“তন্মাত্র, প্রথা, নিগূঢ়” – দুর্গোৎসবে সুশান্ত-শিবানী পালের থিম যেন আধ্যাত্মিকতার তিন রূপ
পাপিয়া ঘোষ

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৭:১৭: কলকাতার দুর্গোৎসব মানেই রঙ, আলো আর থিমের মেলবন্ধন। থিম পুজোর ভিড়ে অনেক শিল্পী যেখানে সামাজিক বার্তা দেন, সেখানে একেবারেই আলাদা পথ বেছে নিয়েছেন সুশান্ত-শিবানী পাল। তাঁর প্রতিটি শিল্পকর্মে থাকে আধ্যাত্মিকতার স্পর্শ, যা দর্শকের মনে জাগিয়ে তোলে ভক্তি আর শ্রদ্ধা। তাই কলকাতার প্রথম সারির শিল্পীদের তালিকায় তাঁর নাম নিঃসন্দেহে উজ্জ্বল।
এ বছর সুশান্ত-শিবানী পালের শিল্পসৃষ্টির নিদর্শন দেখা যাবে তিনটি বড় পুজোয়— বালিগঞ্জ কালচারাল, দমদম পার্ক ভারতচক্র ও কেন্দুয়া শান্তি সংঘে। প্রতিটি মণ্ডপে ভিন্ন আঙ্গিক-মেজাজের মোড়ক যেন এক সুতোয় বাঁধা। যেখানে থাকে আধ্যাত্মিকতার অনুভব।
দমদম পার্ক ভারতচক্র: রজত জয়ন্তীতে ‘তন্মাত্র!’
২৫ বছরে পা দিল দমদম পার্ক ভারতচক্র। রজত জয়ন্তীর এই বিশেষ বছরে তাঁদের থিম ‘তন্মাত্র!’। ভারতীয় দর্শনে ‘তন্মাত্র’ মানে মৌল উপাদান বা সূক্ষ্ম অনুভব— শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস ও গন্ধ।
শিল্পীর ভাষায়, “আমার যে দুর্গা ওখানে তৈরি করেছি তাকে বেষ্টিত করে যে এনার্জি বা অরা থাকে, যাকে খালি চোখে আমরা দেখতে পাই না, যেটা উপলব্ধি বা অনুভব করার জায়গা; সেই রকম একটা ক্ষেত্র আমরা তৈরি করেছি। যেখানে মানুষ গেলে খুব স্পিরিচুয়াল একটা অরার সম্মুখীন হবে, সেরকম একটা ভাবনা নিয়ে আমি কাজ করছি।”
মণ্ডপজুড়ে তাই তৈরি হবে এমন এক আবহ, যা শুধু দর্শন নয়, যেখানে পাঁচ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপলব্ধি করা যায়।
বালিগঞ্জ কালচারাল: ঐতিহ্যের টানে ‘প্রথা’
৭৫ বছরের ঐতিহ্য বহন করে দক্ষিণ কলকাতার জনপ্রিয় পুজো বালিগঞ্জ কালচারাল হাজির হচ্ছে ‘প্রথা’ থিম নিয়ে।
‘প্রথা’ মানে শুধু নিয়ম নয়, বরং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে চলা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক। এ বছরে শিল্পী তুলে ধরতে চাইছেন সেই শিকড়ের টান, যেখানে আছে গ্রামীণ আচার-অনুষ্ঠান, আদি বাংলার সংস্কার আর আধুনিকতার ছোঁয়া।
শিল্পীর কথায়, “প্রথা মানে পুরোনোকে আঁকড়ে ধরা নয়, বরং তাকে নতুন প্রজন্মের কাছে নতুনভাবে তুলে ধরা। এই থিমের মাধ্যমে আমরা দেখাতে চাই ঐতিহ্য আজও কীভাবে আমাদের প্রতিদিনের জীবনে বেঁচে আছে।”
কেন্দুয়া শান্তি সংঘ: রহস্যের ইঙ্গিত ‘নিগূঢ়’
এ বছরের তৃতীয় আকর্ষণ কেন্দুয়া শান্তি সংঘ। তাঁদের থিম ‘নিগূঢ়’, নামেই রয়েছে রহস্যের ইঙ্গিত। আলো-অন্ধকারের মায়াবী খেলায় তৈরি হবে এক কাব্যিক পরিবেশ, যেখানে শিল্প, বিশ্বাস ও অনুভব মিলেমিশে রচনা করবে এক অপূর্ব মেলবন্ধন।
শিল্পীর ভাষায়, “মা দুর্গা এক ঐশ্বরিক শক্তি। সেই শক্তির কাছে পৌঁছনোর রহস্যময় যাত্রাপথকে অনুভব করবেন দর্শকরা।”
সুশান্ত-শিবানী পালের শিল্পকর্ম কখনও কেবল থিমে সীমাবদ্ধ নয়। তাঁর প্রতিটি সৃষ্টিতে দর্শক খুঁজে পান ভক্তি, অনুভূতি আর আধ্যাত্মিকতার অনন্য মেলবন্ধন। এবারের ‘তন্মাত্র!’, ‘প্রথা’ এবং ‘নিগূঢ়’— এই তিনটি থিমেই ধরা দেবে সেই বিশেষ ছোঁয়া, যা কলকাতার পুজোর মানচিত্রে তাঁকে করে তুলতে পারে অনন্য।