প্রচারে গিয়েও ছাত্র পড়ালেন মেমারির তৃণমূল প্রার্থী

সকাল ৮টা নাগাদ কয়েকজন কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে সাইকেল চালিয়ে প্রচারে বেরলেন তৃণমূল প্রার্থী।

March 22, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

মাস্টারমশাই হিসেবে তাঁর সুনাম দীর্ঘদিনের। বর্তমানে শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়ে চুটিয়ে রাজনীতি করছেন। কিন্তু, ৩৭ বছর ধরে শিক্ষকতা করার পুরনো অভ্যাস এখনও ছাড়তে পারছেন না মেমারি বিধানসভার তৃণমূল প্রার্থী মধুসূদন ভট্টাচার্য। ভোটের প্রচারে বাড়িতে প্রিয় মাস্টারমশাইয়ের আগমনের সুযোগ হাতছাড়া করছে না ছাত্রছাত্রীরাও। ইংরেজি গ্রামারের পাঠ নিচ্ছে। রীতিমতো চাটাইয়ে বসে ভয়েস চেঞ্জ থেকে ন্যারেশন সবকিছু নিমেষের মধ্যে বুঝিয়ে দিচ্ছেন আমাদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ইংরেজির শিক্ষক মধুসূদনবাবু। 


সকাল ৮টা নাগাদ কয়েকজন কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে সাইকেল চালিয়ে প্রচারে বেরলেন তৃণমূল প্রার্থী। তাঁকে দেখেই পথ আটকে দাঁড়াল একাদশ শ্রেণীর দুই পড়ুয়া। বই খুলে শিক্ষকের কাছ থেকে জেনে নিলেন আটকে যাওয়া পড়া। তারপর আমাদপুরের লাইব্রেরি পাড়ায় পথচলতি মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। সকাল ৯টা নাগাদ পায়ে হেঁটে বাড়ি বাড়ি ঘোরা শুরু। সেই সময় একটি বাড়ির উঠানে বসে বই পড়ছিল শ্রীলেখা, রনিশা ও তিয়াসা। তাদের মধ্যে কেউ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী, কেউ কলেজ পড়ুয়া। তাদের সঙ্গে মাটিতে বসেই পড়াতে শুরু করে দিলেন মধুসূদনবাবু। ৭১ বছরের শিক্ষকের কোনও ক্লান্তি নেই। অনর্গল বুঝিয়ে যাচ্ছেন ইংরেজি সাহিত্য। ভোট প্রচারের ঠাসা সূচি থাকলেও পড়ানোর সুযোগ পেয়ে হারাতে চান না। মিছিলে থাকা এক কর্মী হেসে বলেন, স্যার এরকমই। আমাদের পড়ানোর সময় যেমন একাগ্রতা, আমাদের ছেলে মেয়েদের পড়ানোর সময়ও একই। 


প্রথমবার প্রার্থী হয়ে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী মেমারির মাস্টারমশাই। বাড়িতে গিয়ে করজোড়ে ভোট প্রার্থনা করার আগেই প্রার্থীর পায়ে ঝুঁকে প্রণাম সারছেন এলাকাবাসী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একাধিক প্রকল্প নিয়ে মানুষের সামনে খতিয়ান দিয়ে প্রার্থী বলেন, ১০বছরে এত উন্নয়ন হয়েছে। আগামীতে আরও হবে। তাই কাকে ভোট দেবেন একটু ভাববেন। এলাকায় কোনও মাটির বাড়ি থাকবে না। বিজেপি অনেক কথা বলছে, সাবধান। ওদের ভাঁওতাবাজির কথায় বিশ্বাস করবেন না। গ্যাস, পেট্রল, ডিজেলের দামে আগুন লেগেছে। এরপরও আপনারা বিজেপিকে আনবেন?


কথা শেষ করে গলি ছাড়ার আগেই রান্না ঘরের জানালা থেকে উঁকি দিয়ে এক মহিলা প্রার্থীর সুরে সুর মিলিয়ে বললেন, মোদিকে এনে রান্নাঘরে আটকে রাখা উচিত। আমাদের এখন কাঠের উনুনে রান্না করতে হয়। মোদিকে এনে দেখানো উচিত। দিনের পর দিন দাম বাড়ছে। একথা কানে আসতেই থমকে দাঁড়ালেন মাস্টারমশাই। তিনি বলেন, মানুষের কথা ভাবে না কেন্দ্রের সরকার। এরপর ওরা আবার এখানে সরকার গড়তে চাইছে। খুব সাবধানে আপনারা রায় দেবেন।
প্রশান্ত দাস, শোভা দাস স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পেয়েছি বলে এগিয়ে এলেন। প্রার্থীকে বললেন, আগের থেকে এলাকার অনেক উন্নতি হয়েছে। অনেক প্রকল্প এনেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনেক সুবিধা হচ্ছে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে। এই প্রথম পরিবারের কর্ত্রী হিসেবে নিজের নামে কার্ড বেরিয়েছে। মহিলা মুখ্যমন্ত্রী আমাদের সম্মানের কথা ভেবেছেন। ফের ওঁকেই চাই। বেকার যুবক শুভাশিস সাধুখাঁ প্রার্থীকে অনুরোধ করে বলেন, বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। একটু দেখবেন এসএসসিটা যাতে নিয়মিত হয়। অনেক আশা করে আছি। মমতার সরকার সব করেছে। আমাদের বিকল্প অর্থনীতির কথা ভেবেছে। কিন্তু চাকরির দরকার। তাঁকে আশ্বস্ত করে মধুসূদনবাবু বলেন, এবার সরকারে এলে চাকরি হবে। কর্মসংস্থান বাড়বে সকলের। এলাকায় কিছু সমস্যা আছে। সেগুলির দিকে নজর দেওয়া হবে। মেমারি রেল গেটের উপর ফ্লাইওভার তৈরির ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কিছু জায়গায় পানীয় জলের সমস্যা আছে। সেটাও এবার মিটে যাবে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen