বিচার চাই, কুলদীপের জামিন বাতিলের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টের পথে উন্নাও নির্যাতিতা

December 24, 2025 | 2 min read

Authored By:

Ritam Ritam

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি, ১৯:৪৭: দিল্লির ইন্ডিয়া গেটে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে পুলিশি বাধার মুখে পড়লেন উন্নাওয়ের নির্যাতিতা। কুলদীপ সিং সেঙ্গারের (Kuldeep Singh Sengar) জামিনের পর থেকেই প্রাণভয়ে দিন কাটাচ্ছে তাঁর পরিবার। এরই বিহিত চেয়ে বুধবার মা এবং সমাজকর্মী যোগিতা ভায়ানাকে নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন তিনি। কিন্তু অভিযোগ, বিক্ষোভ চলাকালীনই পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে জোর করে তাঁদের সেখান থেকে হটিয়ে দেয়।

মঙ্গলবার দিল্লি হাই কোর্ট (Delhi High Court) উন্নাও কাণ্ডের (Unnao Case) মূল অভিযুক্ত কুলদীপ সিং সেঙ্গারের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা স্থগিত করে। আদালত জানায়, নির্যাতিতার বাবার হত্যা সংক্রান্ত মামলার চূড়ান্ত ফয়সলা না হওয়া পর্যন্ত জামিনে থাকবেন সেঙ্গার। যদিও জামিনের ক্ষেত্রে একাধিক শর্ত আরোপ করেছে আদালত, তবুও প্রভাবশালী এই নেতার জেলমুক্তি মেনে নিতে পারছেন না নির্যাতিতা। তাঁর কথায়, ‘‘কুলদীপ মুক্তি পাওয়ায় আমরা ভীত।’’

বুধবারের বিক্ষোভে পুলিশি হস্তক্ষেপের পর ক্ষোভ উগরে দেন সমাজকর্মী যোগিতা ভায়ানা। এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লেখেন, “গণধর্ষণের নির্যাতিতার সঙ্গে কি এমন আচরণ করা উচিত? বিচার চাওয়াটা কি তাঁর দোষ? এটা কেমন ন্যায়বিচার?” অন্যদিকে, সংবাদসংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কান্নায় ভেঙে পড়েন নির্যাতিতা। তিনি বলেন, “সামনে ভোট আসছে, তাই ওকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। যদি এই ধরনের ধর্ষণে অভিযুক্ত মুক্তি পেয়ে যায়, তাহলে আমরা কী করে নিরাপদে থাকব?” তিনি আরও বলেন, “বিচারপ্রক্রিয়ার উপর আস্থা আছে। কিন্তু আমরা শুরু থেকেই সমস্যার মুখে পড়েছি। এখন মনে হচ্ছে জেলে থাকলেই ভালো হতো। সেসময় আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পরিবারের কথা ভেবে সেটা করিনি।”

২০১৭ সালের উন্নাও ধর্ষণকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গারের ১০ বছরের কারাদণ্ডের সাজা স্থগিত করে দিল্লি হাইকোর্ট তাকে জামিন দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার বিরুদ্ধে এবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছেন নির্যাতিতা। পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নির্যাতিতা বলেন, “আমার ছোট বাচ্চা আছে। বাড়িতে একজন বয়স্ক, প্রতিবন্ধী শাশুড়ি এবং আমার স্বামী আছেন। আমার বাচ্চাদের নিরাপত্তাই সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয়।” তিনি অভিযোগ করেন যে বিচারের সময় ত্রুটি দেখা দিয়েছে এবং নিরাপত্তা বলয় প্রত্যাহার করা হয়েছে। “সাধারণত, যুক্তি উপস্থাপন শেষ হওয়ার দুই বা তিন দিনের মধ্যে রায় ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এই মামলায়, সিদ্ধান্তটি তিন মাস পরে এসেছে। রায় ঘোষণার আগেই, পরিবার এবং সাক্ষীদের নিরাপত্তা প্রত্যাহার করা হয়েছিল,” তিনি অভিযোগ করেন। তিনি আরও বলেন, “যে গুরুতর অপরাধে আমার বাবাকে খুন করা হয়েছিল এবং আমাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল, সেখানে কয়েক বছর জেল খাটার পর অভিযুক্তকে জামিন দেওয়া হয়। এটি কোন ধরণের ন্যায়বিচার তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।”

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ৪ জুন উন্নাওয়ের এক কিশোরীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে তৎকালীন বিজেপি (BJP) বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, প্রথমে পুলিশ এই ঘটনাটিকে গুরুত্ব দিতে চায়নি। বিচার চেয়ে ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বাসভবনের সামনে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেন নির্যাতিতা। এরপর উলটে নির্যাতিতার বাবাকেই গ্রেপ্তার করে পুলিশ এবং পুলিশি হেফাজতে তাঁর মৃত্যু হয়। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ এবং পকসো আইনে দোষী সাব্যস্ত হন কুলদীপ এবং তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। কিন্তু দিল্লি হাই কোর্টের সাম্প্রতিক নির্দেশে আপাতত জেলের বাইরে তিনি।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen