কোভিড টেস্টের বিভিন্ন দিক

চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা রোজ আরও কম সময়ে ব্যাপক সংখ্যক রোগীর রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি আবিষ্কারে চেষ্টা চালাচ্ছেন।

August 15, 2020 | 3 min read
Published by: Drishti Bhongi

দেশে কোভিড–১৯ সংক্রামিত রোগীর সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। সময়ে সঙ্গে সঙ্গে টেস্টের হার বাড়লেও, পর্যাপ্ত টেস্টের সুবিধা এখনও নেই। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা রোজ আরও কম সময়ে ব্যাপক সংখ্যক রোগীর রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি আবিষ্কারে চেষ্টা চালাচ্ছেন। 

কোভিড–১৯ সাধারণ উপসর্গের বাইরেও অনেক ব্যতিক্রমী উপসর্গ তৈরী করে। আবার অনেক ক্ষেত্রে কোনও উপসর্গই দেখা যায় না। রোগীর উপসর্গ দেখে রোগটি বোঝা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব নয়। অতএব, টেস্টই এই রোগ নির্ণয়ে প্রধান উপায়।

সময়ে সঙ্গে সঙ্গে টেস্ট-ট্রেস-ট্রিট, এই শব্দগুলোই কোভিড থেকে বাঁচার মূলমন্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই থ্রি টি-এর সঙ্গে টাইম বা সময় শব্দটিও যোগ করা যেতে পারে। কারণ, প্রচণ্ড সংক্রামক কোভিড-১৯কে আটকানোর জন্য সময় খুব মূল্যবান।

আরটি-পিসিআর টেস্ট: 

এর মাধ্যমে ভাইরাসের জেনেটিক মেটেরিয়াল বা নিউক্লিক অ্যাসিড শনাক্ত করে শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়।

নমুনা: 

সাধারণত নাক বা গলার গভীর থেকে নেওয়া লালা থেকে এই টেস্ট করা হয়। এছাড়া শ্বাসনালীর আরও গভীর থেকে নেওয়া যেমন, ব্রংকোয়াভিওলার ল্যাভেজ (বিএএল) এবং লোয়ার রেসপিরেটরি ট্র‌্যাক্ট (এলআরটি) সোয়াব থেকেও এই টেস্ট করা যেতে পারে।

পদ্ধতি: 

করোনা একটি আরএনএ ভাইরাস। কিন্তু পিসিআর একটি ডিএনএ অ্যামপ্লিফিকেশন পদ্ধতি। এক্ষেত্রে ভাইরাসের আরএনএ-কে প্রথমে রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ এনজাইম-এর মাধ্যমে ডিএনএ (কমপ্লিমেন্টারি ডিএনএ)-তে পরিবর্তিত করা হয়। তারপর অ্যামপ্লিফিকেশন করে, ফ্লুরোসেন্ট সিগনালের দ্বারা ভাইরাসের জেনেটিক মেটেরিয়ালের উপস্থিতি দেখা হয়।

সুবিধা: 

১) কোভিড-১৯ নির্ণয়ে এটি এখনও পর্যন্ত গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড টেস্ট।

২) কম ভাইরাল লোডেও সঠিক রেজাল্ট দিতে সক্ষম। এর মাধ্যমে রোগটির একেবারে প্রাথমিক স্তরে নির্ণয় করা সম্ভব।

৩) অ্যাক্টিভ কোভিড রোগীকে শনাক্ত করতে সক্ষম।

৪) এর রিপোর্ট অন্য কোনও টেস্টের সাহায্যে নিশ্চিত করার প্রয়োজন হয় না।

অসুবিধা: 

১) ব্যয়বহুল টেস্ট।

২) টেস্টের রেজাল্ট বেরোতে ৪-৮ ঘণ্টা সময় লাগে এবং রিপোর্ট পেতে ১-৩ দিন সময় লাগে।

