ষাটোর্ধ্ব ও অসুস্থ সব নাগরিকের বাড়িতেই হোক শুনানি, কমিশনে জোরালো সওয়াল তৃণমূলের
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ২১:৪০: ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়ায় সাধারণ মানুষের হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের। ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা বজায় রাখার দাবিতে মঙ্গলবার ফের রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (CEO) সঙ্গে সাক্ষাৎ করল তৃণমূল কংগ্রেসের এক প্রতিনিধি দল। এদিন রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধি দল সিইও মনোজ কুমার আগরওয়ালের সঙ্গে দেখা করে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দাবি পেশ করেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক (Partha Bhowmick), শশী পাঁজা (Shashi Panja), বাপি হালদার (Bapi Haldar), পুলক রায় (Pulak Roy) এবং বীরবাহা হাঁসদা (Birbaha Hansda)। এদিন সিইও অফিসের বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পার্থ ভৌমিক জানান, কমিশনের কাছে তাঁদের দাবিগুলির কিছু ক্ষেত্রে সদর্থক উত্তর মিলেছে, তবে বেশ কিছু বিষয়ে এখনো সুরাহা হয়নি। তৃণমূলের (TMC) পক্ষ থেকে মূলত তিনটি প্রধান বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
অসুস্থ ও প্রবীণদের জন্য বাড়িতে শুনানির ব্যবস্থা
কমিশনের তরফে গতকালই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল যে ৮৫ বছরের ঊর্ধ্বে এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের শুনানি বাড়িতে গিয়ে করা হবে। তবে এদিন তৃণমূলের তরফে দাবি করা হয়, শুধুমাত্র ৮৫ বছর নয়, যেকোনো বয়সের মানুষ যদি গুরুতর অসুস্থ হন বা অস্ত্রোপচার হয়ে থাকে, তবে তাঁদেরও যেন হিয়ারিং সেন্টারে না ডাকা হয়। মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বলেন, “একজন ৩০ বছরের যুবকও যদি অসুস্থ হন, তাঁকে কেন সেন্টারে আসতে হবে? আমরা কমিশনকে বলেছি এবং সাধারণ মানুষকেও অনুরোধ করছি, আপনারা অসুস্থ থাকলে বিএলও-কে খবর দিন যাতে বাড়িতে এসে শুনানি নেওয়া হয়।”
‘লজিক্যাল ডিসক্রিপেন্সি’র তালিকা প্রকাশ
ভোটার তালিকায় ‘লজিক্যাল ডিসক্রিপেন্সি’ বা তথ্যের অসঙ্গতির কারণে ১ কোটি ৩৬ লক্ষ মানুষকে নোটিশ পাঠানো নিয়ে এদিন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তৃণমূল। দলের দাবি ছিল, কাদের নাম এই তালিকায় আছে তা স্পষ্ট করতে হবে। পার্থ ভৌমিক জানান, কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে যে ইতিমধ্যেই এই তালিকা বিএলও এবং ইআরও স্তরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পরিযায়ী ও প্রবাসীদের ভার্চুয়াল শুনানি
কর্মসূত্রে বা পড়াশোনার জন্য যারা রাজ্যের বা দেশের বাইরে আছেন, তাঁদের জন্য ভার্চুয়াল শুনানির জোরালো দাবি জানিয়েছে তৃণমূল। পার্থ ভৌমিকের যুক্তি, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড নিয়ে যারা বিদেশে পড়তে গেছেন বা পেটের তাগিদে ভিন রাজ্যে কাজ করছেন, ভোটার তালিকায় নাম যাচাইয়ের জন্য তাঁদের পক্ষে সশরীরে উপস্থিত হওয়া অসম্ভব। এতে তাঁদের মৌলিক অধিকার খর্ব হচ্ছে। তাঁদের ছবি যেহেতু ফর্মেই আছে, তাই ভিডিও কলের মাধ্যমে বা ভার্চুয়ালি তাঁদের শুনানি করা হোক।”
দিল্লিতে দরবার করবে তৃণমূল
এদিন পার্থ ভৌমিক জানান, ভার্চুয়াল শুনানির বিষয়টি নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামিকাল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ১০ জনের একটি প্রতিনিধি দল দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে যাবে এবং সেখানেও এই দাবিগুলি পেশ করা হবে।
২০০২ সালের নথিপত্র ও দীর্ঘস্থায়ী বাসিন্দাদের সমস্যা
তৃণমূলের অভিযোগ, বহু মানুষ ৫০ বছর ধরে এলাকায় বসবাস করলেও তাঁদের কাছে ২০০২ সালের নির্দিষ্ট নথি বা বাবার নামের কাগজ নেই বলে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। দলের প্রস্তাব, এই ধরনের ক্ষেত্রে স্থানীয় তদন্ত (Local Inquiry) বা পরিবারের অন্য সদস্যদের (যেমন দাদা বা কাকা) নথির ভিত্তিতে নাম তোলার সুযোগ দেওয়া হোক। কোনোভাবেই যেন প্রকৃত ভোটার বাদ না পড়েন।
কমিশনকে দেওয়া চিঠির মূল বিষয়
এদিন কমিশনের কাছে একটি লিখিত চিঠিও জমা দেয় তৃণমূল। চিঠিতে দাবি করা হয়েছে:
১. ‘লজিক্যাল ডিসক্রিপেন্সি’র সম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
২. ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে এবং অসুস্থ নাগরিকদের বাড়িতে গিয়ে ভেরিফিকেশন করতে হবে।
৩. শুনানির সময় বুথ লেভেল এজেন্টদের (BLA-2) উপস্থিত থাকার অনুমতি দিতে হবে।
তৃণমূলের স্পষ্ট বার্তা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) নির্দেশে তাঁরা নিশ্চিত করতে চান যে, বাংলায় একজনও বৈধ ভোটারের নাম যেন তালিকা থেকে বাদ না যায়। যদি দাবি মানা না হয়, তবে দল মানুষের স্বার্থে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে।