বাংলায় বিজেপিকে হারাতে তৃণমূলকেই ভোট দিতে অভিমত সিপিআই (এম-এল)-এর
বিপ্লবী শক্তিকে সংহত করার জন্য ভোট দেওয়ার সাথে সাথে এই নির্বাচনকে মুখ্যত বিজেপিকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে সিপিআই(এম-এল)-এর প্রভিশনাল সেন্ট্রাল কমিটি।

সিপিআই(এম-এল)-এর প্রভিশনাল সেন্ট্রাল কমিটি মনে করছে আসন্ন নির্বাচনে (West Bengal Election 2021) বাংলায় বিজেপিকে পরাজিত করতে বিজেপি-বিরোধী বড় শক্তিকে, সে তৃণমূলই হোক বা অন্য কোন অ-বিজেপি দল, তাদের জেতানো উচিৎ। এই অর্থে একটি লেখা বেরিয়েছে সিপিআই(এম-এল)- CPI(ML) এর প্রভিশনাল সেন্ট্রাল কমিটির পোর্টাল ‘নয়া গণতন্ত্র’-তে।
বিপ্লবী শক্তিকে সংহত করার জন্য ভোট দেওয়ার সাথে সাথে এই নির্বাচনকে মুখ্যত বিজেপিকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে ভোট দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে সিপিআই(এম-এল)-এর প্রভিশনাল সেন্ট্রাল কমিটি। এই আবেদনের মূল বক্তব্য হল, সীমিত আসনে পিসিসি সিপিআই(এম-এল) ও সমমনোভাবাপন্ন বিপ্লবী দলদের ভোট দেওয়া ও সামগ্রীকভাবে বিজেপিকে পরাজিত করতে নির্বাচনকেন্দ্রভিত্তিক বিজেপি-বিরোধী বড় শক্তিকে ভোট দেওয়া, সে তৃণমূলই হোক বা অন্য কোন অ-বিজেপি দল।
এই লেখাটিতে বলা হয়েছে যে পশ্চিমবাংলায় বামফ্রন্টের পতনের মূল কারণ ছিল নব্বইয়ের দশক থেকে কেন্দ্রের নয়া-উদারবাদী নীতি অনুসরণ করা ও জনজীবনের উপর পার্টী আধিপত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গণবিতর্কের প্রাণশক্তিকে স্তব্ধ করে দেওয়া। আমেরিকান বহুজাতিক কোম্পানী ডাও কেমিক্যালের সাথে যুক্ত কম্যুনিস্টদের গণহারে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত কুখ্যাত সালেম গ্রুপকে নিয়ে এসে কেমিক্যাল হাব নির্মাণে প্রয়াস, যখন নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টের বিরুদ্ধে বিশ্বজোড়া পরিবেশ আন্দোলন চলছিল তখন বাংলায় নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট করার পরিকল্পনা ইত্যাদি ছিল নয়া-উদারবাদী নীতি অনুসরণ করার কিছু ভয়ঙ্কর উদাহরণ। পার্টী হুকুমবাদ ও শাসন যন্ত্রের ভয়ে জনমন অতীষ্ঠ হয়ে উঠছিল। এর বিরুদ্ধে প্রথম বড়সড় গণ-প্রতিবাদ হয় ‘রেশন আন্দোলনে’ এবং তারপর সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের কৃষক বিদ্রোহকে হাতিয়ার করে তৃণমূল ক্ষমতায় আসে।
লেখাটিতে বলা হয়েছে সামাজিক কল্যাণে তৃণমূল (Trinamool) সরকারের ভাল কাজগুলিকে নস্যাৎ করে দেওয়া মিথ্যাচার হবে। একটি সৎ বিপ্লবী দল যখন সংসদীয় গণতন্ত্রের সংগ্রামের রূপ নিয়ে কথা বলে, তখন সততার সাথেই বিভিন্ন শাসকশ্রেণির দলের ভূমিকার মূল্যায়ন করে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে তৃণমূল সরকার বহু ভাল কাজ করেছে, নির্বাচনের আগে আগে স্বাস্থ্যসাথী ও দুয়ারে সরকার চালু করা অত্যন্ত ভাল উদ্যোগ যার ফলে গরিব মেহনতি মানুষ উপকৃত হবে। সরকারি মাণ্ডি ও এমএসপি চালু করলেও এখন পর্যন্ত কত কৃষক উপকৃত হয়েছেন তার প্রকৃত তথ্য জানা যায়নি, বাম জমানার চেয়ে চা-শ্রমিকদের মজুরি খানিক বৃদ্ধি করেছে।
বলা হয়েছে, বাংলার এই পটভূমিকায় ততদিনে ভারতবর্ষের কেন্দ্রীয় শাসনে এক ভয়ঙ্কর সর্বগ্রাসী ফ্যাসিস্ট শাসক দলের উত্থান হয়ে গেছে। বিজেপি (BJP) দল তাই সর্বশক্তি দিয়ে নেমেছে বাংলার ক্ষমতা দখলে। মমতা ও তৃণমূলকে তাদের নিজেদের অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থেই ফেডারেল কাঠামোর উপর আঘাতে করার বিজেপির রণনীতিকে মোকাবিলা করতে হবে। ক্ষমতার বাইরে থেকেও সিপিএম তো এখনও সিঙ্গুর নন্দীগ্রামে বামফ্রন্টের পলিসি যে নয়া-উদারবাদী নীতির অনুষঙ্গ ছিল সেই ভুল স্বীকার করছে না, বরঞ্চ সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের উদাহরণ দিয়ে মমতাকে বিঁধছে, বলে লেখা হয়েছে এখানে।
বাংলার চলমান শ্রেণিসংগ্রামের রাজনৈতিক রূপ দেওয়ার জন্য ধারাবাহিক ও সামগ্রীক রণনীতি ও রণকৌশল জরুরি ছিল, বামপন্থীদের সেই ব্যার্থতার পূর্ণ সুযোগ নিচ্ছে সর্বগ্রাসী ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক শক্তি বিজেপি। বাস্তব প্রেক্ষিতে তৃণমূলই এখনও প্রধান শক্তি যে আসন্ন নির্বাচনে বিজেপির অগ্রগতিকে আঁটকে দিতে সক্ষম, বলে মতামত দেওয়া হয়েছে সিপিআই(এম-এল)-এর প্রভিশনাল সেন্ট্রাল কমিটির পক্ষ থেকে।