সর্ষের তেলের দাম কমাতে ‘ভেজাল’ মেশানোর টোটকা কেন্দ্রের

ঝাঁঝালো গন্ধ আর গাঢ়ত্বের জন্যই যে তেলের এত গুমোর, তাতে অন্য তেল মেশালে আর কৌলীন্য কী রইল? খাদ্যরসিকরা তাই এই ‘ভেজাল’-এ অনেকটাই মর্মাহত।

December 10, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

শীতকালে গোল চাক চাক বেগুন সর্ষের তেলে চুবিয়ে একটু ভেজে খাবেন তার জো নেই। তেলের দামের ঝাঁঝে ‘রোদন ভরা’ এই শীতকাল দেশবাসীর। ইতিমধ্যেই দেড়শো থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে সর্ষের তেল। মাত্র কয়েক মাসের তফাতে এই লাফ সইতে পারছেন না ক্রেতারা। শুধু কলকাতা বা রাজ্য নয়, তেলের দামে নাভিশ্বাস উঠছে গোটা দেশেই। সোজা পথে দাম কমানোর মুরোদ নেই কেন্দ্রীয় সরকারেরও। তাই অন্য পথ ধরেছে তারা। সর্ষের তেলে যাতে অন্য ভোজ্য তেল মেশানো যায়, তার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। ঝাঁঝালো গন্ধ আর গাঢ়ত্বের জন্যই যে তেলের এত গুমোর, তাতে অন্য তেল মেশালে আর কৌলীন্য কী রইল? খাদ্যরসিকরা তাই এই ‘ভেজাল’-এ অনেকটাই মর্মাহত।

মাছ-মাংসের কথা না হয় বাদই রইল। আলু বা পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে রীতিমতো বেকায়দায় পড়ছিলেন সাধারণ মানুষ। যতটা না কিনলেই নয়, ততটুকুই বেশ কষ্ট করেই কিনতে হচ্ছিল তাঁদের। এখন সামান্য দাম কমেছে ঠিকই। কিন্তু তা মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে আছে, এমনটা একেবারেই বলা যায় না। কিন্তু বাজারে তুলনামূলক সস্তা হয়েছে মরশুমের ফুলকপি, বেগুন, সিম বা পেঁয়াজকলি। কিন্তু দাম কম থাকলেই হল না। তাকে রাঁধতে হবে তরিজুত করে। কিন্তু সর্ষের তেলের আগুনে দরে সেই মনোবাঞ্ছা পূরণ করাও বড় দায়।

সর্ষের তেলের (Mustard Oil) দর এতটা চড়া ছিল না। গত বছরের শেষের দিকেও তা বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে। কিন্তু লকডাউনের পর থেকেই তা চড়তে শুরু করে একটু একটু করে। বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ দেশে সর্ষের তেলের দর নির্ভর করে অন্যান্য ভোজ্য তেলের জোগানের উপর। পাম তেল বা সয়াবিন তেলের দর চড়লে তার জন্য দাম বেড়ে যায় সর্ষের তেলের। এ দেশে ওই দুই তেলের জোগান আসে মূলত ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে। এবার আমদানি অনেকটাই মার খেয়েছে। তাই দেশীয় বাজারে তাদের দামও বেড়েছে চড়চড়িয়ে। পাশাপাশি বাদাম বা সূর্যমুখী তেলের দরও গত কয়েক মাসে গড়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে। পোস্তা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ আগরওয়ালের কথায়, এমনিতেই এবার সর্ষের ফলন কম হয়েছে। আমরা দেখেছি, গমের দাম যদি আচমকা বেড়ে যায়, তা হলে চালের দামও বাড়তে শুরু করে। কারণ একটি অপরের পরিপূরক। সর্ষের তেলের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি তেমনই হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে কলকাতার পাইকারি বাজারে তেলের দর নামা শুরু হয়েছে বলেই দাবি বিশ্বনাথবাবুর।

সর্ষের তেলের দরে নাস্তানাবুদ হওয়া এতদিন কিছুতেই ঠেকাতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকার (Central Government)। তাই তারা অন্য পথ ধরেছে। খাদ্য নিয়ামক সংস্থা ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, এখন থেকে সর্ষের তেলে যে কোনও দু’টি ভোজ্য তেল মেশাতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের যুক্তি, যেহেতু এখনও ভেজিটেবল অয়েল বা অন্যান্য ভোজ্য তেলের দর সর্ষের তেলের চেয়ে কম, তাই ওই তেল মেশালে দাম কমবে। যেহেতু তেলের সঙ্গে তেলই মিশছে, অন্য কিছু নয়, তাই শারীরিক ক্ষতির কোনও সম্ভাবনা নেই। যদিও খাদ্যরসিকরা একে ‘ভেজাল’ হিসেবেই দেখছেন। তাঁদের বক্তব্য, সবসময় খাবারে অখাদ্য-কুখাদ্য মেশালেই কি তা ভেজাল হল? যে ভোজ্য তেল সর্ষের তেলের সঙ্গে মিশে তার নিজস্বতার সর্বনাশ করে ছাড়ে, তাকে মেনে নেওয়া কঠিন। গরম কড়াইতে চাই খাঁটি সর্ষের তেল। না হলে মুচমুচে মাছ ভাজার সুবাস মিলবে কীসে?

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen