India vs England, 2nd Test: এজবাস্টনে জয়ের কৃতিত্ব যতটা না শুভমন গিলের, ততটাই বাংলার আকাশের

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ০৯:২৫: এজবাস্টনে নতুন ইতিহাস ‘নতুন ভারতে’র। শুভমান গিলের ( Shubman Gill) দল প্রমাণ করল ভারতের জয়যাত্রা চলছে, চলবে। মহাতারকারা অবসরে যাক, প্রথম টেস্টে হারের জ্বালা থাক, ‘সেরা’ পেসার বিশ্রাম নিক, একরাশ সমালোচনাও জুড়ুক, সব কিছুর উত্তর আসবে ফ্রন্ট ফুটে। ব্যাটের ঠিক মাঝখান দিয়ে বা বিপক্ষের মিডল স্টাম্প উড়িয়ে। ‘এজবাস্টনে ভারত কোনও টেস্ট জেতে না’, এই বাক্যটার পাশে এখন এক মস্ত কাটা চিহ্ন। বোলিং-ব্যাটিংয়ে ইংরেজদের শাসন করে দ্বিতীয় টেস্ট ৩৩৬ রানে জিতল ভারত।
ব্রাইডন কার্সের লোপ্পা ক্যাচ হাতে জমা হতেই বল আকাশে ছুড়লেন শুভমান গিল। ছয় উইকেট নেওয়া আকাশদীপ তখন পাখির ডানার মতো দু’হাত মেলে দিয়েছেন শূন্যে। চলছে অভিনন্দনের পালা। পাশেই চলছে স্মারক হিসেবে স্টাম্প কুড়নোর প্রতিযোগিতা। স্বয়ং গিলই পথ দেখাচ্ছেন। তাঁকে আলিঙ্গন করলেন সহ-অধিনায়ক ঋষভ পন্থ। ম্যাচে দশ উইকেট নেওয়ার খুশিতে আকাশদীপ (Akash Deep) ঝাঁকিয়েই চলেছেন মুষ্টিবদ্ধ হাত। আগেই চেয়ে নিয়েছেন ছয় উইকেট নেওয়ার বল। ততক্ষণে ড্রেসিং-রুম ছেড়ে প্রবল উচ্ছ্বাসে মাঠে ঢুকে পড়েছেন যশপ্রীত বুমরাহ, কুলদীপ যাদব। স্মরণীয় এই জয়ের মুহূর্তে কমেন্ট্রি বক্সে সুনীল গাভাসকর, রবি শাস্ত্রী, চেতেশ্বর পূজারাও আনন্দে আত্মহারা।
বাংলার পেসার ভেবেছিলেন, ইংল্যান্ডের মাঠে সবুজ উইকেট দেখতে পাবেন তিনি। তার বদলে তিনি পেয়েছেন পাটা, নিষ্প্রাণ উইকেট। কিন্তু সেই উইকেটেই ইংরেজ ব্যাটারদের ধোঁকা খাইয়ে দিয়েছেন বাংলার পেসার। হেডিংলেতে বসে বসে দলের হার দেখতে হয়েছিল। এজবাস্টনে সুযোগ পেয়ে দুই ইনিংসে মোট ১০ উইকেট নিয়েছেন আকাশ। তিনি নতুন বলে উইকেট নিয়েছেন। আবার পুরনো বলেও ব্যাটারদের সমস্যায় ফেলেছেন। এজবাস্টনে জয়ের কৃতিত্ব যতটা না শুভমন গিলের, ততটাই আকাশের। তিনি না থাকলে ভারত এই উইকেটে ২০ উইকেট নিতে পারত কি না সন্দেহ। আকাশ বুঝিয়ে দিয়েছেন, লাল বলের ক্রিকেটে লম্বা রেসের ঘোড়া তিনি।
ইংল্যান্ডের মাটিতে এক টেস্টের দুই ইনিংসেই ৪ বা তার বেশি উইকেট নেওয়ার নজির রয়েছে ভারতের পাঁচ বোলারের। চেতন শর্মা, জাহির খান, জসপ্রীত বুমরাহ, মহম্মদ সিরাজের ( Mohammed Siraj) দলে জায়গা করে নিয়েছেন আকাশ। এই পাঁচ জনের মধ্যে সিরাজ বাদি বাকি চার জনই এই কীর্তি করেছেন এজবাস্টনে। আকাশ বাদে বাকি চার জন তাঁদের টেস্ট কেরিয়ারে বেশ কিছু ম্যাচ খেলার পর ইংল্যান্ডে এই কীর্তি করেছিলেন। সেখানে আকাশ ইংল্যান্ডে নিজের প্রথম টেস্টেই তা করে দেখিয়েছেন। কেরিয়ারে এই প্রথম এক ইনিংসে ৫ বা তার বেশি উইকেট নিয়েছেন তিনি।
দু’বছর আগেও ভারতের ক্রিকেট মানচিত্রে আকাশদীপ ছিলেন বাংলার এক পেসার। জন্মসূত্রে বিহারের হলেও ঘরোয়া ক্রিকেট তিনি খেলেছেন পড়শি রাজ্যে। বাংলার হয়ে রঞ্জি ট্রফিতে ভাল খেলেছেন। ২০২০ ও ২০২২ মরসুমে বাংলা রঞ্জির ফাইনালে উঠেছিল। তাতে বড় ভূমিকা ছিল আকাশের। কিন্তু তার পরেও জাতীয় দলের দরজা খোলেনি। জসপ্রীত বুমরাহের চোট, ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদবেরা বয়সের ভারে পিছিয়ে পড়ায় ভারতীয় দলে সুযোগ পান আকাশ। তাঁর আগে অবশ্য বাংলার আরও এক পেসার মুকেশ কুমার ভারতের টেস্ট দলে সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু আকাশ তাঁকে টপকে গিয়েছেন। ভারতের গত চারটে টেস্ট সিরিজ়ে দলে জায়গা পেয়েছেন। এটা তাঁর পঞ্চম সিরিজ়। এ বার হয়তো ভারতের টেস্ট দলে পাকাপাকি জায়গা পাবেন তিনি। মহম্মদ শামি কবে লাল বলের ক্রিকেটে ফিরবেন জানা নেই। সে ক্ষেত্রে বুমরাহ ও সিরাজের পর তৃতীয় পেসারের দৌড়ে এগিয়ে আকাশ।