ভোটাধিকার রক্ষার লড়াইয়ের ডাক, কমিশনকে নিশানা করে আঠাশের মঞ্চে বাঙালি অস্মিতার অস্ত্রে শান মমতার
mamata banerjee, tmcp foundation day, TMCP,

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৪:৩৪: আজ, বৃহস্পতিবার মেয়ো রোডে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে সমাবেশ থেকে ভোটাধিকার রক্ষার লড়াইয়ের ডাক দেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ জানান, বহু অত্যাচারের পরও তিনি লড়েছেন, মানুষের পাশে থেকেছেন। আগামীতেও এভাবেই লড়াই চালিয়ে যাবেন তিনি। বাংলা ও বাঙালির হেনস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বাংলার মনীষিরা যারা বাংলার স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন তাদের অবদান কখনও ভুলবেন না। সংস্কৃতিতে সেরা বাংলা।”
তিনি জানান, ছাত্র পরিষদ থেকেই তাঁর রাজনীতিতে হাতেখড়ি। যোগমায়া দেবী কলেজে তিনি ছাত্র পরিষদ তৈরি করেছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে কেউ প্রার্থী দিতে পারত না, লড়াই করে তিনি ডিএসও-কে ভেঙে দিয়েছিলেন। তুলে ধরেন বাংলার সাফল্যের খতিয়ান। বলেন, “২০১১ সালের পর থেকে রাজ্যের আয় বেড়েছে ৫ গুণ। ২০১৩-২৩ এর মধ্যে আমরা ১.৭২ কোটি মানুষকে দারিদ্রসীমার উপরে নিয়ে এসেছি, এখন সংখ্যাটা প্রায় ২ কোটি। ১ কোটি ৩৮ লক্ষ ছাত্রছাত্রীকে সবুজসাথী প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। মেধায় এগিয়ে বাংলা, সকল রাজ্যের সেরা আমার বাংলাভূমি। শিক্ষার পরিকাঠামো তৈরিতে ৬৯ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। বাংলার কন্যাশ্রী সারা পৃথিবীর মডেল। ৫৩ লক্ষ ছাত্রকে তরুণের স্বপ্ন দিয়েছি। ১০ লক্ষ টাকার স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড পেয়েছে ৯২ হাজার পড়ুয়া। ১.২৫ কোটি শিক্ষাশ্রী পেয়েছে, ৬.৬৫ লক্ষ মেধাশ্রী পেয়েছে। ঐক্যশ্রী প্রকল্পে ৪.৫৬ কোটি স্কলারশিপ দিয়েছি। বিবেকানন্দ মেরিট স্কলারশিপ পেয়েছেন ৩৬.৫৫ লক্ষ ছাত্রছাত্রী পেয়েছে। আমরা বেকারত্বের হার কমিয়েছি বাংলায়।”
UGC অনুদান বন্ধ নিয়ে ক্ষুব্ধ মমতা বলেন, “ইউজিসি গবেষকদের গ্র্যান্ট বন্ধ করে দিয়েছে। সেই টাকা আমরা দিই। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে হঠাৎ করে গবেষকদের টাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সবটা তো আমাদের লোক থাকেন না। বিভিন্ন জায়গার লোক থাকেন। কেউ কেউ দুষ্টুমি করে, কেউ কেউ মিষ্টিমি করে। আমরা মিষ্টিমি করি, দুষ্টুমি করি না।”
বিরোধীদের নিশানা করে তিনি বলেন, “যাঁরা ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বড় বড় কথা বলে। নিয়োগে বাধা দেয়। ভর্তিতে বাধা দেয়। আমি দুঃখিত, জয়েন্টের ফল প্রকাশে একটু দেরি হয়েছে। জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ফল বেরোতে দেরি হয়েছে, কেস করেছে বলে। এরা সব দু’নম্বরি, একদিকে কেস করে, অন্যদিকে আমাদের নামে কুৎসা করে, লড়াই করো রাজনৈতিকভাবে, পিছনের দরজা দিয়ে লড়াই করে তোমরা সব কিছু আটকে রাখো আর বড় বড় কথা বলো।”
বিজেপি শাসিত রাজ্য পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থা নিয়ে মমতা বলেন, “বাংলার ২২ লক্ষ শ্রমিককে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁরা দক্ষ বলে, আর নিয়ে গিয়ে ওদের উপর অত্যাচার হচ্ছে। আমাদের পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অত্যাচার হলে, তখন মুখে বোল ফোটে না। পরশুদিনও হাবড়ায় একজন মারা গিয়েছেন। তাঁকে মহারাষ্ট্রে মারা হয়েছিল।” কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সম্পর্কে তৃণমূল নেত্রী বলেন, “নির্বাচন আসলেই দেখবেন এজেন্সির দাপাদাপি বাড়ে। একটা এজেন্সি নয়। আগে কখনও কেন্দ্রীয় এজেন্সি বিজেপি করত না। কোনও রাজনৈতিক দল করত না।”
বিজেপির সরকারকে নিশানা করে তিনি বলেন, “১০০ দিনের কাজে পরপর চার-পাঁচ বছর আমরা এক নম্বরে ছিলাম। গ্রামীণ আবাস যোজনা, রাস্তা তৈরিতে এক নম্বরে ছিলাম। তাই সেলফিশ জায়েন্টেরা, যাঁরা হাই লোডেড ভাইরাস, তাঁরা হিংসা করে আমাদের টাকা বন্ধ করে দিয়ে ভাবছে এনআরসি চালু করবে এবং সকলের ভোটাঅধিকার কেড়ে নেবে। জীবন থাকতে কারও ভোটাধিকার কাড়তে দেব না।”
দেশের নির্বাচন কমিশনকে এদিনও নিশানা করেন মমতা। বলেন, “নির্বাচন কমিশনের চেয়ারকে আমি সম্মান করি। কিন্তু জানেন তো, বাচ্চারা ললিপপ খেলে মানায়। কিন্তু বড়রা যদি কোনও পার্টির হয়ে ললিপপ খায়, সেটা মানায় না।” সদ্য ট্রেলার মুক্তি পাওয়া এক বিতর্কিত ছবিকে নিশানা করে মমতা বলেন, “রিসেন্ট কথা বলুন। ১৯৪৬ সালের কথা বলছেন কেন? তখন আপনারা কোথায় ছিলেন? তখন তো মায়ের পেটেও ছিলেন না। আমিও ছিলাম না। এত জ্ঞান কোথা থেকে এল? জ্ঞানভান্ডারী, জ্ঞানবৃক্ষ সব জ্ঞানবৃক্ষ নয়, এরা হচ্ছে মগজে মরুভূমি। এরা কোনও দিনও বৃক্ষ হতে পারে না। বাংলার ইতিহাস ভুলে গেছেন? এখন আবার সিনেমা বানাচ্ছে টাকা দিয়ে দিয়ে। বাংলার বদনাম করার জন্য, বাংলাকে অপমান করার জন্য।” সম্প্রতি একটি হিন্দি ছবিতে ক্ষুদিরাম বসুকে ক্ষুদিরাম সিং নামে দেখানো হয়, এ নিয়েও ক্ষোভ উগরে দেন মমতা।