৩) এই টেস্ট গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড হলেও ১০০ শতাংশ নির্ভুল নয়। টেস্টটির রোগনির্ণয় ক্ষমতা নমুনায় উপস্থিত ভাইরাল লোডের ওপর নির্ভরশীল। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নমুনায় ভাইরাস জিনমের কমপক্ষে ১০০০টি কপি/এমএল থাকা প্রয়োজন। নমুনায় ভাইরাস কপির থেকে কম থাকলে টেস্ট রিপোর্ট ফলস নেগেটিভ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ভাইরাসের মিউটেশন, স্যাম্পলিং এরর, ট্রান্সপোর্টেশনের অসুবিধা ইত্যাদি কারণেও ফলস নেগেটিভ রিপোর্ট আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

৪) যেহেতু এটা মলিকিউলার টেস্ট, তাই এর জন্য উন্নতমানের ল্যাবরেটরি সেট আপ প্রয়োজন।

৫) এই পদ্ধতিতে অনেক ক্ষেত্রে রোগী সুস্থ হওয়ার এক-দেড় মাস পরেও রিপোর্ট পজিটিভ দেখাতে পারে। রোগীর শরীরে মৃত ভাইরাস জিনোমের দীর্ঘদিন উপস্থিতির কারণে এমনটা হয়ে থাকে।

র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট (আরএটি):

এই টেস্ট ভাইরাসের শরীরের প্রোটিন যেমন, নিউক্লিওক্যাপসিড প্রোটিন বা স্পাইক প্রোটিন, যেগুলো শরীরে অ্যান্টিজেন হিসেবে কাজ করে সেগুলো শনাক্ত করে। এটি একটি র্যাপিড ক্রোমাটোগ্রাফিক ইমিউনোআসসে। প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটের মতো এখানেও ল্যাটারাল ফ্লো ইমিউনোআসসে কিট ব্যবহৃত হয়।

নমুনা: 

একমাত্র নাকের গভীর থেকে নেওয়া হয়।

পদ্ধতি: 

নমুনাটি প্রথমে ভাইরাল লাইসিস বাফারে দিয়ে প্রসেস করা হয়। এই বাফার ভাইরাসটিকে ইনঅ্যাক্টিভেট করে দেয়। তাই এই টেস্টের জন্য বায়োসেফটি ক্যাবিনেটের প্রয়োজন হয় না। স্যাম্পল প্রসেসড হয়ে গেলে ২-৩ ড্রপস কিটে দেওয়া হয়।

ফলাফল: 

১৫-৩০ মিনিটের মধ্যে খালি চোখে দেখেই রিপোর্ট বলে দেওয়া যায়।

সুবিধা: 

১) টেস্ট পদ্ধতি খুব সহজ।

২) দ্রুত রিপোর্ট দেওয়া সম্ভব।

৩) কম খরচে করা যায়।

৪) দক্ষ প্রশিক্ষণ ছাড়া অনেকেই করতে পারেন।

অসুবিধা:

১) আরটি-পিসিআর-এর তুলনায় সেন্সিটিভিটি কম।

২) নমুনায় ভাইরাল লোড কমপক্ষে ভাইরাস জিনমের ১,০০,০০০ কপি/এমএল স্যাম্পলে   হতে হবে। নমুনায় ভাইরাস কপি কম হলে বা রোগীর শরীরে ভাইরাল লোড কম হলে এই টেস্টের রিপোর্ট ফলস নেগেটিভ আসার সম্ভাবনা রয়েছে ।

৩) মনে রাখতে হবে, আরটি-পিসিআর-এ যেমন জেনেটিক মেটেরিয়ালকে অ্যামপ্লিফাই করা হয়, এখানে ভাইরাস প্রোটিনকে অ্যামপ্লিফাই করা হয় না। তাই সোয়াব স্যাম্পলে ভাইরাল লোড পর্যাপ্ত হওয়া প্রযোজন।

এসব কারণে এই টেস্টে ফলস নেগেটিভ আসার সম্ভাবনা বেশী। এই টেস্টে একজনের নেগেটিভ এলে তাঁকে আবার আরটি-পিসিআর টেস্ট করে তিনি সত্যিই নেগেটিভ কি না তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen