পরিযায়ীদের ঘরে ফেরান পনেরো দিনে

প্রতিটি রাজ্যকে জানাতে হবে কোন রাজ্য থেকে কত লোক ফিরে এলেন এবং তাঁরা রাজ্যের কোন জেলায়, কোন গ্রামে রয়েছেন। এঁদের প্রত্যেকের রোজগারের ব্যবস্থা করতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারকে৷ বিচারপতি অশোক ভূষণ

June 6, 2020 | 3 min read
Published by: Drishti Bhongi

ভিন রাজ্যে আটকে থাকা বাকি পরিযায়ী শ্রমিকদের আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ঘরে ফেরাতে একটি সুসংহত ব্যবস্থা চাইছে সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, শ্রমিকদের শুধু নিজভূমে ফেরালেই হবে না, তাঁদের রোজগারের ব্যবস্থাও করতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারকে।তবে শুক্রবার আদালত এ নিয়েবিশদে কোনও রায় দেয়নি। রায়দান আগামী মঙ্গলবার।

লকডাউনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আটকে পড়েন পরিযায়ী শ্রমিকরা। কাজের ক্ষেত্রগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁদের রোজগারে টান পড়ে। যে যাঁর রাজ্যে ফিরতে শ্রমিকরা একসময়ে মরিয়া হয়ে ওঠেন। হাইওয়ে বা রেললাইন ধরে কাতারে কাতারে শ্রমিকদের হাঁটা থেকে শুরু করে ঔরঙ্গাবাদের কাছে মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনা— পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্কট এক সময়ে গভীরতর আকার নিয়েছিল। অতঃপর ট্রেনের ব্যবস্থা করে তাঁদের সংশ্লিষ্ট রাজ্যে ফেরানোর উদ্যোগ শুরু হয়।

এই অবস্থায় তাঁদের সমস্যার সমাধানে একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার সেই মামলার শুনানিতে কেন্দ্রীয় সরকার আদালতে জানিয়েছে, ইতিমধ্যে ১ কোটি পরিযায়ী শ্রমিককে ট্রেনে-বাসে ঘরে ফেরানো হয়েছে। এর পরেই বিচারপতি অশোক ভূষণের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, ঘরে ফিরতে আগ্রহী বাকি শ্রমিকদেরও ১৫ দিনের মধ্যে ফেরানোর ব্যবস্থাকরতে হবে৷

মামলায় কেন্দ্রের সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্য সরকারও তাদের বক্তব্য আদালতে পেশ করে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার জানায়, ৮ লক্ষের বেশি পরিযায়ী শ্রমিক ইতিমধ্যেই বাংলায় নিজেদের বাড়িতে ফিরেছেন। আরও ৬ লক্ষ ৮২হাজার শ্রমিক ফিরতে চেয়ে নাম নথিভুক্ত করেছেন।

শুনানির শুরুতেই ঘরে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের কর্মসংস্থান এবং রোজগারের উপরে জোর দেয় শীর্ষ আদালত৷ কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলিকে উদ্দেশ করে বিচারপতি অশোক ভূষণ বলেন, ‘প্রতিটি রাজ্যকে জানাতে হবে কোন রাজ্য থেকে কত লোক ফিরে এলেন এবং তাঁরা রাজ্যের কোন জেলায়, কোন গ্রামে রয়েছেন। এঁদের প্রত্যেকের রোজগারের ব্যবস্থা করতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারকে৷ এর জন্য প্রতিটি রাজ্যকে জেলা ও ব্লকস্তরে পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম নথিভুক্ত করতে হবে। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মধ্যে দিয়ে তাঁদের রোজগারের ব্যবস্থা করতে হবে৷ নাম নথিভুক্ত করা জরুরি৷ আমাদের দেখতে হবে, কোন রাজ্য কী কী পরিকল্পনা গ্রহণ করে৷’

স্পেশাল ট্রেনে ফেরার পথে খাবার ও জল না-পেয়ে ৮০ জন শ্রমিকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। শুক্রবার শুনানিতে সেই অভিযোগ খারিজ করেছেন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি, সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা৷ ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে আয়োজিত শুনানিতে তুষার বলেন, ‘যে শ্রমিকরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের আগে থেকে বিভিন্ন রোগ ছিল৷ অনেকে হার্টের রোগে ভুগছিলেন, কারও ডায়াবিটিস ছিল৷ শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে সফর করার সময়ে প্রত্যেক পরিযায়ী শ্রমিককে খাবার ও জল সরবরাহ করা হয়েছে৷ প্রয়োজনে আমরা হলফনামা দিতেওরাজি আছি৷’

পরিযায়ী শ্রমিকদের আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ঘরে ফেরাতে একটি সুসংহত ব্যবস্থা চাইছে সুপ্রিম কোর্ট।

তুষারের আরও দাবি, ‘৯০ শতাংশ পরিযায়ী শ্রমিককে ইতিমধ্যেই তাঁদের ঘরে ফেরানো হয়ে গিয়েছে৷ ৩ জুন পর্যন্ত রেলমন্ত্রক ৪,২২৮টি শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন চালিয়েছে। সঙ্গে ছিল বাসও৷ যাঁরা বাকি রয়েছেন, তাঁদেরও দু’সপ্তাহের মধ্যে ফেরানো হবে৷’ কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়, আটকে থাকা শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে আরও ১৭১টি ট্রেন চেয়েছে বিভিন্ন রাজ্য৷ তুষারের আশ্বাস, ‘এমন ঘটনাও ঘটছে, যেখানে অনেক শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন খালি থাকছে৷ এর অর্থ, অনেক জায়গায় পরিযায়ী শ্রমিকরা স্থানীয় কাজে যোগ দিয়েছেন৷ তবে রাজ্যগুলি শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের জন্য আবেদন করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার ব্যবস্থা করা হবে।’

শুনানিতে বক্তব্য রাখার চেষ্টা করেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের আইনজীবী জয়দীপ গুপ্ত৷ কিন্তু বিচারপতি সঞ্জয়কিষেণ কওলের যুক্তি, ‘উনি সংসদের সম্মানীয় সদস্য৷ যদি ওঁকে আবেদনকারী হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়, তা হলে অন্যরাও সেই সুযোগ চাইবেন৷ এখানে শুধুমাত্র রাজ্যগুলি ও কেন্দ্রের অভিমত শোনা হচ্ছে৷ আমরা এই শুনানিকে উৎসবে পরিণত করতে চাই না৷’

এ দিনই জাতীয় মানবাধিকার কমিশন পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে একটি আবেদন জমা দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালতে। কমিশনের দাবি, পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা মেটাতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ করতে হবে। ঘরে ফেরার পথে যে সব শ্রমিক মারা গিয়েছেন, তাঁদের পরিবারকে উপযুক্ত দিতে হবে বলেও আবেদনে জানিয়েছে কমিশন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen