। তখনও পিড়ি বা জলচৌকির কোন ব্যবস্থা ছিল না। খড়ীর আঁচে ধোয়ায় ভর্তি থাকতো রান্নাঘর। অনেকে রান্নাঘরকে বলতেন ‘গ্যাস চেম্বার’। তারপর এলো টিনের চিমনী। সরু পাইপ দিয়ে ধোয়াকে বাইরে বের করে দেওয়া। চিমনী আসার সাথে সাথেই স্থান পরিবর্তন করল উনুন। ঘরের মাঝখান থেকে সরে গিয়ে দেওয়াল ঘেষে। স্থায়ী উনুনের পরিবর্তে টিনের বালতি কেটে তৈরি হল উনুন। এই উনুন ধরানো হতো এক জায়গায়। ধোয়া শেষ হলে তুলে আনা হতো রান্না ঘরে। তাই একে বলা হতো ‘তোলা উনুন’।

রান্নায় লাগে জল। বাইরে থেকে জল তুলে এনে সেই জল দিয়ে রান্না হতো। সেই জল থাকতো মাটির কাছাকাছি। পাইপ লাইন না আসা অবধি এই ব্যবস্থার কোন পরিবর্তন হল না। এই অবস্থায় সবাই মাটিতে বসেই রান্নার করতো।

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর পাইপ লাইনের সাথে সাথে এলো রান্নার গ্যাসও। এতেই রাঁধুনিরা দাঁড়িয়ে রান্না শুরু করলেন। বঁটি হয়ে গেল ব্রাত্য। তার জায়গা নিল নানা ধরনের ছুড়ি। শিল নোড়ার জায়গা নিল মিক্সার গ্রাইন্ডার। এরপর এলো রেফ্রিজারেটর, কিচেন ক্যাবিনেট। ছোট জায়গায় সব কিছু রাখার জন্যে রান্না ঘরের মাপও হল ছোট।

আগুন ব্যবহৃত হতো বলে প্রথমে রান্নাঘর ছিল মূল বাড়ি থেকে আলাদা। কিন্তু আকারে ছোট হয়ে যাওয়ায় তা চলে এলো মূল বাড়িতেই। গৃহকর্ত্রী রান্না করতে করতেই যাতে অতিথির সাথে কথা বলে তাই এলো ‘ওপেন কিচেন’। 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen