বেপরোয়া গিরিশচন্দ্রকে কীভাবে বদলে দিয়েছিলেন রামকৃষ্ণ পরমহংস? জেনে নিন

চার দশকের বেশি তাঁর কর্মজীবনের গিরিশ ঘোষকে বেশ কয়েকবার নাটকের দল বদলাতে হয়েছে।

February 18, 2025 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: আঠেরোর দশকে বাংলা থিয়েটারের জগতের প্রাণ পুরুষ ছিলেন নট ও নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষ। বাংলা নাট্যমঞ্চের যুগস্রষ্টা গিরিশচন্দ্রের লেখা ও পরিচালনা বাংলা থিয়েটারকে সমৃদ্ধ করেছে।  ১৮৪৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতার বাগবাজারে গিরিশচন্দ্র ঘোষের জন্ম।  ১৯১২ সালের  আজকের দিনে (৮ ফেব্রুয়ারি) ৬৭ বছর বয়সে তাঁর প্রয়াণ হয়।  তাঁর পিতা নীলকমল ও মাতা রাইমনির অষ্টম সন্তান ছিলেন তিনি। 

চার দশকের বেশি তাঁর কর্মজীবনের গিরিশ ঘোষকে বেশ কয়েকবার নাটকের দল বদলাতে হয়েছে। সেটা কখনও গ্রেট ন্যাশনাল কখনও এমারেল্ড কখনও বা কোহিনুর। আসলে তখনও বাংলা নাটকের রসিটি ছিল প্রতাপ চন্দ্র জহুরী কিংবা গুর্মুখ রায়দের মত ব্যবসায়ীদের হাতে। আবেগে চলা শিল্পীমানুষ বাংলার নাট্য জগতের কিংবদন্তি পুরুষ গিরিশচন্দ্র ঘোষ এদের মৌরসিপাট্টা মেনে নিতে পারতেন না।

এই বিশিষ্ট বঙ্গ সন্তান সংগীতস্রষ্টা, কবি, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যপরিচালক ও নট। বাংলা থিয়েটারের স্বর্ণযুগ মূলত তাঁরই অবদান। ১৮৪৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি,কলকাতার বাগবাজারে গিরিশচন্দ্রের জন্ম। তিনি ছিলেন তাঁর পিতামাতার অষ্টম সন্তান। প্রথমে হেয়ার স্কুল ও পরে ওরিয়েন্টাল সেমিনারি বিদ্যালয়ে তিনি পড়াশোনা করেন।পরবর্তীকালে ইংরেজী ও হিন্দু পুরাণে জ্ঞান অর্জন করেন। কর্মজীবনে প্রথমে তিনি ‘অ্যাটকিন্সন টিলকন’ কোম্পানির হিসাবরক্ষণ বিভাগে শিক্ষানবিস হিসেবে যোগ দেন।

কথিত আছে গিরিশ ঘোষের মন প্রচণ্ড দ্রুতগতিতে এবং অদ্ভুত ভাবে চিন্তা করতে পারতো। তার চিন্তা কিংবা শব্দাবলী তাৎক্ষনিক লিখে রাখার জন্য তিনি দেবেন্দ্রনাথ মজুমদারকে সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন। দেবেন্দ্র সারাক্ষণ তার কাছে তিনটি পেন্সিল প্রস্তুত রাখতেন, দোয়াত কলম রাখতেন না। কারণ কলমে কালি ভরার মত সময়টুকুও নাকি তিনি পেতেন না। কোনও কথা বুঝতে না পারলে ফের জিজ্ঞেস করলে গিরীশবাবু রেগে যেতেন, কারণ তাতে তার চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটতো। তাই কোন শব্দ বুঝতে না পারলে তার নির্দেশ অনুযায়ী দেবেন্দ্র সেখানে ডট বসিয়ে যেতেন, যাতে পরে তা জেনে নিতে পারেন।

১৮৭২ সালে তিনিই প্রথম বাংলা পেশাদার নাট্য কোম্পানি ন্যাশানাল থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করেন। গিরিশচন্দ্র প্রায় চল্লিশটি নাটক রচনা করেছেন এবং ততোধিক সংখ্যক নাটক পরিচালনা করেছেন। জীবনের পরবর্তী সময়ে তিনি রামকৃষ্ণ পরমহংসের অন্যতম শিষ্য হয়ে ওঠেন।

গিরিশচন্দ্র সম্পর্কে অভিযোগ ছিল মদ্যপ ও স্বেচ্ছাচারী। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি শ্রীরামকৃষ্ণের অন্যতম অন্তরঙ্গ শিষ্যে পরিণত হন। “শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত” গ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছে, কিভাবে শ্রীরামকৃষ্ণের সংস্পর্শে আসার পর গিরিশচন্দ্রের নৈতিক পরিবর্তন ঘটে এবং তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠতম শিষ্যদের একজন হয়ে ওঠেন৷

সেরকমই একটি গল্প রয়েছে।

গিরিশ ঘোষ তখন বেহেড মাতাল! শহরের বারাঙ্গনারাও তাঁকে দরজা খুলে দিতে নারাজ! এমন একদিন মাঝরাতে এক সাগরেতকে বললেন, “ওই দক্ষিণেশ্বরের কথা মনে পড়ল বুঝি। সে জানে সেখানে একজন আছেন, তিনি কখনও দরজা বন্ধ করেন না।”

যেমন ভাবা, অমনি জুড়ি গাড়িতে লাফিয়ে উঠলেন। নিজের লেখা পাহাড়ি পিলুতে খেমটা গাইতে গাইতে চললেন। গঙ্গাপারের ভিজে হাওয়ায় ওই শোনা যাচ্ছে, ‘ছি ছি ছি ভালবেসে,/ আপন বশে কি রয়েছো।’

অনেক রাত। মন্দিরের চারপাশে নিকষ অন্ধকার। গাড়ি থামতেই, খোঁয়ারি জড়ানো গলায় গিরিশ্চন্দ্র চিৎকার করলেন, ‘‘ঠাকুর, ঠাকুর!’’

বেরিয়ে এলেন শ্রীরামকৃষ্ণদেব! তিনি বুঝি অপেক্ষা করছিলেন। বললেন, ‘‘কাতর প্রাণে, এমন করে কে ডাকে? গিরিশ না!’’

ঠাকুরের ছোঁয়ায় যেন বিদ্যুৎস্পর্শ। সম্বিৎ ফিরে লজ্জায় নুয়ে পড়ল গিরিশ।

পরমহংস বললেন, ‘‘মদ খেয়েছিস তো কি, আমিও মদ খেয়েছি। ‘সুরাপান করি না আমি, সুধা খাই জয়কালী বলে, মন-মাতালে মাতাল করে, মদ-মাতালে মাতাল বলে।’’ গান গাইতে গাইতে লোকটার হাত ধরে নাচতে লাগলেন ঠাকুর।

মোদো-মাতাল সেই লোকটাই বাংলার রঙ্গমঞ্চ ও নাট্য ইতিহাসে তাঁর কালের শ্রেষ্ঠ নট!  

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen