জামিন মিললেও কাটেনি অনিশ্চয়তা, সোনালির প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় বাবা-মা

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৩:৩০: বীরভূমের পাইকর গ্রামে এখনও দুশ্চিন্তার কালো মেঘ। বাংলাদেশের আদালতে জামিন মিললেও কবে দেশে ফিরবেন সোনালি খাতুন (Sonali Khatun), সুইটি বিবি এবং তাঁদের তিন শিশু, তা এখনো কেউ বলতে পারছে না। কয়েক মাস ধরে নিখোঁজ মেয়ের অপেক্ষায় দিন কাটছে ভুদু শেখের পরিবারের। প্রতিদিন ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকেন সোনালির বাবা। সোমবার জামিনের খবর শুনে চোখ ভিজে গেলেও মনে শান্তি আসেনি। তাঁর কথায়, মেয়ের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থার কথা ভেবে বুক কেঁপে ওঠে। “জামিন তো হল, কিন্তু দেশে ফিরবে কবে? না দেখা পর্যন্ত স্বস্তি নেই।” একই উদ্বেগ সোনালির মা-সহ পরিবারের অন্যদের মধ্যেও।
বাংলা ভাষায় কথা বলার ‘অপরাধেই’ তাঁদের বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়, এই অভিযোগ থেকেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে পাইকর, দর্জিপাড়া ও ফকিরপাড়ায়। দিল্লিতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতে গিয়ে বাংলা বলায় তাঁদের বাংলাদেশি (Bangladeshi) বলে চিহ্নিত করে দিল্লি পুলিশ (Delhi Police)। এরপর গত জুনে বিএসএফ (BSF) তাঁদের অসম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাঠায়। ২০ আগস্ট বাংলাদেশ পুলিশ তাঁদের আটক করে অনুপ্রবেশের মামলায় জেল পাঠায়। ওই সময় থেকেই তাঁরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংশোধনাগারে বন্দি।
সোমবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সোনালি-সহ ছ’জনকে জামিন দেন। স্থানীয় সমাজসেবী ফারুক আলির জিম্মায় কুড়ি হাজার টাকার বন্ডে মুক্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলামের প্রতিনিধি মফিজুল শেখ জানিয়েছেন, জামিনের পর তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সোনালিকে মঙ্গলবারই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে।
সুইটির মা লজিনা বিবি এবং দাদা আমির শেখও একই উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন। মেয়েরা এবং নাতিরা কবে দেশে ফিরবে, কেউ স্পষ্ট করে বলতে পারছে না। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, আগামী ৩ ডিসেম্বর তাঁদের আবার হাজিরা দিতে হবে। তার পরই দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। তবে পরিবারগুলোর অভিযোগ, বাংলাদেশি আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে এখনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court) আগেই কেন্দ্রকে চার সপ্তাহের মধ্যে ছয়জনকে দেশে ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টও (Supreme Court) জানতে চেয়েছিল, কোনও যাচাই ছাড়া কীভাবে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে (Bangladesh) পাঠানো হল। এসব প্রশ্নের মাঝেই সোমবারের জামিন পরিবারের মনে একটু আলো জ্বালালেও অনিশ্চয়তার ঘোর কাটেনি। সবার একটাই প্রত্যাশা, অন্তঃসত্ত্বা সোনালি এবং তাঁর শিশুসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা যেন দ্রুত বাড়ি ফিরতে পারে।
তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম আজ X-এ লিখেছেন, “আমি সবাইকে অনুরোধ করছি বাংলাদেশ আদালতের নির্দেশটি পড়তে, যেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে সোনালি খাতুন এবং আরও পাঁচজনকে জোরপূর্বক ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলা হয়েছে। গর্ভবতী সোনালি খাতুনসহ সকলকে ইতিমধ্যেই গতকাল জামিন দেওয়া হয়েছে। তারা এখন বাংলাদেশে নিরাপদ হেফাজতে রয়েছেন এবং দেশে ফেরার জন্য অপেক্ষা করছেন।”
তিনি আরও লিখেছেন, “আগামীকাল ভারতের সুপ্রিম কোর্টে এই বিষয়ে শুনানি রয়েছে, যা ইতিমধ্যেই সোনালি খাতুন এবং তাঁর ছেলেকে দেশে ফেরানোর নির্দেশ দিয়েছে। যারা অবৈধভাবে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে, তাঁদের ফিরিয়ে আনার লড়াই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে চলবে, যতক্ষণ না তাঁরা তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন।”
I request everyone to read the order issued by the Bangladesh court, which clearly states that Sunali Khatun and five others were forcefully pushed into Bangladesh through the Indian border. The court has already granted bail to all of them, including the pregnant woman Sunali… pic.twitter.com/KMEPqJEaLS
— Samirul Islam (@SamirulAITC) December 2, 2025